ছায়া ছায়ায় পথ হেটে চলি--ছায়া আমার সামনে ও পিছে।
রক্তিম ধূসরতার তৃতীয় পর্ব আজ
প্রথম পর্ব দেখতে
দ্বিতীয় পর্ব দেখতে
তিন..
রমা রীপুর দিকে দীর্ঘন তাকিয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে, পলকহীন। মেয়েটার কথা বলার স্টাইল, চাহনী সবই খুব অপরিচিত লাগছে। তার এরকম প্রায়ই হয়।
অপরিচিত কাউকেও কখনো কখনো খুব পরিচিত মনে হয়। আবার খুব পরিচিত কাউকে মনে হয় অপরিচিত। এটা হলো রমার ‘ইনভার্স পারসোনালিটি’।
আজ বুধবার।
এই দিনটা রমার দুঃখ দিবস।
সপ্তাহের সাতটা দিনে রমা সাত রকম ভাবে পালণ করে। বৃহস্পতিবার ঘুম দিবস। শুক্রবার রীপু দিবস। কারণ এই দিন রীপু রমার তথাকথিত আস্তানায় হামলা চালায়। আর শনিবার বিরহ দিবস।
বিরহ এবং দুঃখ এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য হলো দুঃখ দিবসে সে তাবত পৃথিবীর দুঃখি মানুষগুলো নিয়ে ভাবে।
সেদিন সকালে রাস্তায় হাটার সময় হঠাৎ তার চোখে পড়লো এক বৃদ্ধ। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। বয়স আনুমানিক পঞ্চাশ বা তার উর্ধ্বে। লোকটা একটা ঝুপরির মতো চায়ের দোকানে চায়ে ভিজিয়ে ভিজিয়ে খুব আয়েস করে রুটি খাচ্ছে।
দেখে তার খুব মায়া হলো। এমন মায়া সাধারণত তার হয় না। তবুও কেন জানি তার এমন হলো। সারাদিন সে ঐ লোকটাকে নিয়ে ভেবেছে। সারাদিন মনটা খারাপ ছিল।
পৃথিবীতে আরও কতো মানুষ আছে যারা ঠিক ঐ বৃদ্ধ লোকটার মতো কষ্টে আছে! রমা জানে তার এই ভাবনা লোকটাকে স্পর্শ করবে না কিংবা লোকটা জানবে না যে তাকে নিয়ে পৃথিবীর কোন এক কোনে কোন একজন ভাবছে!
আর শনিবারে রীপুর সাথে অভিমানের পর্ব। কারণ প্রতি শুক্রবারই রীপুর সাথে রমার একটা বড় রকমের যুদ্ধ হয়ে যায়। শুধু যুদ্ধ বললেও ভুল হবে, একেবারে বিশ্বযুদ্ধ। গেল শুক্রবারে রীপু তাকে সেভ করে আসতে বলাতে যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। আর এ সপ্তাহে সিগারেট খেতে নিষেধ করাতে।
সে জানে সব মেয়েই ছেলেরা সিগারেট খেলে একটু নিষেধ করে। তবে মেয়েরা চায় তার প্রেমিক সিগারেট খাক! কারণ সিগারেট না খেলে ছেলেদের ছেলে মনে হয় না। মনে হয় লিপস্টিক বিহীন কোন মেয়ে। এতো যুদ্ধের পরও সে রীপুকে ভীষণ ভালোবাসে। তার নিজস্ব ভাষা আর লিপিতে চিঠি লেখে।
কারও হাতে ধরা পড়লেও কোন সমস্যা নেই। কারও বাপের সাধ্য নেই যে এই ভাষা রমা আর রীপু ছাড়া কেউ উদ্ধার করতে পারে।
একবার রমার চিঠি রীপুর মায়ের হাতে গিয়ে পড়ে। রীপুর মা, সুলতানা রাজিয়া খাতুন। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রফেসর।
অথচ রমার চিঠির একটা শব্দেরও পাঠ উদ্ধার করতে পারেননি। শেষে কান্ত হয়ে রীপুর হাতে চিঠিটা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, কোন পাগল না ছাগল তোর কাছে চিঠি লিখেছে। কিসব উল্টা-পাল্টা লিখেছে।
চিঠিটা রীপু পড়ে হাসতে হাসতে একেবারে কুটিকুটি।
রীপু,
চিঠিটা পোস্ট কার্ডে লিখে পাঠালাম।
কারণ মহারাণী ভিক্টোরীয়া মানে তোমার প্রফেসর মা
এই চিঠি পড়তে গিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলবেন,
পারলে পায়ের ঘাম মাথায় তুলবেন! কিন্তু তিনি পারবেন না।
তুমি কাল সকাল ১০টায় অবশ্যই চলে আসবে।
নতুন একটা আইডিয়া মাথায় এসেছে তা নিয়েও কথা বলবো।
তুমি অবশ্যই অবশ্যই চলে আসবে কিন্তু।
(রমা)
পূনশ্চঃ এই চিঠি পড়তে না পেরে তোমার মায়ের অবস্থা কি হলো তা কিন্তু বিশদ বলতে হবে।
সুতরাং ভালো ভাবে অবজারভ করে এসো। বুঝেছো? ঁংংঁঁ ংঁংঁং ংঁ(রংরী ভাষায়)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।