কপিরাইট © সংরক্ষিত.. লিখিত অনুমতি ছাড়া প্রকাশ নিষেধ
কাতারের ডায়রী-১
কাতারের ডায়রী-২
৫.
মাটির তলে তেল আর গ্যাসের ভুসভাস শব্দে ইউরোপ-আমেরিকার বেবাকতে আইসা হাজির মিডিল ইস্ট। কাতারেও। এদের দেখলেই আমার ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনার খনির মালিক হবার লোভে মত্ত গোয়ার পশ্চিমা পাপীদের কথা মনে পড়ে যায়। সবাই যেন জিহবা বের করে আছে। কাতারীরা তো নিশান ফোর হুইল ড্রাইভ, এসির বাতাস আর আলিশান বাড়ি পাইয়াই খুশী।
এই ফাঁকে এমন কোনো এমএনসি নাই দুনিয়ায় যে কাতারে আসে নাই। শেল,শেভরন, সেসল, এক্সনমোবিল, জি ই, কোনোকোফিলিপস, ডলফিন, টোট্যাল, আরো কত অয়েল মেজর, গ্যাস মেজরে দেশটা ভর্তি। যাই হোক, আমার কি। আমার দেশেও গ্যাস আছে, গরীবের ঘরে সুন্দরী মাইয়ার মতন হইলেও তো আছে। কথা সেটা না।
কথা হইলো, উঠতি দোহা সিটি। কে জানি বলছিল, মনে হয় দুনিয়ায় যত ক্রেন আছে তার চার আনাই এখন দোহায়। কারন, কন্সট্রাক্শন। এমনিতে সুন্দর সুন্দর একতলা, দোতলা বাড়িই বেশি চোখে পড়ে। তবে নতুন নতুন টাকা হইলে যা হয়, মাইনষেরে দেখাইতে হইবো না! আমির বলছে, বানাও উঁচা উঁচা বিল্ডিং।
ত্রিশ তলা, চল্লিশতলা, আরো বেশি উঁচা হওয়া চাই। দেশের লোকসংখ্যা মোটে আট লাখ (দুই লাখ কাতারী, বাকি অন্যদেশী শ্রমজীবি), কে থাকবে ঐ আকাশছুয়ে যাওয়া ইমারতে! তবু এশিয়ান গেমস দেখতে যারা এসেছিল, তেলের টাকা কামড়াকামড়ি করতে যারা আসে,গলফ আর টেনিস ওপেন দেখতে যারা আসবে,যেই আসুক তাদের দেখাতে হবে না যে এখন এই দেশ আর বেদুইন জাতি নাই, এই দেশ এখন আলো ঝলমলে 'গ্যাস ক্যাপিটাল'!
দোহার শপিংমলগুলো দেখেও ধাক্কা খাইছি। এর কারণও অবশ্য আছে। লোকজন সাধারণ মুদির দোকানকেও এখানে বলে সুপারমার্কেট। তাই প্রথম প্রথম ভাবছিলাম,সুপারমার্কেটের যে অবস্থা, মলগুলান আর কত ভাল হবে।
সিটি সেন্টার নামে দোহায় একটা শপিং কমপ্লেক্স আছে। তাতে ঢোকার আগমুহুর্ত পর্যন্ত এই ধারণা ছিল। কিন্তু ভেতরে ঢোকার পর নিজের গালে নিজেই চাটি মারছি। এ তো আলিশান, পশ্চিমের মেসি'স কিংবা সিংহপুরের ভিভোসিটিও তো এর কাছে হার মানবো! কি নাই! দুনিয়ার সব ব্র্যান্ড আইসা হাজির। খালি সিটি সেন্টার না, আরো কি কি যেন আছে, ডড়াইয়া আর যাই নাই।
এমনকি এসির হাওয়া খাইতেও না। পকেটের যে অবস্থা!
৬.
যেখানটায় এসে উঠেছি সেটাকে বলা যায় বেশ পরিচিত এলাকাই। জায়গার নাম আল-সাদ। পাশেই ফিলিপিনো স্কুল। কাতারে প্রচুর ফিলিপিনি নাগরিক, অফিসে, হাসপাতালে, শপিংমলে।
বেশির ভাগই ক্লার্ক জব করে। তাদের বাচ্চাদের জন্যই এই স্কুল। কাউকে এই স্কুলের কথা বললেই আল-সাদ এলাকার কোথায় থাকি চিনে ফেলে। সকাল-বিকাল অভিভাবকেরা বাচ্চাদের আনা-নেওয়ার সময় এলাকাটাকে আর মিডিল ইস্ট বলে মনে হয় না। কারণ, পোষাক।
কাতারে বোরকা-হেজাব ছাড়াও যে মেয়েদের দেখা মেলে সেটা এখানেই। প্রায়শই দেখি, পথ চলতিরা হা করে তাকিয়ে আছে। এখানে অবশ্য বলে নেয়া ভাল, দোহার পথে পথিক খুবই কম। এই গরমে রাতে ছাড়া আর গাড়ি ছাড়া কে বের হয়! তাই পথিকদের বেশিরভাগই শ্রমিক। অন্তত দুই সামারে তাই দেখলাম।
অন্যসময়ের কথা জানি না।
দোহার রাস্তাঘাটগুলো পরিস্কার। তবে আইল্যান্ড বা মোড়গুলোতে জোড় কইরা গাছ বা ঘাস লাগানোর চেষ্ঠা দেখলে সত্যিই হাসি পায়। সকাল সন্ধ্যা এই যে পানি ঢালতেছে, তবু সব গাছের জন্ডিস আর সারে না, আর ঘাসগুলান যে ক্যান লাগায়। লাগানোর ঘন্টাখানেক পরই মনে হয় পুইড়া শেষ! যা থাকে তা ঐ এক ও অদ্বিতীয় খেজুড় গাছ।
তবে বলতেই হয়, এখন এই খেজুড়ের মোসুমে বাটু বাটু গাছগুলান যেভাবে খেজুড়ের ভাড়ে রাস্তায় নুয্যমান, মনে হয় গাড়ি থামাইয়া মুঠো মুঠো খেজুড় মুখে দিয়া মুখ ভইরা ফেলি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।