আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে গ্রামের শিক্ষার্থীরা

হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই

ব্যতিক্রম কয়েকজন অবহেলিত ও অনাদৃত শিক্ষার্থীর কথা জানা গেলো পত্রিকার মাধ্যমে যারা সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে জিপিএ ৫ পেয়েছে। কিন্তু এদের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ কী? তারা কি পারবে পণ্যমুখী শিক্ষার সব বিরুদ্ধ স্রোত ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে? নাকি টাকাপয়সার অভাবে কারণে তাদের এই পথচলা এখানেই থেমে যাবে? যদিও তারা সবাই প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে চলার কথা বলেছে, কিন্তু সে জন্য তারা কি রাষ্ট্র থেকে সেই সুবিধা পাবে যা এখন শহরের একজন শিক্ষার্থী পাচ্ছে রাষ্ট্রের কাছ থেকে? যে দিনমজুর পিতা সন্তানের রেজাল্টের অর্থ, জিপিএর মানে জানেন না, শুধু জানেন তার ছেলে পাস করেছে, তার পিতা কি সন্তানের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখে যেতে পারবেন? নাকি সব সম্ভাবনা কেবল ঘুরপাক খাবে যারা টাকা দিয়ে শিক্ষা কিনতে পারবে তাদের মধ্যেই? যারা বেশি বেশি টাকা খরচ করতে পারবে, প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য একজন করে টিচার রাখতে পারবে, সন্তানের শারীরিক পুষ্টির জন্য যারা কাড়ি কাড়ি টাকাপয়সা খরচ করতে পারবে, শিক্ষার সব ফলাফল কি কেবলই তাদের পায়েই লুটিয়ে পড়বে? আর প্রতি বছর আমরা এভাবে এক-দুজন শিক্ষার্থীর দেখা পেতে থাকবো যারা অতিকষ্টে নিজেদের মন ও মানসিকতার জোরে তাক লাগিয়ে 'ব্যতিক্রমী' হিসেবে চিহ্নিত হবে সবার কাছে? আয়বৈষম্যের কারণে যারা পিছিয়ে আছে, রাষ্ট্র কি সেই গ্রামের শিক্ষার্থীদের প্রমোট করার কোনো উদ্যোগ নিবে? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরি। জরুরি কারণ, কিছুকাল আগেও যেমন গ্রাম কিংবা মফস্বলের শিক্ষার্থীরা সমানতালে পাল্লা দিতো শহরের সঙ্গে, তেমনটা এখন আর দেখা যায় না। বলা ভালো, গ্রামের শিক্ষার্থীরা এখন একপ্রকার হারিয়েই যাচ্ছে। শহরের শিক্ষার্থীরা যে হারে জিপিএ ৫ পাচ্ছে, তার তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীদের অবস্থান তলানিতে।

এমনকি পুরো জেলা থেকে একজন জিপিএ ৫ পেয়েছে এমন উদাহরণও আছে। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হয়তো শিক্ষা হয়ে যাবে সম্পূর্ণ শহরের বিষয়। গুটিকয়েক শহরের শিক্ষাব্যবস্থার মাত্রা ও মান ভালো করে তা দিয়ে দেশের যেমন কোনো উপকার হবে না, তেমনি শহরাঞ্চলের বাইরের পুরো দেশকে শিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখলে দেশ পিছিয়ে যাবে ক্রমাগতই। এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী কিংবা এরকম বড় শহরে শিক্ষার্থীর পাসের হার প্রায় ৮০ শতাংশের ওপরে। কিন্তু এর বাইরের চিত্র একদমই আলাদা।

সেখানে পাসের হার ৩০-৪০ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থাৎ একটি বিশাল অংশই বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার পরবর্তী সুবিধা থেকে। বলা ভালো, তারা আসলে হারিয়েই যাচ্ছে। যদি বর্তমান সিস্টেম ঠিক থাকতো, তাহলে পাস ও ফেলের পার্থক্য এতোটা বিশাল হতো না। রাষ্ট্র যদি শিক্ষা সেক্টর থেকে ফলপ্রসু কিছু পেতে চায়, তাহলে প্রথমেই গ্রামের শিক্ষার্থীর দিকে নজর দিতে হবে, নজর দিতে হবে ফেল করা শিক্ষার্থীদের দিকেও।

শহরের শিক্ষার্থীদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে আমরা যেনো মনে না করি একমাত্র তারাই সারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। শিক্ষার্থীদের এই হাস্যোজ্জ্বল মুখ যেনো দেখা যায় সারা দেশ জুড়েই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.