...সার্কিট হাউজে যখন অতিথিদের রাতের খাবার হিসেবে পাহাড়ি ছেলে -- মেয়েরা প্লেটে পোলাও -- মাংস তুলে দিচ্ছিলেন, তখন বাইরের বারান্দায় দেখা মেলে এক গামলা মুড়ি খেতে দরিদ্র একজন পাহাড়ি লোককে। কোলে একরত্তি এক দুধের শিশু।
লোকটিকে কান্তি আর অজানা এক অনুভূতি ঘিরে রাখে। সে যত না মুড়ি খায়, তার চেয়েও বেশী পানি খায় ঢক ঢক করে। কোলের শিশুটিকেও পানি খাওয়ায় কয়েকবার।
তার পরিচর্যা করছিলো যে সব ছেলে -- মেয়েরা তাদের কাছ থেকে জানা গেলো, এই ভাগ্যহতের ইতিকথা। দ্রুত নোট প্যাড বের করে টুকে নেয়া হতে থাকে সেই বিসতৃত নামের পাহাড়িটির কথা।
লোকটি লোগাং গণহত্যার প্রত্যদর্শি, প্রাণে বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন। তাদের গ্রামে আক্রমণ হতেই শিশুটিকে কোলে করে দুর্গম পাহাড় -- জঙ্গল ভেঙে প্রায় 30 কিলিমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রথমে পেঁৗছান সদরে। পিসিপির নেতারা সার্কিট হাউজে আছে -- এই খবর শুনে আসেন এখানে।
অনর্গল চাকমা ভাষায় শুধু একটা কথাই বলেন তিনি, বাবারা আমাকে একটু আশ্রয় দাও। চিদরেরা (নিরাপত্তা বাহিনী) আমার কথা জানতে পারলে হয়তো আমাকেও তারা মেরে ফেলবে!
ছাত্র নেতারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে সিদ্ধান্ত নেন, পিসিপির কাছে ভাষ্য দেয়ার অপরাধে লোকটিকে নিরাপত্তা বাহিনী হয়তো ছেড়ে কথা বলবে না। তাই দ্রুত তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কোনো একটি নিরাপদ আশ্রয়ে।
আহাদ ভাইয়ের ক্যামেরা ধার করে লোকটির কয়েকটি ফটো নেয়া হয়।
সেদিন রাত কাটে বর্ষিয়ান পাহাড়ি নেতা অনন্ত মাস্টার তথা রামগড়ের স্কুল শিক অনন্ত বিহারী খীসার নারানখাইয়ার বাসায়।
উনি অখন্ড পিসিপির সাবেক নেতা, বর্তমানে শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফের আহ্বায়ক প্রসিত বিকাশ খীসার বাবা।
পরদিন 12 এপ্রিল ছিলো ফুল বিঝু। খুব ভোরে নাস্তার টেবিলে অনন্ত মাস্টার সুন্দর করে বুঝিয়ে বলছিলেন ফুল বিঝু, মূল বিঝু ও গজ্যাপজ্যা বিঝুর কথা।
এমন সময় কোথা থেকে যেনো একদল পাহাড়ি শিশু -- কিশোর কিচির -- মিচির করতে করতে হাজির হয় সেখানে। ঝুপ ঝুপ করে সকলে অনন্ত মাস্টারকে করে ফুল বিঝুর প্রণাম।
বাঙাল অতিথির দিকে ওরা ফিরেও তাকায় না। ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।