প্রত্যাশিতভাবেই নির্ভয়া (ছদ্ম নাম) মামলায় দোষী চারজনকেই ফাঁসির সাজা দেওয়া হলো। গতকাল শুক্রবার নির্ধারিত সময় বেলা আড়াইটায় ভিড়ে ঠাসা দিল্লির সাকেত বিশেষ আদালতের বিচারক যোগেশ খান্না মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে তাঁর রায়ে জানিয়ে দেন, ‘বিরলের মধ্যে বিরলতর’ ঘটনা হিসেবে চারজনকেই চরমতম সাজা দেওয়া হচ্ছে।
বিচারকের ২০০ পৃষ্ঠার রায়ের মূল অংশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরের দুঃখজনক ঘটনার সাজা দেওয়ার পর্ব শেষ হলো। রায় ঘোষণার পরই আদালত কক্ষে উপস্থিত নির্ভয়ার মা, বাবা ও ভাইয়েরা স্বস্তি প্রকাশ করেন। পরে নির্ভয়ার বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এ রায়ে খুশি।
আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এবার আমাদের মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। ’
রায় ঘোষণার পর আদালতে উপস্থিত অধিকাংশ মানুষই হাততালি দিয়ে ওঠেন। চার আসামি অক্ষয় কুমার সিং, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত ও মুকেশ সিংকে মুখ ঢেকে পুলিশি প্রহরায় জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিশেষ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদন করার জন্য ৯০ দিন সময় পাওয়া যাবে।
রায়ে ক্ষুব্ধ আসামি পক্ষের উকিল এ পি সিং আদালতের বাইরে এসে অভিযোগ করেন, ‘রাজনৈতিক চাপের কাছে বিচারপতি মাথা নুইয়েছেন। এই রায় পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ’
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরের রাতে ২৩ বছরের বাসযাত্রী নির্ভয়া ও তাঁর এক বন্ধুকে ধর্ষণের পর মারাত্মক অত্যাচার করে গুরুতর আহত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সারা দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। তীব্র আন্দোলনের জেরে সরকার একসময় বাধ্য হয় ধর্ষণ বিষয়ে প্রচলিত আইনের সংশোধন করতে।
বিচারপতি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কেন এই ঘটনাটি তাঁর কাছে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ মনে হয়েছে। তাঁর মতে, পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় নৃশংসতার চূড়ান্ত পরিচয় দিয়ে এই অপরাধ ঘটানো হয়। তাই মৃত্যুদণ্ডই এর একমাত্র শাস্তি। ধর্ষণ, খুন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপের চেষ্টা—তিনটি অপরাধেরই সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয় আসামিদের।
এই মামলার শুনানির সময় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আদালত চত্বরে যুব-জনতা নিয়মিতভাবে ভিড় জমিয়েছে, চরমতম শাস্তির দাবি জানিয়ে এসেছে।
দণ্ড ঘোষণার দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সকাল থেকেই আদালত চত্বর ঘিরে ফেলেন পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরা। দেশি-বিদেশি প্রচারমাধ্যম গিজ গিজ করতে থাকে। বিভিন্ন কথা লেখা ব্যানার-পোস্টার ও ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে ফাঁসির দাবিতে শতাধিক যুবক ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান তুলতে থাকেন। উল্লাসে ফেটে পড়ে বেলা আড়াইটায় ফাঁসির আদেশের খবর চলে আসতেই।
এদিকে রায়ের পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, মিডিয়া, সরকার এবং সাধারণ মানুষের চাপে বিচারকেরা প্রভাবিত হয়েছেন কি না। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, ১৮ বছরের বেশি বয়স না হওয়ায় পঞ্চম অপরাধীকে তিন বছরের যে সাজা দেওয়া হয়েছে, তাও যুক্তিসংগত কি না। শিশু অপরাধীদের বয়স ১৮ থেকে কমানো উচিত কি না সেই বিতর্কেও দেশ সরগরম। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে যে তথ্য জানানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, নির্ভয়া ঘটনার পরও দিল্লিতে গত আট মাসে নারী নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। রাজধানীর ১১টি থানায় গত আট মাসে দুই হাজার ৮০০ শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছরের ওই সময়ের তুলনায় ছয় গুণ বেশি! ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এক হাজারের বেশি, যা আগের বছরের ওই সময়ের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি।
সেই সঙ্গে দিল্লি পুলিশের তথ্য জানাচ্ছে, শ্লীলতাহানির ঘটনার ৯০ শতাংশই পরিচিতদের কাজ।
মোক্ষম প্রশ্ন তাই, এই সাজা দিল্লি বা দেশের অন্যত্র নির্ভয়াদের নির্ভয়ে বসবাসে সাহায্য করবে কি না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।