আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।
বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও বিশ্ব জনমতের বিরোধিতা সত্ত্বেও সিরিয়ায় হামলা চালানোর জন্য মার্কিন সরকার ও তার যুদ্ধবাজ মিত্র এবং সেবাদাস সরকারগুলোর তোড়জোড় অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাব্য এই যুদ্ধের অজুহাত হিসেবে বাশার আসাদ সরকারের অনুগত সেনাদের মাধ্যমে বেসামরিক জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালানো হয়েছে বলে মার্কিন সরকার ও তার মিত্ররা প্রচারণা চালিয়ে আসছে।
কিন্তু নিরপেক্ষ বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসাদ সরকারের হাতে কথিত রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার একটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ মাত্র। বরং সিরিয়ায় পশ্চিমাদের সম্ভাব্য হামলার আসল উদ্দেশ্য হল, আসাদ সরকারের ইসরাইল বিরোধিতা এবং দখলদার ইসরাইল বিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গে এই সরকারের দীর্ঘ বহু বছরের কৌশলগত সহযোগিতার সম্পর্কের কারণে এই সরকারকে উতখাত করে সেখানে সেবাদাস সরকার বসানো।
জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, আমেরিকা ও ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্যের বেশিরভাগ মানুষই সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধী। তারাও মনে করেন যে, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ একটি অজুহাত মাত্র। বিশ্ব-জনমতের কাছে এটা স্পষ্ট যে আলকায়দার সন্ত্রাসীদের দমনের অজুহাত দেখিয়ে আমেরিকা আফগানিস্তানে হামলা চালালেও এখন সিরিয়া ও ইরাকের মত দেশগুলোতে আলকায়দাকেই মদদ যোগাচ্ছে আমেরিকা ও ইসরাইলসহ তাদের পশ্চিমা এবং স্থানীয় সেবাদাস সরকারগুলো।
সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হ্যাগেল বলেছেন, আমেরিকা যদি সিরিয়ায় হামলা না চালায় তাহলে ইরানের কাছে আমেরিকার মর্যাদা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। তিনি বলেছেন, আমরা (আমেরিকা) সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ব্যাপক সহায়তা দিয়েছি এবং তাদেরকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অফেরতযোগ্য অর্থ দিয়েছি এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বিদ্রোহীদের অস্ত্র সাহায্যও দিয়েছে।
আর এ অবস্থায় আমেরিকা যদি সিরিয়ায় হামলা না চালায় তাহলে ইরানের কাছে আমেরিকার গ্রহণযোগ্যতা বা ভাব-মর্যাদা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
মার্কিন সরকারের কোনো কোনো কর্মকর্তা এটাও বলেছেন যে, সিরিয়ায় হামলা না চালালে ইরানের স্পর্ধা বেড়ে যাবে।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও সিরিয়ায় হামলা চালানোর জন্য পশ্চিমাদের উতসাহ দিয়ে বলেছেন, ইসলাম ব্রিটেনের জন্য হুমকি এবং ইরানের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আদর্শের কারণে পশ্চিমা নেতাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগকে বানোয়াট বলে অস্বীকার করে আসছে। সিরিয়ার সরকারি সেনারা যখন প্রতিটি ফ্রন্টে বিজয়ী হচ্ছিল তখন তাদের মাধ্যমে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা এবং তাও দামেস্কে অবস্থিত জাতিসংঘের দপ্তরের খুব কাছেই ব্যবহার করার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না বলে নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা উল্লেখ করছেন।
সাধারণত পরাজিত বা দুর্বল পক্ষই এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হাতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে এবং জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্টে তা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকাসহ পশ্চিমা সরকারগুলো ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সেবাদাস সরকারগুলো এ ব্যাপারে নীরব থেকেছে।
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হাতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনাসহ সম্প্রতি সরকারি সেনাদের হাতে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছে সিরিয়া সরকার। অন্যদিকে বিদ্রোহীরা এ ব্যাপারে জাতিসংঘের তদন্ত টিমের তদন্ত কাজে আগেও যেমন বাধা দিয়েছে, বর্তমানেও বাধা দিয়ে যাচ্ছে বলে খবর এসেছে।
রাশিয়াও বলেছে যে, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সঙ্গে বিদেশী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোসহ বিদ্রোহীরাই জড়িত। মস্কো বলেছে, বিদ্রোহীদের এলাকা থেকে তাদেরই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে রাসায়নিক অস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় এবং এ ব্যাপারে স্যাটেলাইট থেকে তোলা প্রামাণ্য ছবিও রাশিয়ার কাছে রয়েছে।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে ডেইলি মেইল বলেছিল, পাশ্চাত্য সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কাছে রাসায়নিক অস্ত্র দিয়েছে এবং এই অস্ত্র ব্যবহারের পর তার দায় সিরিয়ার সরকারের ওপর চাপানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আমেরিকা ও তার মিত্ররা।
আমেরিকার যুদ্ধবাজ কর্মকর্তারা বলছেন, মানবিক কারণে তথা মানব-প্রেমের উতসাহ নিয়েই তারা নাকি সিরিয়ায় হামলা চালাতে চান। কেরি আর ওবামা বলছেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
কিন্তু গত প্রায় তিন বছর ধরে সিরিয়ায় লেলিয়ে দেয়া নানা দেশের ছেড়ে দেয়া ফাঁসির আসামীসহ আলকায়দার বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসীদের হাতে পাশবিক কায়দায় বিপুল সংখ্যক বেসামরিক সিরিয় নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুদের হত্যাকাণ্ড এবং সেসবের ভিডিও দৃশ্য প্রচারিত হওয়ার ব্যাপারে তারা মুখ খুলছেন না। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইয়েমেনে আলকায়দাকে দমনের নামে এই আমেরিকাই ড্রোন হামলা চালিয়ে বহু নিরপরাধ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে। এমনকি মার্কিন ড্রোন ও বিমান বিয়ের আসরে বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করছে নিরপরাধ বেসামরিক জনগণকে।
ইরাকের আবুগারিব ও গুয়ান্তানামো বন্দী শিবিরে মার্কিন বর্বরতা এবং জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণসহ ভিয়েতনামে মার্কিন সেনাদের হাতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের রেকর্ডধারী মার্কিন সরকার ইরাকের হালাবজায় সাদ্দামের বাহিনীর হাতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার ও এর ফলে ৫ হাজার ইরাকি নিহত হওয়ার ব্যাপারে কখনও তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি। কারণ, তাতে সাদ্দামকে এইসব অস্ত্র সরবরাহকারী খোদ মার্কিন ও পশ্চিমা সরকারগুলোই ফেঁসে যেত।
তাই মানবাধিকারের ব্যাপারে বুশ-ব্লেয়ার-চেনি ও হাল আমলের ‘ওবামা-কেরি’দের মায়াকান্না এবং মানব-দরদের ওয়াজ-নসিহত যে স্রেফ কুম্ভীরাশ্রু ও কপটতা তা সবার কাছেই স্পষ্ট।
আসলে সিরিয়ায় সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়ার ও সম্ভাব্য মার্কিন হামলার মূল কারণ হল, আরব এই দেশটির আসাদ সরকার ইসরাইল বিরোধী ইরান, হিজবুল্লাহ ও হামাসের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছে। ২ বছর আগেও ইসরাইল সিরিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছিল যে ইরান ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন কর। যদি তা কর তাহলে যুদ্ধ হবে না, বরং গোলান মালভূমি ফেরত দেব। কিন্তু সিরিয়া তার নীতিতে অনড় থেকেছে।
আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও কংগ্রেসের সাবেক সদস্য রন পল বলেছেন, মার্কিন সরকার এ কারণেই সিরিয়ায় হামলার পরিকল্পনা করছে যে, দামেস্ক হল ইরানে প্রবেশের দ্বারপ্রান্ত।
তিনি সম্প্রতি মার্কিন টেলিভিশন সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, " পুরো তত্ত্বটাই হল এটা যে আমরা সিরিয়ায় যাচ্ছি, কারণ এই পথেই আপনি ইরানের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন। "
রন পল আরো বলেছেন,
"কেন আমরা তথা আমেরিকা এখন আলকায়দার সমর্থক? আসলে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ও সন্ত্রাসীরা অস্ত্র চাইছে। আলকায়দাসহ এক দল সন্ত্রাসী সিরিয়ায় সক্রিয় রয়েছে। "
মিশরের প্রখ্যাত বর্ষীয়ান সাংবাদিক হাসনাইন হাইকাল সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেছেন,
"এর আগেই সিরিয়ায় এক লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে যাদের বেশিরভাগই হল বেসামরিক নাগরিক, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই শয়তানসুলভ স্নেহ কেন তখন উথলে উঠেনি? এক বৃহত আগ্রাসনের ইচ্ছার মধ্যেই এর উত্তর রয়েছে এবং ইরান ও হিজবুল্লাহসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য হল এই আগ্রাসনের টার্গেট।
"
হাসনাইন হাইকাল এটাও তুলে ধরেছেন যে সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের মোকাবেলায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী যখন সুপরিকল্পিত অভিযানের আওতায় একের পর এক বিভিন্ন অঞ্চলে বিজয় অর্জন করছিল তখনই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সাজানো ঘটনা ঘটিয়ে দামেস্ক সরকারের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহারের অপবাদ প্রচার করা হল।
হাইকাল লিখেছেন: “ সৌদি গোয়েন্দামন্ত্রী বান্দারের (সন্ত্রাসী) সেনারা এবং এ অঞ্চলে ক্ষমতা হারাতে-বসা আমেরিকার পুতুল(সরকার)গুলোর জন্য এমন একটা নাটক সাজানোই দরকার হয়ে পড়েছিল। আর এই সফল নাটক সাজাতে কোরবানি দেয়া হয় বহু মানুষকে যাতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে ক্ষমতায় থাকা আসাদ সরকারকে কোন্ ঠাসা করা যায় । "
ইরানের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কমান্ডার বলেছেন, সিরিয়ায় হামলা চালালে আমেরিকা ঐতিহাসিক পরাজয় বরণ করবে এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্য বিস্ফোরকের গুদামে পরিণত হবে।
তারা আরো বলেছেন, সিরিয়ায় সম্ভাব্য মার্কিন হামলার ফলে ক্ষয়ক্ষতি কেবল মুসলিম দেশগুলোতেই সীমিত থাকবে না।
ক্ষয়ক্ষতি অমুসলিম দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।
সিরিয়া ইরানের সামরিক বা অস্ত্র সাহায্যের মুখাপেক্ষী এমন ধারণার কথাও তারা নাকচ করে দিয়েছেন।
সিরিয়ার আসাদ সরকার ইসরাইল বিরোধী দেশ ও দলগুলোকে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসায় তেহরান-দামেস্ক সম্পর্ক কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেশটির ওপর সম্ভাব্য মার্কিন হামলার ব্যাপারে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য এখানে তুলে ধরা হল:
(সম্ভাব্য) এ যুদ্ধ ইহুদিবাদীদেরকে আগুনের মুখে নিক্ষেপ করবে
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফসের প্রধান মেজর জেনারেল ফিরোজাবাদী বলেছেন, সিরিয়ায় সম্ভাব্য মার্কিন হামলার ফলে ক্ষয়ক্ষতি কেবল মুসলিম সমাজেই সীমিত থাকবে না, বরং যুদ্ধের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমেরিকা ও ব্রিটেনসহ তার সব মিত্ররা এবং বিশেষ করে এই যুদ্ধ ইহুদিবাদীদেরকে আগুনের মুখে নিক্ষেপ করবে।
ফিরোজাবাদী হুঁশিয়ারি দিয়ে আরো বলেছেন, এ অঞ্চলের যেসব দেশ এই অন্যায় যুদ্ধে আমেরিকার সহযোগী হবে তারাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি আরো বলেন, আমেরিকার জনগণ এখন এটা বুঝে গেছে যে, আমেরিকা আলকায়দার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের যে কথা বলে আসছে তা বড় ধরনের মিথ্যাচার।
আমেরিকার জন্য ইতিহাসের শোচনীয়তম পরাজয় ও ইসরাইলের ধ্বংস অত্যাসন্ন
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মুহাম্মাদ আলী জাফরি বলেছেন: আমেরিকা যদি সিরিয়ায় হামলা চালায় তাহলে ইরাক ও আফগানিস্তানের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর মার্কিন পরাজয়ের ডোমিনো বা ধারাবাহিকতা পরিপূর্ণ হবে এবং দেশটি ইতিহাসের শোচনীয়তম পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করবে। তিনি বলেছেন, সিরিয়া হবে আমেরিকার জন্য ভিয়েতনামের চেয়েও ভয়াবহ বধ্যভূমি ও দ্বিতীয় ভিয়েতনাম।
তিনি সম্ভাব্য এই যুদ্ধের উস্কানিদাতা হিসেবে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সিরিয়ায় মার্কিন হামলা অবৈধ এই রাষ্ট্রটিকে প্রতিরোধের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না, বরং এই হামলার অর্থ হবে ইসরাইলের ধ্বংস অত্যাসন্ন ।
যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে সিরিয়ার বাইরেও, তবে সিরিয়া একাই যুদ্ধ করতে সক্ষম
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুসেইন দেহকান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সিরিয়ায় হামলা হলে সংকট সিরিয়ার বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।
তিনি বলেছেন, আমেরিকা যুদ্ধ শুরুর ব্যাপারে নিশ্চিত হলেও শেষ করার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবে না।
ইরান সিরিয়াকে অস্ত্র সহায়তা দেবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, সিরিয়ার জন্য ইরানের বিশেষ কোনো অস্ত্রের দরকার নেই, বিমান-প্রতিরক্ষার অস্ত্রসহ সব অস্ত্র দামেস্কের হাতে রয়েছে।
সিরিয়া হবে আগ্রাসীদের গোরস্তান
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর উপপ্রধান বলেছেন, সিরিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একা নয়। সিরিয়ায় সম্ভাব্য হামলার ফলে গোটা অঞ্চল বারুদের গুদামের মত বিস্ফোরিত হবে এবং সিরিয়ার মুসলিম জাতি সম্মানজনক বা গৌরবময় প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ঐতিহাসিক নিয়মেই তাদের দেশ আগ্রাসীদের গোরস্তানে পরিণত হবে।
বোমা ও অস্ত্র দিয়ে গণতন্ত্র কায়েম হয় না
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর বিমান-সেনাদের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান শাহ সাফি বলেছেন, বোমা ও অস্ত্র দিয়ে গণতন্ত্র কায়েম হয় না, যে সন্ত্রাসীদের দমনের জন্য আমেরিকা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে সেই সন্ত্রাসীদেরই আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছে সিরিয়ায়।
সিরিয়ায় হামলার মাধ্যমে লেবানন, গাজা ও সুদানসহ এ অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোকে নিরাপত্তাহীন করার ইসরাইলি স্বপ্ন বাস্তবায়নের তোড়জোড় চলছে, কিন্তু এই অলীক স্বপ্ন কখনও বাস্তবায়িত হবে না।
ইসরাইল আবারো যুদ্ধ বন্ধের জন্য কাকুতি মিনতি করবে
ইরানের স্বেচ্ছাসেবী গণবাহিনীর প্রধান জেনারেল নাকদি বলেছেন, সিরিয়ার প্রতিরোধ যোদ্ধারা একাই আগ্রাসীদের সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে, ইরানের গণবাহিনীর সাহায্য তাদের দরকারই হবে না এবং ইসরাইল যেখানে সীমিত অঞ্চলের অধিকারী ও অতি-সীমিত অস্ত্রের অধিকারী লেবাননের হিজবুল্লাহ আর ফিলিস্তিনের হামাসের সঙ্গে ৩৩, ২২ ও ৮ দিনের যুদ্ধ শুরু করার পর যুদ্ধ থামানোর জন্য কাকুতি-মিনতি করতে বাধ্য হয়েছিল সেখানে ইসরাইল সিরিয়ার ব্যাপক-বিধ্বংসী ও বিপুল অস্ত্রের মোকাবেলায় আরো ব্যাপক মাত্রায় কাকুতি-মিনতি করতে বাধ্য হবে। ইহুদিবাদীদের মাথায় সামান্য বুদ্ধিও যদি অবশিষ্ট থাকে তাহলে হামলার আগেই তার এইসব পরিণতির কথা ভাবা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
সিরিয়ায় সম্ভাব্য মার্কিন হামলা ফিলিস্তিন মুক্তিকে এগিয়ে আনবে
ইরানের স্বেচ্ছাসেবী গণবাহিনীর প্রধান জেনারেল নাকদি বলেন, সিরিয়ায় সম্ভাব্য মার্কিন হামলা ফিলিস্তিনকে দখলমুক্ত করার পথ সহজ করবে, কারণ, ইসরাইলে হামলার ব্যাপারে ইরানসহ এ অঞ্চলের জাতিগুলো এতদিন ধরে আন্তর্জাতিক নানা দিকের বিবেচনাকে মাথায় রেখে অ্যাকশনে নামতে পারেনি, কিন্তু সিরিয়ায় অবৈধ মার্কিন হামলার ফলে তারা এইসব বিবেচনাকে উপেক্ষা করবে এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে আরো কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে
ইরানের শীর্ষ স্থানীয় সেনা কর্মকর্তার জেনারেল মাসুদ জাজায়েরি বলেছেন, সিরিয়ার জনগণ গত কয়েক বছরে মার্কিন সরকার ও তার স্থানীয় সেবাদাস জাতীয় মিত্রদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ব্যাপক বিজয় অর্জন করেছে।
আমেরিকা যদি সিরিয়ার ব্যাপারে লাল সীমানা অতিক্রম করে তাহলে তাকে কিছু কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, সিরিয়া ইস্যুতে আমেরিকা ভুল করেছে এবং তাকে ভুলের মাশুল দিতেই হবে, ঠিক যেভাবে মাশুল দিতে হয়েছে ইরাক ও আফগানিস্তানে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ, সংসদ স্পিকার আলি লারিজানি, নীতি নির্ধারণী পরিষদের প্রধান হাশেমি রাফসানজানি ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ নেতারাও সিরিয়ায় মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন নিয়মিত। তাদের অনেকেই বলছেন, এ ধরনের হামলার ফলে ইসরাইলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়বে।
রাশিয়া বলেছে, সিরিয়ায় হামলা হলে মস্কো দামেস্ককে অস্ত্র ও মানবিক সাহায্য দেবে।
মস্কো জাতিসংঘের অনুমতি ছাড়া সিরিয়ার ওপর যে কোনো হামলাকে অবৈধ বলেই বিবেচনা করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
লেবাননের হিজবুল্লাহ বলেছে, সিরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন হামলার হুমকি একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্র্রাস। হিজবুল্লাহর সেনারা বহু আগ থেকেই সিরিয়ার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
ইরাকও সিরিয়ায় হামলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে। ইরাকের নুরি আল মালিকির সরকার বলেছে, সিরিয়ায় হামলা হলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
সিরিয়া ছাড়াও ইরাক, ইরান ও লেবাননের শাহাদত-পিয়াসী স্কোয়াডগুলোর হাজার হাজার সদস্য মার্কিন স্বার্থগুলোতে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছে।
এ ছাড়াও ফিলিস্তিনের দখলদার ইসরাইল বিরোধী কোনো কোনো সংগ্রামী গ্রুপ বলেছে, সিরিয়ায় হামলা হলে তারা আসাদ সরকারের পক্ষে যুদ্ধ করবে এবং মার্কিন ও ইসরাইলি স্বার্থে আঘাত হানবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।