পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
ঃ তোমার হাতটা দাও ।
শাহেদের কথাটা অনেক্ষন পর্যন্ত ঋজুর মাথায় ঢোকে না । কি চাইলো ? হাতের ব্যাগটা ? নাহ ত !
ঃ দাও না তোমার হাতটা !
শাহেদের কন্ঠে আকুতি ঝরে পড়ে ।
ঃ না !
বরফ শীতল কন্ঠে বাতাস চাবুক কাটে ঋজু । মুহূর্তে মুখটা শুকিয়ে যায় শাহেদের ।
ঃ তুমি এমন করো কেন? আমি যাই চাই , তাতেই না , না আর না।
একটা ২৫ বছরের ছেলে এমন করে ঠোঁট ফুলাতে পারে , ঋজু না দেখলে বিশ্বাস করতো না। উফফ , বিরক্তিকর! শাহেদ কি কিছুই বোঝে না! এই যে এতক্ষন গায়ে গা লাগিয়ে মিশুকে করে এতটা পথ এলো , ছেলেটা কি ঘুণাক্ষরেও টের পাচ্ছে না , ঋজু কতখানি বিরক্ত!
ঋজুর বড় দিশেহারা লাগে । এই গাধা ছেলেটাকে ওর বিয়ে করা লাগবে? বুকের ভিতর দুমড়ে ওঠে । ভালো লাগে না।
কিছু ভালো লাগে না। আজকাল মেজাজটা এত খিটখিটে হয়ে থাকে ! কিছুই ভালো লাগে না। ক্লাস শেষ হয়ে গেছে সেই কখন , ঘন্টা চারেক আগে। খিদায় পেট চোঁ চোঁ করছে ঋজুর । শাহেদ গাধাটা প্র্যাকটিকাল মিলাতে পারছিলো না, আর ঋজুকে বারান্দায় বসে পড়ার ভান করতে হচ্ছিলো ।
ভান করতে করতে এক সময় ঋজু সত্যি সত্যি পড়তে শুরু করে দিলে দেখে যে নতুন চ্যাপ্টার দুইটা পড়া শেষ । ওদিকে ছেলে তখনো , ডাটা মিলিয়ে যাচ্ছে । আরে , ব্যাটা , এনালাইসিস করবি কখন! ১ ঘন্টার প্র্যাকটিকাল সাড়ে ৩ ঘন্টা পরে শেষ করে শাহেদ যখন বের হয়ে এলো , মুখে তার দিগবিজয়ী হাসি । বিশ্ব জয় করে ফেলেছেন ।
খিক করে একটা হাসি দিয়েই বলে উঠলো ,
ঃ দেখেছো , কতজনের আগেই বেরিয়ে এলাম ? হুঁ হুঁ ! তুমি ফার্স্ট গার্ল হলে আমি কিন্তু স্টুডেন্ট খারাপ না।
ঋজুর একবার মনে হয়েছিলো , শাহেদ বোধ হয় ঠাট্টা করছে । কিন্তু , মিনিট পাঁচেক পরে ও বুঝতে পারলো , শাহেদ সত্যি সত্যি বিশাস করে , প্র্যাকটিকাল ক্লাসের জুটি গুলো , যারা এক্সপেরিমেন্টের চেয়ে প্রেমালাপে বেশি ব্যস্ত , তাদের চেয়ে সে "অনেক ভালো স্টুডেন্ট"।
ঋজু আর কিছু বলে না, চুপ চাপ একটা মিশুকে ঊঠে পড়ে । আজকে শাহেদের ওকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার কথা । "তাহার" অনেক দিনের শখ ।
ঋজু অনেক দিন বুঝিয়েছে , রাস্তার দুই ধারে শকুনমনা চিল চক্ষু আন্টিদের কথা । কেউ দেখে ফেললে হবে চিত্তির ! কিন্তু, শাহেদ নাছোড়বান্দা । প্রেমিকের পূর্ণ অধিকারের মধ্যে "বাড়ি পৌঁছে দেবার" অধিকারটুকু তার চাই ই চাই । নইলে বন্ধু মহলে ইজ্জত থাকছে না !
মিশুকে উঠার আগে শাহেদ খামোখাই এই দোস্ত , সেই দোস্তকে হাঁক ডাক করে "কি রে , কালকে কখন আসবি " টাইপ খাজুইরা আলাপ করে নেয় । উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার ।
এইটা নিশ্চিত করা যে "ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট গার্ল " এর সাথে শাহেদ একই মিশুকে করে কোথাও যাচ্ছে - এইটা একটু "শো অফ " করা হলো আর বাকি তুখোড় পুরুষদের হিংসার আগুনে দাউ দাউ জ্বালানো হলো ।
কিন্তু , একলা পুরুষরা তো আর দেখে না ! ডিপার্টমেন্টের মেয়েরাও দেখে আর মুখ টিপে হাসতে হাসতে চলে যায় । শুধু এই না, নরক যন্ত্রনা আরেকটু বাকি ছিলো । রাস্তায় শাহেদের ইচ্ছে হয়েছে , ঋজুর মত সেও যে একজন কবি , এইটা প্রমান করার । ফলে ঋজুকে খিদা পেটে শুনতে হলো ,
ঋজু ঋজু ঋজু ঋজু ঋজু
তুমি তো দেখি বোঝো না কিযু
(এইটা রবীন্দ্রনাথের কুতূহলের থেকে অনুপ্রানিত)
আমি তোমাকে কত যে বাসি ভালো
না বুঝলে আকাশটা হয় কালো
দেখো ঋজু , তুমি শুধুই আমার
আমি হবো তোমার সংসার ।
এই জিনিস শোনার পরে ঋজুর মনে হয় , শেষ লাইনের শেষ শব্দটা অনেক বেশি ছন্দ পেতো , শাহেদ যদি লিখতো "চামার" !
[চলবে?]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।