আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রক্তিম ধূসরতা

ছায়া ছায়ায় পথ হেটে চলি--ছায়া আমার সামনে ও পিছে।

আগের পর্বের পর... সকালের আবহাওয়া সবারই প্রিয়। তবে রমার না। একদম অপছন্দ। রীপু ঘরে ঢুকেই রমাকে দেখে আতকে ওঠে।

কি ব্যাপার তুমি এভাবে ভুতের মতো বসে আছো কেন? রমা তবুও চুপচাপ বসে থাকে। রমার কন্ঠ একটু অন্য রকম মনে হয় রীপুর কাছে। একদম অপরিচিত। রীপুকে রমা গত কয়েক বছরে একবারও এভাবে কথা বলেনি। অথচ আজকে বলেছে।

রমার চোখ লাল, সারা রাত না ঘুমানোর কান্তি চোখে মুখে। সে লজ্জায় বলতেও পারছেনা কাল রাতে মশারা তাকে রিমান্ডে নিয়ে আচ্ছামতো টর্চার করেছে। সারা রাত সে ঘুমোতে পারেনি। তার অপরাধ মশাদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করা! রীপু রমার স্টোভ জ্বালিয়ে কফি বানানোর কাজে লেগে পড়ে। রীপু রমার আস্তানায় যতোবার এসেছে ততোবারই এই কাজটা করেছে স্বাচ্ছন্দে।

সঙ্গে ফ্রী ঝগড়া। আজকাল সবকিছুর সাথেই কিছু না কিছু ফ্রি থাকে। সাবানের সাথে শেম্পু, টুুথপেষ্টের সাথে ব্রাশ। আর রীপুর কফির সাথে ঝগড়া ফ্রি। রীপু কফি বানিযে একটু একটু করে খাবে আর বইগুলো ওলট-পালট করে দেখবে।

রীপু সব কাজের সাথে এই কাজটাও করে। সে কী দেখে, রমা কোনদিন জিজ্ঞেস করেনি। তবে রমা জানে রীপু বইগুলোর দিকে তাকিয়ে অন্য কিছু ভাবে। কি ভাবে তাও জানে। কিছুন বসে থেকে হঠাৎ করেই বলবে, আচ্ছা ঠিক আছে আজ তাহলে যাই।

সে কখনো রীপুকে বসতে বলে না। বললেও অবশ্য কাজ হবে না! সে তা জানে। তাই বলে না। রীপুকে বিদায় দিয়েই রমা তড়িঘড়ি তার সিডিউল মোতাবেক বেড়িয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। এগারোটা বাজে।

না সকাল, না দুপুর। এই সময়টা চলাফেরা করার জন্য উৎকৃষ্ট। কারণ রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। কলেজ পড়–য়া সদ্য প্রেমে পড়া মেয়েরা চেংরা ছেলেদের সাথে লেপ্টে লেপ্টে রিক্সায় ঘুরে বেড়ায়। এই দৃশ্যটা রমার ভীষণ পছন্দ।

রমা যখনই বিধ্বস্ত অবস্থায় থাকে তখন অন্যদেরও বিধ্বস্ত করা তার একটা সখ। আজো বের হয়েছে তার সিডিওল মোতাবেক কয়েকজনকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করার প্লান নিয়েই। বড়বোন নাসরিনদের বাসায় ঢুকেই রমা তার বোনকে একটু অন্যরকমভাবে জিজ্ঞস করে-- কিরে কাল দেখলাম তোর স্বামী তাজুইল্লা আরেক সুন্দরী মেয়ের সাথে রিক্সা করে ঘুরছে। অবশ্য মেয়েটা সুন্দরী। তোর ননদ না কী? না তো ভাইয়া! একটু থতমত খেয়েই উত্তর দেয় নাসরিন।

রমা মনে মনে বুঝতে চেষ্টা করে কষ্টটা কোথায় গিয়ে লেগেছে! কিছু কিছূ কষ্ট আছে যেগুলো হৃদয়ে পৌঁছার অনেক আগেই ভেনিস হয়ে যায়। আবার কিছূ কিছু কষ্ট একেবারে হৃদয়ের এক সেকেন্ড দূরে এসে থেমে যায়। এ ধরনের কষ্ট বেশিন লাস্টিং করে না। তবে যে কষ্টগুলো হৃদয়ে পৌঁছার অনেক আগেই শেষ হয়ে যায় সেগুলো কিছুন পর আবার ফিরে আসে। সে চাচ্ছে এমন একটা কষ্ট দিতে যাতে তার বোন অন্ততঃ দুই রাত ঘুমাতে না পারে।

তবে এখন তার বোন যে কষ্ট পেয়েছে তার হৃদয়ের এক সেকেন্ড দূরত্বে এসে থেমে গেছে। কারণ তার বোন স্বামী তাজুল ইসলামকে ভীষণ বিশ্বাস করে। এই মুহূর্তে তাকে দিতে হবে প্রথম প্রকারের কষ্ট। --কিরে শুনলাম তোর স্বামী বনানীতে জায়গা কিনেছে তা ও কবরস্থানে? --না তো কিছু জানিনা তো ভাইয়া! --জানবি কি করে? আরও তো অনেক কিছুই জানিস না, এখন বলবি তোর স্বামী মিস্টার তাজুল ইসলাম আরেকটা বিয়ে করেছে তাও জানিস না। জায়গাটাও তোর জন্যই কেনা।

তোর স্বামীতো তোকে ভীষণ পছন্দ করে এইজন্যই এই ব্যবস্থা। আমি অবশ্য তোকে নিয়ে ভাবছি না। আমি ভাবছি তোর ছোট ছোট দুটো মেয়েকে নিয়ে। সৎমার কাছে তারা কিভাবে থাকবে। এটাই চিন্তা।

রমার কথা শেষ হওয়ার আগেই নাসরিন হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে। --আল্লাগো এহন আমার কি অইব। ওগো রং-ঝংয়ের বাপ তুমি এইডা কি করলা। আমি তো তোমারে ছাড়া একদিনও কবরে থাকতে পারতাম না... ছোট বোন নাসরিনের কান্নার স্টাইল দেখে রমার মাথায় আরেকটা চিন্তা ঢুকে যায়। আচ্ছা মানুষ কষ্ট পেলে এমন সুর করে করে কেন কাঁদে? তাছাড়া কাঁদার সময় সবাই আঞ্চলিক ভাষায় কান্নাকাটি করে কেন! রমা ভেবে পায় না।

পৃথিবীতে এমন একজন মানুষও পাওয়া যাবে না যে শুদ্ধ ভাষায় কান্নাকাটি করার লিরিক বলছে। বাইরে বেরিয়ে সে মুগদাপড়ার দিকে হাঁটা ধরে। মশা বাহিনীর খোঁজে। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। আজ সারাদিনে সে প্রায় কিচ্ছু খায়নি।

শরির খুবই দূর্বল লাগছে। হাটতে হাটতেই সে স্পষ্ট শুনতে পারছে, পাশ দিয়ে কে যেন বলে যাচ্ছে, --‘কি রে রমা হালারপুত, আমাগো ভাষা আবিষ্কার করবি? তোর বাপের ভাষা ভালা লাগে না? শালা, পাছা দিয়া এমন বাশ ঢোকামু তোর বাপের ভাষার লগে মায়ের ভাষাও ভুইল্লা যাইবি। তহন ঠিকই আমাগো ভাষা বুঝবি...। ’ মশা তার সাথে রাস্তায় এভাবে কথা বলবে রমা তা কষ্টকল্পনাও করেনি। অথচ বলছে।

পাশ ফিরে সে দেখে রাস্তা দিয়ে যত গাড়ি চলছে সবকিছুতেই মশা। একটা টয়োটা গাড়ির ড্রাইভারের আসনে যে বসে আছে সেও মশা। সে কথা বলতে পারছে না। অনেক চেষ্টার পরও তার কন্ঠ দিয়ে কথা না বেরিয়ে মশাদের মতো কথা বেরুচ্ছে। রমার হাত-পা ঘেমে উঠছে।

মনে হচ্ছে সে ইয়ে করে দিয়েছে। পেন্টে ইয়ে লেপ্টে আছে। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার ভাষাই মনে হচ্ছে অন্যরকম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।