আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃত নবাব আনু ভাই

বাংলা চলচ্চিত্রের পর্দা-নবাব আনোয়ার হোসেনের বিদায় ক্ষত এখনো দগদগে। ভক্তদের মতো তার দীর্ঘদিনের কর্মজীবনের সঙ্গীরাও শোকে কাতর। কোনো কোনো বিদায় মেনে নেওয়ার মতো নয়। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তার দুই ঘনিষ্ঠজন। পাঠকের জন্য তা প্রকাশ করা হলো-

আনু ভাই নেই, আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, এ কথা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার দুর্ভাগ্য, প্রিয় মানুষটিকে শেষবারের মতো দেখতেও পারলাম না। শুক্রবার রাতে ব্যাংকক থেকে ফিরেছি। ওখানে থাকতেই এ দুঃসবাদটি পেলাম। যখন এসে পেঁৗছলাম ততক্ষণে সব শেষ। এখন তার জন্য শুধু দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। সৃষ্টিকর্তা তাকে ভালো রাখবেন,তার আত্দা শান্তিতে থাকবে এবং আনু ভাইয়ের শোক সন্তপ্ত পরিবার যেন এই শোক সইবার শক্তি পায় এ দোয়াই করছি।

কখনো কল্পনাও করিনি আনু ভাইয়ের সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলা চলচ্চিত্রে কাজ করব। তাও আলেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আমার মতো নতুন একজন অভিনেত্রীকে খান আতা ভাই নির্বাচন করবেন এটি অবিশ্বাস্য। আনোয়ার ভাই জাঁদরেল অভিনেতা। তার সঙ্গে অভিনয় করার সাহস সবার ছিল না। বিশেষ করে আমার মতো নতুন একজন অভিনয় শিল্পীর পক্ষে তো নয়ই। এটা ছিল স্বপ্নের মতো। আমি রীতিমতো বেঁকে বসলাম। আতা ভাই তো রেগে আগুন। আনু ভাই এগিয়ে এলেন, বললেন কোনো সমস্যা হবে না, আমি তো আছি, তুমি পারবে। তার মতো এত বড় মাপের অভিনেতার অভয়ে আমার মধ্যে আস্থা ও সাহস, দুই-ই সঞ্চিত হলো। প্রবল উৎসাহে মনপ্রাণ উজাড় করে কাজ করলাম। শুটিংয়ের সময় আনু ভাই এতটাই সহযোগিতা করলেন যে আমি বুঝতেই পারিনি কখন কাজ শেষ হয়ে গেছে। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর একবার এক মজার ঘটনা ঘটল। কঙ্বাজারে শুটিংয়ে গেলাম। হঠাৎ এক লোক এসে আমাকে বললেন আপনি এখনো অভিনয় করছেন? তার কথায় হতচকিত হয়ে গেলাম। জানতে চাইলাম এ ধরনের প্রশ্ন কেন। তিনি বললেন আপনার জন্য তো আলেয়া চরিত্রই যথেষ্ট। আর কোনো চরিত্রের প্রয়োজন নেই। তিনি দুটো অনুরোধ করলেন আমাকে। একটি হচ্ছে- আমি যেন আর কোনো চরিত্রে অভিনয় না করি এবং অন্যটি হলো বয়স ধরে রেখে আজীবন যেন আলেয়া হয়েই থাকি। তার কথায় গর্ববোধ করলাম। মনে হলো সত্যি আলেয়া হতে পেরেছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধুই আনু ভাইয়ের অকৃপণ সহযোগিতার জন্য। বাস্তবের সাধারণ আনোয়ারা বুঝি পর্দায় অসাধারণ আলেয়া হয়ে গেছি। আজো নিজের কাছে নিজের অভিনীত আলেয়া চরিত্রটি শ্রেষ্ঠ চরিত্র হয়ে আছে।

আনোয়ার ভাই সম্পর্কে বলি, চলচ্চিত্রটিতে তার দক্ষ অভিনয় দেখে বুঝলাম সত্যিই তিনি নবাব। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর মঞ্চে প্রায় আটশতবার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আলেয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছি। প্রতিবারই নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতেন তিনি।

একবার এক চলচ্চিত্রের কাজে আমি, আনোয়ার ভাই ও মুস্তাফা ভাই আউটডোরে গেলাম। এক লোক এসে আমাকে আর মুস্তাফা ভাইকে সালাম দিলেন আর আনোয়ার ভাইকে পায়ে ধরে সালাম করলেন। মুস্তাফা ভাই কিছুটা অবাক হয়ে লোকটির কাছে জানতে চাইলেন আনোয়ার ভাইকে পায়ে ধরে সালাম করলেন কেন? লোকটি জোর দিয়ে বললেন- তিনি তো নবাব সিরাজউদ্দৌলা। নবাবকে তো পায়ে ধরেই সালাম করতে হবে। বুঝলাম, আনোয়ার ভাই সত্যিই দর্শকের মনে প্রকৃত নবাব হয়ে গেছেন।

এ তো গেল সিরাজউদ্দৌলা প্রসঙ্গ। আনু ভাইয়ের সঙ্গে কম করে হলেও অর্ধশত চলচ্চিত্রে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। প্রতিটি কাজেই তার অসাধারণ দক্ষতা সত্যিই শেখার মতো। তিনি নিজেই পূর্ণাঙ্গ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কখনো রাগ করতে দেখিনি তাকে। মানুষ যে কতটা অমায়িক, ভদ্র, নম্র হতে পারে আনু ভাইকে না দেখলে কখনো তা বুঝতে পারতাম না।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.