আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত ‘সেই যে সনি ক্লাব থেইকা আমার পোলাডারে ধরে নিয়া গেল পুলিশ, আইজ ৪৮ ঘণ্টা হইলো তারে ছাড়ে নাই। বাড়িতে তার মা বার বার অজ্ঞান হইয়া পড়ে। পুলিশরে কইছিলাম ওর মায় পোলাডারে চোহের (চোখের) দেহাডা (দেখা) দেখতে চায়।
একটু ছাইড়া দ্যান, না হয় আবার নিয়া যাইবেন লাগলে। পুলিশ কইছে ১০ দিন পরে ছাড়বে। ’ ছেলেকে ফিরে না পেয়ে এভাবেই আকুতি জানালেন ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী নিখোঁজ ডাব বিক্রেতা সোহেল রানার বাবা রহমত আলী (৬০)। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী অপহরণের ঘটনায় সোহেল রানাসহ চার প্রত্যক্ষদর্শীর খোঁজ পাচ্ছে না তাদের পরিবার। স্বজনরা আতঙ্কিত, প্রত্যক্ষদর্শীরা গুম হয়ে যাচ্ছেন কিনা! সোহেল রানার ব্যাপারে বনানী থানা পুলিশ বলছে গতকাল সকালে তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
বনানী থানার অফিসাস ইনচার্জ মো. মামুন-রশীদ ফোনে দৈনিক আমার দেশকে আরও বলেছেন, তারা ছেড়ে দিয়েছেন, হয়তো অন্য কেউ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যেতে পারেন’। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সোহেলের বাবা বলেছেন, তার ছেলেকে পুলিশ ছাড়েননি। গত শুক্রবার রাতে ছেলেকে দেখতে চাইলে গতকাল দুপুর ১২টায় যেতে বলেছেন এবং এ সময় পুলিশ তাকে আরও বলেছে আগামী ১০ দিনেও সোহেলকে ছাড়া হবে না। পুলিশ ছেড়ে দিলে বাবার কাছেই আসার কথা। ’ গতকাল সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, গণমাধ্যমে একের পর এক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার বিবরণ দেয়ায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ বাহিনীর
মাধ্যমে নানাভাবে হুমকি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানান তাদের পরিবার এবং এলাকাবাসী।
দৈনিক আমার দেশসহ কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে পুনরায় কথা বলার জন্য গেলে সংশ্লিষ্টদের পরিবার নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান। বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশের ব্যাপারে বনানী সাউথপয়েন্টের সামনে জলখাবার রেস্তোরাঁ এবং জলখাবার সুইটের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বললে জানান, কোনো দৈনিকে তারা কোনো সাক্ষাত্কার দেননি। জলখাবার রেস্তোরাঁর ম্যানেজারসহ রেস্তোরাঁর নিয়মিত কয়েকজন কাস্টমার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতকাল ওই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরে বিশেষ সংস্থার লোকজন জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের সারাদিন হয়রানি করেছে। এছাড়াও জলখাবার রেস্তোরাঁর কয়েকজন জানান, ‘যারাই মিডিয়ায় প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাত্কার দিয়েছেন তারা সবাই হুমকির মধ্যে রয়েছেন। তবে কোনো পুলিশ সদস্য ওই সময় ছিল কিনা সে ব্যাপারে জলখাবার সুইটের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ওইদিন রাতে তাদের কাস্টমার হিসেবে পোশাক পরা কাউকে তারা দেখেননি।
হয়তো সাদা পোশাকে থাকতে পারেন। ’ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া সংবাদের ওপর ভিত্তি করে ওইদিন বনানীর কাছাকাছি গুলশানের স্পটে ফুট পেট্রোল বা টহল পুলিশ কে বা কারা ছিল—এ ব্যাপারে তথ্য দিতে রাজি হননি গুলশান থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি এ সময় দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ওটা বনানীর স্পট, ওই রেস্তোরাঁয় আমার কোন পুলিশ অফিসারের যাওয়ারই কথা নয়। আর রাত ১২টায় কোনো ফুট পেট্রোল থাকে না। এমনকি আমার অফিসারদের জলখাবারের খাবারও পছন্দ নয়।
তাছাড়া এতো ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট থাকতে ওখানে যাবে কেন!’ গতকাল এলাকায় সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মিডিয়ায় যাদের সাক্ষাত্কার প্রকাশিত হচ্ছে তাদের অনেকেই নিখোঁজ। এ সময় তারা প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল রানার ব্যাপারে জানান, আজ তিন দিন হলো পুলিশ নিয়ে গেছে। কিন্তু আর ছাড়ছে না। কি অপরাধ সোহেলের? এলাকাবাসীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী সাউথপয়েন্ট স্কুলের সামনে ডাব বিক্রেতা সোহেলের বাবা মো. রহমত আলীর সঙ্গে কথা বললে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। রহমত আলী জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় সনি ক্লাব সিনেমা হল থেকে বনানী পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার রাতে রহমত আলী থানায় গেলে তাকে জানানো হয়, শুধু পুলিশই নয়, আরও বড় বড় কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এ সময়ে ছেলেকে দেখতে চাইলে রহমত আলীকে শুক্রবার দুপুরে থানায় যেতে বলা হয়। রহমত আলী গতকাল বেলা ১টার দিকে দৈনিক আমার দেশকে জানান, তার ছেলে এখনও থানায় রয়েছে। এ সময় বনানী থানায় গেলে থানার ডিউটি অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সোহেল নামে কেউ থানা কাস্টডিতে নেই। সকালে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পাল্টা রহমত আলীর অভিযোগের কথা জানালে ডিউটি অফিসার কাস্টডিতে থাকা অন্য অভিযুক্তদের দেখান। অথচ গতকাল দৈনিক সমকালেও প্রকাশিত সংবাদে প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল রানার কথা বলা হয়েছে, ‘সে বনানী থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। ’ পুনরায় বেলা ২টার সময় ছেলে ফিরেছে কিনা জানতে চাইলে কেঁদে ফেলেন বাবা রহমত আলী। এ সময় সাউথপয়েন্ট স্কুলের সামনে নির্মাণাধীন ভবনের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী লুত্ফুর রহমানের হদিস নেই গত তিনদিন ধরে।
নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, হঠাত্ করেই তিনদিন ধরে খোঁজ নেই তার। কোথায় গেছে কি করছে তার কোন খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল সরেজমিন ঘুরে একাধিক সাংবাদিক তার খোঁজ নিলে নির্মাণ শ্রমিকরা এ তথ্য জানান। গত ৭ দিন ধরে খোঁজ নেই সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সিকিউরিটি গার্ড রহুল আমিনের। স্কুলে গেলে এ সময়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
তবে মসজিদ রোডের ব্যবসায়ী এবং স্কুলের সামনে একাধিক হকার জানান, কয়েকদিন থেকেই রুহুল আমিনকে পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় তাজউদ্দিন জানান, স্কুলে খবর নিয়ে জানা যায় কয়েকদিন ধরেই নিখোঁজ রয়েছেন রুহুল আমিন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রুহুল আমিন কি কারণে কোথায় গেছে এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষও কিছু জানেন না বলে জানায়। এছাড়াও ইলিয়াস আলী গুমের সময় আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ভাঙারি কুড়ানো রনির হদিস নেই ঘটনার পরদিন থেকেই। এ সময় রনি মোবাইল ফোনে ইলিয়াস আলীকে গুম করার দৃশ্য ভিডিও করেছিল বলেও একাধিক সূত্র জানায়।
যদিও রনি তখন জানত না গুম হওয়া ব্যক্তিটি ইলিয়াস আলী। ইলিয়াস আলী গুমের পর দিনই রনিকে বেলতলা এরশাদনগর বস্তিতে খুঁজতে গেলে পাওয়া যায়নি। গতকাল দ্বিতীয়বার রনির খোঁজে গেলে তার পরিবারেরও কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় অনেকে চিনলেও রনিকে কয়েকদিন থেকে কেউ দেখেনি বলে জানা যায়। এমনকি রনির মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সোহেল রানাকে ফিরে পাননি বলে জানায় তার পরিবার। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।