অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
মূলত নারীবাদ থেকে উদ্ভুত হলেও একটা সাধারণ প্রশ্ন সামনে আনা যায়- সৈন্দর্য্য সচেততাকে কি পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো এবং পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর প্রভাবমুক্ত স্বাধীন সৃজনশীল এবং মানবিক রুপে প্রতিষ্ঠিত করা যায়?
নারীবাদিরা নারীদের সৈন্দর্যসচেতনতাকে নারীর হীন অবস্থার প্রতিরূপ হিসেবে দেখবার চেষ্টা করছেন- বলছেন পুরুষের নির্মিত যৌনতার দেবির কাঠামোকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং পুরুষকে প্রলুব্ধ করবার সামাজিক প্রেষণা থেকেই পুরুষের নির্ধারিত সৈন্দর্যবোধের অনুগমনেই রুচচর্চা প্রসারিত হচ্ছে- এবং অজ্ঞ নারীকূল অজান্তেই পুরুষতন্ত্রের ফাঁদে আটকা পড়ে রেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞপন দেখে রং উজ্জল করতে চায়- নির্দিষ্ট দোকানের কাপড় পড়ে নিজের যৌনাবেদন বাড়াতে চায়- এভাবেই পুরুষতন্ত্র তার উপরে প্রভাব ফেলে-
অনেকগুলো প্রশ্ন আসলে উত্তরবিহীন অবস্থায় আছে- নারীবাদ সামাজিক সম্পর্কগুলোকে কিভাবে দেখে? নারী নারীবাদী কাঠামো হিসেবে কোথায় অবস্থান গ্রহনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে?
কিছু কিছু স্পষ্ট অসমতার বোধ উপস্থিত আছে সমাজে- আইনি কাঠামোতে-মতাদর্শগত স্থানে পুরুষ এবং নারীর অসমতা স্পষ্ট হয়ে আছে অনেক নীতিতেই- নারী রহস্যময়, প্রহেলিকাময়- নারীর মনের কথা কেউ জানতে পারে না- এইসব সাহিত্যনির্মিত ধারণা প্রকাশিত এবং প্রচারিত- তবে এসবের শরীরবৃত্তীয় কারণ আছে কোনো?
প্রশ্নটা বিপরীত দিক থেকে করলেও হয়-পৌরুষ কি? হাবে ভাবে পুরুষ মাত্রই যে আচরণ করে সেটাই কি পৌরুষ নাকি নারীবাদ যেভাবে চিহ্নিত করতে চায় এমন একটা পৌরুষত্বের ধারণা বিদ্যমান।
পুরুষের নিজস্ব কিছু আচরণ বিধি আছে- এর বাইরে গেলে পুরুষের আচরণকে মেয়েলী বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়= সুশীল মানুষেরা যারা শোভনভাবে হাতের মুদ্রা এবং চোখ আর ভ্রু নাচিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে তাদের আচরণকে মেয়েলী বলবার একটা রীতি প্রচলিত আছে- বর্তমানের প্রকাশ মাধ্যমে কিংবা সিনেমা নাটকে সমকামী চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে যাদের তাদের ভেতরে এই তথাকথিত "গে" প্রবনতা বিদ্যমান- পুরুষের আচরণের এই নির্দিষ্ট বিধি প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যাপী- যদিও এটাতে মেয়েলী পুরুষ মাত্রই সমকামী এমন স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না-
একই মুদ্রার অন্য পিঠে সমকামী নারী চরিত্রের অবস্থান- টম বয় ধাঁচের বালখিল্যতা নয় বরং পুরুষালী মেয়ে কাঠামো যেখানে স্পষ্ট ব্যক্তিত্ব ও বলিষ্ঠ শরীরের মেয়েদের অবস্থান-
সামাজিকতার কিংবা প্রথার মজাটাই এখানে- এরা পুরুষ এবং নারীর জন্য একটা স্বীকৃত আচরন বিধি নির্দিষ্ট করে রেখেছে- এবং ডমিনেটিং নারী এবং ম্যালিয়েবল পুরুষ যেখানে তার স্ব স্ব অবস্থানচ্যুত হয়ে সমকামী হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই স্পষ্ট সামাজিক বোধ নারীবাদীদের সহায়তা করলেও এমন সিদ্ধান্তগুলোর অস্তিত্ব ও বিকাশের জায়গাটাতে তেমন আলোচনা হয় নি-
এঙ্গেলস যখন তার নারীর ঐতিহাসিক পরাজয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন তখনও জীনতত্ত্ব এবং নৃতত্ত্ব শৈশবাবস্থা অতিক্রম করে নি- বরং প্রতিষ্ঠিত এবং সভ্য সমাজের রীতি বিশ্লেষণ করে এঙ্গেলসের ইতিহাস বিশ্লেষণের জায়গাটাতে হয়তো এঙ্গেলস আদিবাসী সমাজের রীতি এবং সেখানে নারীর অবস্থানকে ঠিকভাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন-
প্রযুক্তির অগ্রসরতা এবং পূঁজিবাদের সম্প্রসারণে আমরা গত কয়েক দশকে অনেক আদিম সমাজের সাথে পরিচিত হয়েছি- এই সমাজগুলো শিল্পবিপ্লব কিংবা প্রাক শিল্পবিপ্লব কিংবা এমন কোনো নির্ধারিত সংজ্ঞার জায়গা অতিক্রম করে নি- তারা স্বভাবে এবং আচরণে আদিম- গার্হস্থ্য শ্রমের জায়গাটাও এখনও স্পষ্ট হয়ে উঠে নি অনেক স্থানেই- সেখানে এখনও যাযাবর বৃত্তি অতিক্রম করে কৃষিভিত্তিক সমাজের গঠন সমাপ্ত হয় নি-
এখানে নারীদের অবস্থান বিশ্লেষণ করলে নারীবাদি কিংবা পুরুষতন্ত্রের উদ্ভবের বিষয়টা পর্যালোচনা করা যায়- এইসব সভ্যতার পুরুষেরা কি পুরুষতান্ত্রিক বোধ ধারণ করে? তাদের নারীদের ভেতরে কি বঞ্চনার বোধ জাগ্রত হয়েছে? নারীবাদ কি একটা যুগের ফ্যাশন? কিছু অবসাদগ্রস্থ মানুষের পরাজিত জীবনের আক্ষেপ কিংবা দায় সমাজের উপর ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা?
প্রশ্নটা ভিন্নভাবেও উপস্থাপন করা যায়- আমরা যে পুরুষতান্ত্রিক কৎহামো দেখি এটা কি শুধুমাত্র পুরুষের কতৃত্ববাদী নির্মান? এটা কি নারীর প্ররোচনায় সৃষ্ট? না কি এই কাঠামো উভয়ের যৌথ নির্মাণ?
লিখিত ইতিহাস বলছে সব সময় পুরুষই রাজত্ব বিস্তার করেছে এমন না- বরং ইতিহাসের সব সময়ই নারীও রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলো- যুদ্ধংদেহী নারী রাজ্যের বর্ণনাও আছে লিখিত পুরাণে- সেখানে পুরুষদের ভেড়া বানিয়ে রাখবার উপকথাও শোনা যায়- মৌমাছি সভ্যতার গল্প যেহেতু সবখানেই পাওয়া যায় এটাকে বাস্তবিক সত্য হিসেবে ধরে নেওয়া ভালো - অন্য ভাবেও দেখা যেতো যেখানে পুরুষের ভীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে এইসব ভুয়া গল্প ছড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলা যেতো-
মোল্লাতন্ত্রকে দোষারোপ করা হয় পুরুষতান্ত্রিক উত্থানের পেছনের কারণ হিসেবে তবে সভ্যতার একটা পর্যায় পর্যন্ত নারীরাই ওঝা, ভবিষ্যতবক্তা এবং চিকিৎসকের ভুমিকা পালন করেছে- তারাই সর্বসেবা ছিলো এই স্থানে- ডাকিনি ডাইনির কথা প্রচলিত আছে- তাদের ভয়ংকর প্রতিশোধের এবং ভয়ংকর বোকামির গল্পও আছে-
তবে এইসব আদিম সমাজের খাদ্যাভাব খাদ্যের অপ্রতুলতা এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধে সর্বদা সংগ্রামের সময় অভাবের বোধটা খুব স্পষ্ট-
সেখানে নারীদের কৃষিকার্যে কিংবা পশুপালনে যুক্ত হওয়ার বিষয়টা প্রকাশিত থাকলে পুরুষের নির্দিষ্ট কাজগুলো ছিলো শিকার আর যুদ্ধ- সমাজের নিরাপত্তা বিধান করা- খাদ্যের যোগান ঠিক রাখা।
এসব সমাজে যোগ্য পুরুষ সেই যে ভালো শিকারী- যে সাহসী যোদ্ধা এবং সে পুরুষের কদর আবার নারীদের ভেতরে বেশী- এর পেছনে কোনো স্বার্থান্ধতা- খাদ্যের নিশ্চয়তার মতো ক্ষুদ্র স্বার্থ জড়িত থাকলেও এটা একটা পন্থা বেছে নেওয়া, এমন পুরুষকে অনেক নারীই কামা করতো- যোগ্য শিকারীর শয্যাসঙ্গিনীর অভাব হয় না- বরং অনেকেই তার সাথে সংসার করতে চায়- এই ভাবে নারীরাও পুরুষের বহুগামীতাকে উস্কে দিয়েছে- প্রতিপালন করেছে-
আদিম সমাজে সবাই রুপচর্চা করতো, নারী এবং পুরুষ উভয়েরই আবরন আর আভরণে আগ্রহ ছিলো- তারা প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে নিজেদের সাজাতে ভালোবাসতো- আর মানুষ প্রাণী বলেই তার নিজস্ব একটা যৌন অভিরুচি বিদ্যমান- প্রতিটা সমাজেই তাই আদর্শ যৌনসঙ্গীনি নামক একটা কাঠামো স্পষ্ট- এই কাঠামোতেই সবাই নিজেদের সাজাতে চাইতো- পুরুষ প্রলুব্ধ করতে চেয়ে নারীরা এবং নারী প্রলুব্ধ করতে চেয়ে পুরুষরা প্রসাধন কিংবা রুপচর্চা করতো- এখনও মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই একই রকম আচরণ করে যাচ্ছে।
আদিম সমাজে নারীর এই ভুমিকা নারীবাদের বিরোধি বলা যায় অনায়াসেই- তবে এখানে পুরুষের পুরুষ হয়ে উঠা এবং সেটাকে সহায়তার দোষটা সম্পূর্ন ভাবেই নারীর উপরে পড়ে এসে- নারী নিজের নিরাপত্তার জন্য পুরুষকে পুরুষতন্ত্র প্রচলিত করতে বাধ্য করেছে- পৌরুষের একটা সংজ্ঞা নির্ধারণে বাধ্য করেছে- সে শেকল তারা তৈরি করেছে সে শেকল এখন তাদের গলায় ফাঁস হয়ে বসেছে-
কিংবা এখন সামাজিক অবস্থা বদলেছে- এখন জীবনের কিংবা খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টা প্রকৃতির সাথে সংগ্রামের পর্যায়ে নেই- এখন এসব অর্থনীতির দ্বারা নির্ধারিত হয়- এখন শাররীক সক্ষমতা কিংবা শাররীক দুর্বলতা অতিক্রম করতে পেরেছে নারী তাই তারা নতুন ভাবে সব কিছুকে ব্যাখ্যা করছে-
তাই এখন তারা নিজেদের তৈরি পুরুষতন্ত্রকে নিজেরাই ধ্বংস করতে উদগ্রীব।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।