আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাতারের ডায়রী-২

কপিরাইট © সংরক্ষিত.. লিখিত অনুমতি ছাড়া প্রকাশ নিষেধ

কাতারের ডায়রী-১ ৩. বলছিলাম ল্যান্ড ক্রুজারের কথা। এই বিষয়ে আমার থিউরি হইলো, হাজার বছর ধইরা উট চালানোর পরে নিচু কোনো জিনিস আর বোধহয় শেখ সাহেবগো ভালো লাগে না। তাই উঁচা উঁচা পাজেরো, রাস্তাঘাটে খালি এই জিনিস। এইচআরের যে আহ্ লান ওয়া সাহ্ লান কাজে নিযুক্ত ইংলিশমূর্খ শেখ সাহেব আমাকে এয়ারপোর্টে নিতে আইলেন, তার পাজেরোখান দেইখা মনে মনে কইছিলাম, ব্যাটা এইটা তোর হইতেই পারে না। নির্ঘাত আমিরের বাড়ি থিকা চুরি কইরা আনছস।

পরে ইশারা ইঙ্গিতে জিগাইছিলাম, এইটা কি তোমার? শেখের ব্যাটা তখন এক পা এক্সিলারেটর আর অন্য পা পাছার তলে মুড়াইয়া ডানহাতে তছবি আর বামহাতে স্টিয়ারিং হুইল ধইরা মারহাবা মারহাবা মার্কা গান শুনতে শুনতে যান্ত্রিক উট চালাইতেছিলো, আমার প্রশ্ন বুঝতে পাইরা তছবিওয়ালা হাতটারে এমনভাবে উপরে তুললো যে আমি বুইঝা নিলাম, সবই উপরওয়ালার কুদরত। দোহার রাস্তাগুলানও মাশাল্লাহ। সিগনালের বদলে খালি ঢাকার শাপলা চত্বর। সারকেলে যে য্যামনে পারে গাড়ি ঢুকাইতেছে, আবার হুশহাশ বাহির হইয়া যাইতেছে। আর সোজা রাস্তায় লেন বইলা যে একটা জিনিস আছে সেইটা বোধহয় আরবি ডিকশনারিতে নাই।

গতবছর প্রোজেক্টের গাড়ি ছিল, সেইটা চইড়া দোহা'র রাস্তায় ঘুরাঘুরির পর এইবার স্বত:প্রনোদিত হইয়া কইছি, আমার গাড়ির শখ নাই! এতে অবশ্য একটু কষ্ট হইয়া যাইতেছে,কাতার তো আর সিংহপুর না যে, ছায়া সুনিবিড় ছাদওয়ালা করিডর হাটলেই বাসস্টপ যাহাতে পটাপট একের পর এক গাড়ি আইসা থামে। কাতারীরা ব্যাপাকতে বড় লোক হওয়ায় তারা মনে হয় ধইরাই নিছে যে, পাবলিক সার্ভিসের কোনো দরকার নাই। জিগাইলে কয়, বাস, উহা আবার কি? আপাতত কলিগদের কাছ থেকে লিফট নিয়া নিয়া আর শাটল মাইক্রো দিয়া ইনডাস্ট্রি-ভার্সিটি-গেস্ট হাউজ করতাছি। ট্যাক্সির চিন্তা না করাই উত্তম, কল করলেই আসে দুই ঘন্টা পর, তারজন্যে মরুভুমির মধ্যে দাড়াইয়া না থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। ৪. তবে একটা জিনিস ভালো লাগছে যেইটা গতবারো লাগছিলো, সেইটা হইলো, খানাদানা।

ট্র্যাডিশনাল খাবারের মধ্যে পড়ে শুকনা রুটি কিন্তু ইহা এখন শুধু টেবিলের শোভাবর্ধনের জন্যই ব্যবহৃত। কেউ কেউ খায়, কেউ খায় না। পাশে যদি বিরিয়ানি, রোস্ট, কাবাব থাকে তাহলে ওই রুটি খাবার প্রয়োজনও হয় না। মানুষ ক্যামনে এই গরমে এই সব খাইয়া বাইচ্যা থাকে, এটা একটা প্রশ্ন বটে। এর মধ্যে পইড়া বাঙালির হইছে মহা মুশকিল।

চিজ-বাটার-হানি,মুরগি-দুম্বা-গরুর ভিড়ে মাছের নামগন্ধ নাই। এইসব বস্তাভারী খাবার খাইয়া প্রথমদিন টানা পনেরো ঘন্টা ঘুমাইছি। তবে শুকনা রুটিটা খাওনের মতন। এইটা আরবরা খায়ও দারুণ সুন্দর কইরা। প্রথমে দুই টুকরা করে, তারপর এক টুকরা নিয়া মাঝবরাবর ফাক কইরা শুকনা মাংস, রোস্ট, সালাদ, হাবিজাবি যত কিছু আছে ভইরা আস্ত একটা স্যান্ডওইচ বানাইয়া ফালায়।

সামনে বইসা কেউ যখন ধীরেসুস্হে এই জিনিস তৈরী করে, তখন মনে হয় কাইরা নিয়া খাইয়া ফালাই। হাত কাটা যাবার ভয়ে অবশ্য তা করা হয়ে উঠে না। (চলবে) ১৬/০৭/০৭ দোহা, কাতার (একই সাথে সচলায়তনে প্রকাশিত)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.