আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াত কি নিজেদের সমাজ-দরদী হিসেবে রিব্র্যান্ডিং করতে চাইছে?

যা বুঝি, যা দেখি, যা শুনি এবং যা বলতে চাই

এনজিওরা রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে চেষ্টা করে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এনজিও হতে চেষ্টা করে না। এই বিবেচনায় জামায়াতে ইসলামীর এইডস বিরোধী প্রচারণা দেখে বিষয়টি অনেক বেশি জটিল মনে হচ্ছে। এনজিও বা সিভিল সোসাইটি রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে চায়, বা রাজনৈতিক দল তৈরি করতে চায়, তা বিরাট তত্ত্বকথা ছাড়াও দাবী করা সম্ভব। নোবেল বিজয়ী ইউনুস পর্যন্ত দল বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রশিকার আচার-আচরণে রাজনৈতিক দলের গন্ধ পেয়ে এর প্রধানকে তৎকালীন সরকার জেলে আটকে রেখেছিল। আপদকালীন দুর্ভোগ থেকে মানুষকে বাঁচানো, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সাহায্য, তারপর ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টার পর এনজিও-রা (একে বলা হয় ফোর্থ জেনারেশন এনজিও) উপলব্ধি করে দরিদ্র মানুষ ক্ষমতার ভাগীদার না হলে সত্যিকার বৈষম্য দূরীকরণ হবে না। তারা তখন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়াতে থাকে। পৃথিবী জুড়ে এনজিওরা স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে এনজিওরা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তাদের সদস্যদের প্রার্থী হিসেবেও দাঁড় করাচ্ছে।

এনজিওদের এই পরিবর্তনটি বুঝা যায়, ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামের পরিবর্তনের ধারাটা অস্পষ্ট। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি রাসেলের নতুন ব্লগ শিরোনামের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্নটা তুলছি না। সাদিকের মন্তব্য বা প্রশংসা না পড়লে আমি শিরোনামের পরিবর্তনটা খেয়ালও করতাম না।

সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে গিয়েই হয়তো রাসেল আবিষ্কার করেছে যে জামায়াতে ইসলামী এইডসের জীবাণুর মত, পরিবারের একজনের হলে অন্যদের মাঝেও সংক্রামিত হয়। আমি যে বিষয়ে লিখছি তা আমি প্রথমে খেয়াল করি ব্লগার ধানসিড়ির পোস্টে। রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে ধানসিড়ি এতদিন জামায়াতে ইসলামের প্রশংসা করে বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তার পোস্টে দেখলাম এইডস প্রতিরোধমূলক ধারাবাহিক রচনা। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে ধানসিড়ি অকস্মাৎ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে এরকম পোস্ট দেয়া শুরু করেছেন।

জামায়াতের দলীয় উৎসাহ না পেলে তার সদস্য-কর্মীরা কোনো বিষয়ে এতটা আগ্রহ দেখানোর কথা না। আমার অনুমানটা আরো পাকাপোক্ত হয় যখন আমি এনটিভিতে ইসলামী অনুষ্ঠানের বিশেষ এইডস পর্বের খবর পাই। ইসলামী জ্ঞানের পাশাপাশি তারা এইডস বিষয়কও তথ্য বিতরণ করছেন। এইডসের সাথে ইসলামের দূরবর্তী একটা সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে, তবে শত সহস্র ঘাতক রোগ থাকতে তারা এইডসের বিষয়ে আগ্রহী কেন তা বুঝাটা জরুরি। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি সপ্তাহে বিপুল মানুষ নিহত ও আহত হয়।

সে সংখ্যা এইডসের চেয়ে কয়েক শ'গুণ বেশি হবে। তবে জামায়াত কেন ইলিয়াস কাঞ্চনের মত নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করে না। কেন এইডস? কেন ধানসিড়ি চুমুর রকমফের ও ফ্রেঞ্চ কিসের ঝুঁকি নিয়ে এত চিন্তিত? বাংলাদেশবাসীরা কি হঠাৎ করে ফরাসী-প্রেমিক হয়ে গেছে? গালে গালে ঘষছে যার-তার আর ফ্রেঞ্চ চুমু দিচ্ছে যত্রতত্র? এনজিও হওয়ারও অনেক তরিকা আছে। সমাজসেবারও অনেক ধাপ আছে। জামায়াত সেরকম কিছু কর্মকান্ডের সাথে জড়িতও।

তবে এইডস নিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাটি আমার কাছে ভিন্ন মাত্রায় ধরা পড়ে। তারা কি আসলে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নিজেদের ভিন্ন পরিচয় তুলে ধরতে চাচ্ছে? পশ্চিমা ডেফিনিশনে সমাজদরদী হিসেবে নিজেদের ইমেজ গড়তে চাচ্ছে? । মধ্যপ্রাচ্যের টাকায় তারা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চালাতো এমন দুর্নাম থেকে নিজেদের তারা কি মুক্তি পেতে চাইছে? (অথবা অব্যয়িত অর্থের বাকী চালান ব্যবহারের উপায় নেই দেখে এসব নতুন প্রচার-প্রোপাগান্ডা। ) সোজা কথায় মনে হচ্ছে জামায়াত নতুন করে নিজেদের ব্র্যান্ডিং করছে। সেই সাথে তারা এটাও প্রকাশ করতে চাচ্ছে যে, সমাজসেবা সম্পর্কে তাদের ধারণা পশ্চিমা দেশগুলোর ধারণারই অনুরূপ।

কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো তারা পশ্চিমা ডোনার প্রতিষ্ঠানের কাছে সমাজসেবার প্রকল্পের জন্য অর্থ চাওয়া শুরু করবে। নাকি ইতোমধ্যে তারা পাওয়া শুরু করেছে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.