কপিরাইট © সংরক্ষিত.. লিখিত অনুমতি ছাড়া প্রকাশ নিষেধ
৭.
ছোটবেলায় সবচেয়ে ভয়ংকর কাজের মধ্যে একটা ছিল, প্রতিদিন বিকালে দলবেধে সিপারা নিয়ে মসজিদে মাউলানার কাছে আরবি শেখা। বিকালের নির্মল খেলাধুলা বাদ দিয়া কার শখ হয় খটমট আরবির কুল আর ক্বুল এর পার্থক্য গলায় ফুটিয়ে তুলতে! কাতারে এসে সেই আরবি ভাষার সাগরে আবার পড়লাম। ইংরেজি তো আর সবজায়গায় চলে না। কাতারের ভাষা আরবি। শুধু কাতার বলি ক্যান্, পুবে মিডিল ইস্টের কাতার, বাহরাইন, সৌদি, ওমান থেকে শুরু করে চাদ, মরক্কো, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান, ইরাথ্রিয়া হয়ে আফ্রিকার পশ্চিম তীরের মারাথানিয়া পর্যন্ত সব আরব জাতি আরবি ভাষায় কথা বলে।
ওদিকে মিশর, জর্ডান , সিরিয়া তো আছেই। এইদিকে ইরাক, প্যালেস্টাইন। বিভিন্ন দেশের মানুষ দোহায় বাস করে তা তো আগেই বলেছি। অফিস-আদালতে ভুড়ি ভুড়ি মিশর, ওমান, সিরিয়ার লোকজন। এত দেশের লোক, অথচ ইংরেজির চল ততটা নেই ।
এর কারণ কমন ভাষা- আরবি। একটা ভাষার মাধ্যমে গড়ে উঠা সর্বত্র এক নিদারুণ আত্মিয়তার বাধন দেখে আমি মোহিত। নানান আরব দেশ,পোষাকে অল্পবিস্তর যা পার্থক্য কিন্তু ভাষা, সবার এক। সুতরাং আরবিটা জানা এখানে জীবনধারণের জন্য প্রায় বাধ্যতামূলক।
চাইনিজদের সাথে থেকে যেমন 'নি হাউ মা' কিংবা 'শিশিয়ে' না জানলে ক্যামন দেখায়, তেমনি এখানে এসে কিছু আরবি শিখলাম।
এর কিছু অল্পবিস্তর সবাই জানি, বাংলা ভাষায় ঢুকে গেছে যা। কিছু আবার জানতাম ভুল অর্থে। যেমন,'মারহাবা'। যার মানে জানতাম সাবাশ বা উত্সাহ দেওয়া, এখন তার মানে দেখি আসলে স্বাগতম! এছাড়াও অনেকগুলো কথা যেমন, 'কাইফালাক' (বাংলা নাটক (!) দেখে শিখেছিলাম-কাইফা হালুকা) যার মানে কি খবর বা ক্যামন আছেন। শিখলাম 'ইয়া হাবিবি'।
মানে হে আমার প্রিয়তম বা হে আমার বন্ধু! তারপর 'মা ইস্মুকা' মানে তোমার নাম কি। জবাবে 'ইস্ম ফাহা'। কিছু শব্দ, যেমন শুকরান (ধন্যবাদ), নাআম (হ্যা), লা (না), মওজুদ (বর্তমান বা উপস্থিত থাকা), খতর (বিপদ বা বিপদজনক)। কিছু সংখ্যাও শেখা হইলো। গতবার যখন এসেছিলাম তখন বিশ্বকাপ ফুটবল চলছে।
স্কোর কত জানতে চাইলে জবাব শুনতাম, 'ওয়াহিদ-ওয়াহিদ' মানে এক-এক (গোলে ড্র)। তবে আরবি গণণা আসলে এত সহজ নয়, এরা ৬০ কে বলে চল্লিশের পরে বিশ (বা এরকম কিছু একটা বা তার চেয়েও কঠিন কিছু)। আরবি ভাষাটাই আসলে কঠিন এক ভাষা। এত ক্রিয়ার প্রকারভেদ আছে যে নাভিশ্বাস উঠে যাবে ঠিকমত শিখতে। তারউপর হিন্দির মত স্ত্রীলিঙ্গ-পুরুষলিঙ্গের ব্যাপারতো আছেই।
তবে সবচেয়ে বহুল উচ্চারিত আরবি শব্দ নিঃসন্দেহে 'খাল্লাছ' (কাছাকাছি অর্থ ইংরেজিতে done)। আমার মনে হ্য় এটা আরবদের একটা কমন মুদ্রাদোষ। কথায় কথায় খাল্লাছ বলে এরা, অনেকটা আমাদের বাঙালিদের কথায় কথায় 'আচ্ছা' বলার মত।
৮.
গত দুইদিন কোনো কাজের শিডিউল ছিল না। সপ্তাহে শুক্র আর শনি এই দুইদিন এখানে ছুটির দিন।
এছাড়া প্রতিদিন সাতটা থেকে দুপুর দুইটা হলো অফিসটাইম। সকালে আরাম কইরা ঘুমানোর চান্স এইখানে নাই। ছুটি পেয়ে তাই প্রধান কাজ ছিল ঘুমানো। দেখলাম কাজটা সহজও। আমি নরমালি দিনে ঘুমাইতে পারি না।
অথচ এখানে শুইলেই ঘুম ধরে। মরু আবহাওয়া আর ভারী খাবারের স্পেসেফিক মিথষ্ক্রিয়া। জেগে থেকে যা করলাম তা হইলো টিভি দেখা। সেইটাই বলি।
অনেক চ্যানেল।
দুয়েকটা ছাড়া প্রায় সবই এরাবিক। বিভিন্ন দেশের চ্যানেল দেখলাম। মিউজিক অবশ্য সবই গতানুগতিক মনে হইলো। 'ইহা হাবিবি' টাইপ। মিউজিক ভিডিওগুলোতে আরব্য বেদুইন সংস্কৃতি তুইলা ধরার চেষ্ঠা।
কিছু গান যেগুলোকে মনে হইলো মূলধারার, তার সাথে দেখানো হচ্ছে আরবীয় পোষাকে কিছুসংখ্যক যুবকের নাংগা তলোযাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একজায়গায় দাড়িয়ে নাচানাচি আর একটু দুরে কতিপয় সিল্কি পোষাক পরিহিত আরবীয় রমণীর দাড়িয়ে বা বসে মাথার চুল চক্কর মেরে মেরে দুলানো। একই জিনিস দেখে দেখে বিরক্ত হবার যোগাড়। তবে মনে হলো এটাই গান উপভোগের বেদুইন ফর্মূলা। মেয়েদের মাথার চুল ঘোরানো আর কোমড় দোলানো মনে হলো কমন।
দেখলাম কাতারী, ওমানি, সৌদি চ্যানেল- বেশীরভাগই এখনও বিটিভিকে ছাড়াইয়া যাইতে পারে নাই।
আরো দেখলাম বিখ্যাত আল-জাজিরা। মনে হইলো বিবিসিরে অনুকরণ করার আরবীয় চেষ্ঠা। অনেক চ্যানেলেই ফুটবল। সৌদি চ্যানেলগুলায় ঘোড়দৌড়! দুবাই চ্যানেলে মোটর রেস। দেখলাম তালির তালে তালে মিডল আফ্রিকান ড্যান্স, আমির-ওমরাহদের বাতচিত, লাইভ জুয়ার চ্যানেল, খেজুড় গাছের তলে বেদুইনটাইপ সেট বানিয়ে পাশে উট রেখে সাখখাতকার, কউন বানেগা ক্রৌড়পতির আরবি সংস্করণ এবং অবশ্যই একটা হিন্দি গানের সিডি চালানো লোকাল চ্যানেল।
দুর্লভ দুয়েকটা ইংরেজি চ্যানেলেও নিচে আরবি সাবটাইটেল। সবমিলিয়ে জমজমাট আরব্য বায়োস্কোপ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।