আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অটোরিকশা

সুন্দরী বালিকাদের যত্ন করে কামড়াই

অটোরিকশার অটো উপসর্গ কিসের ইঙ্গিত? অটোক্রেসি? আমার মন বিশ্বাস করতে চায়, নিশ্চয়ই কোন নিয়মকানুন আছে যেগুলো এঁদের মেনে চলার কথা। যেমন, মিটার অনুযায়ী ভাড়া রাখতে হবে, যাত্রী যেখানে যেতে চায় সেখানে যেতে হবে (রুট পারমিটের আওতা মেনে), ইত্যাদি। তবে যেহেতু এসব নিয়ম না মানলেও কোন কতর্ৃপক্ষ কিছু বলে না, কাজেই এসব নিয়ম মেনে চলার কোন গরজ এনারা দেখান না। ঢাকা শহরে এনারা দুর্দান্ত অটোক্র্যাট একেকজন। মর্জি হলে যান, না হলে ঝিমান।

তবে এই সিয়েঞ্জিয়েরো-দের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এনারা চালান "মহাজন" এর "গাড়ি"। মহাজন ভদ্রলোক লাভের আশায় সোয়া এক লাখ টাকার অটোরিকশা কিনেছেন চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে। সেই টাকা তাঁকে উসুল করতে হবে। কাজেই দিনপ্রতি তিনি তাঁর সিয়েঞ্জিয়েরোদের কাছ থেকে আদায় করেন ছয়শো টাকা।

দিনে দশ ঘন্টার শিফট চালান এক এক জন সিয়েঞ্জিয়েরো, অর্থাৎ 600 মিনিট। মিনিট প্রতি তাঁদের দায় 1 টাকা। ঢাকা শহরে জ্যামের কারণে গাড়ির গতি ঘন্টায় 12 কিলোমিটার (আমার হিসাব, আপনাদের হিসাবে কমবেশি হতে পারে)। কিলোমিটার পিছু ভাড়া ওঠে অটোরিকশায় 5 টাকা। তার মানে মিনিটপ্রতি 1 টাকাই ভাড়া ওঠে তাঁদের।

শুধু মহাজনের দায় মেটাতেই তাহলে টানা দশ ঘন্টা অটোরিকশা চালাতে হবে তাঁদের। এই দশঘন্টার মধ্যেই তাঁদের সিয়েঞ্জি রিফিল নিতে হয় পঞ্চাশ টাকার (গড়ে এক ঘন্টা সময় লেগে যেতে পারে পাম্পিং স্টেশনে), ট্রাফিক কর্তার ক্ষুধার্ত থাবায় গুঁজে দিতে হয় কিছু। দশ ঘন্টার মধ্যে ভাত-চা-সিগারেটের জন্য সময় ব্যয় করতে হয়। তারপর নিজের আয়ের ব্যাপার তো আছেই। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, সিয়েঞ্জির দাম বেড়েছে, মহাজন আর ট্রাফিক কর্তার খাঁই বেড়েছে, কাজেই সিয়েঞ্জিয়েরোদের কৌশল পাল্টাতে হয়েছে জীবনের মুখোমুখি হবার জন্যে।

তাঁরা মিটারের রিডিঙের চেয়ে দশ থেকে বিশটাকা বেশি দাবি করেন, অথবা মিটার পদ্ধতিই বাতিল করে বাংলা পদ্ধতিতে ভাড়া দাবি করেন, জ্যাম এড়িয়ে নিজেদের পছন্দমতো হালকা রাস্তায় চলেন। মাঝে মাঝে আমার মতো যাত্রীদের সাথে বচসা হয়, তারা অটোরিকশা উল্টে দেয়, পিটানোর চেষ্টা করে, অটোরিকশার উইন্ডশিল্ড ভেঙে দেয়। অনেক হ্যাপা। পরিস্থিতি এমন হতো না, যদি নিয়ম অনুযায়ী মহাজনের দল দিনপ্রতি 300 টাকা করে জমা রাখতো। কেন তারা সেটা করছে না? ঐ যে, সাড়ে চার লাখ টাকার অটোরিকশার পেছনে আপফ্রন্ট কস্ট উসুল করার জন্য।

কেন তারা সোয়া এক লাখ টাকার জিনিস সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে কিনলেন? মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা অর্থনীতির চাহিদা ও সরবরাহ দিয়ে এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন হ্যালো মিনিস্টার অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে কারো ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না সরকার। আর সীমিত সরবরাহের বিপরীতে (ঢাকায় দশ হাজারের বেশি অটোরিকশা রেজিস্টার করা যাবে না) এই নির্দিষ্ট মডেলের অটোরিকশাটির চাহিদা ছিলো সাংঘাতিক, তাই এর বাজারমূল্যের রকেটায়ন ঘটেছে। দুষ্টু কিছু সাংবাদিক বেফাঁস কিছু প্রশ্ন করে মন্ত্রীমহোদয়কে বিব্রত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলো অবশ্য (নিঃসন্দেহে এরা আওয়ামী লীগ তথা ভারতের দালাল, এবং দেশের উন্নয়নের জোয়ারের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দেশের ক্ষতির চেষ্টায় সদা ব্যস্ত), অটোরিকশার পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের সাথে মন্ত্রীর টেবিলঢাকা যোগাযোগের কথা বলতে চেয়েছিলো, মন্ত্রীমহোদয় করুণ হুঙ্কার দিয়ে তাদের নিরস্ত করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। তিনি বলেছেন, তিনি যে কী তা জানেন একমাত্র আল্লাহ, আর জানে জনগণ।

ঠিক ঠিক। তবে মহাজনেরা 300 টাকার বেশি জমা আদায় করতে পারবে না, এমন একটা নিয়ম নাকি আছে। সেটি পালনে সরকার কাউকে বাধ্য করেছে, কিংবা সেটি অমান্য করায় কাউকে শাস্তি দিয়েছে, এমন কোন সংবাদ আমরা কাগজে পড়িনি। নিরুপায় মধ্যবিত্ত অটোরিকশার পেছনে প্রতিদিন যে পরিমাণ উৎকণ্ঠা, পরিশ্রম আর মানসিক অবসাদে ভোগে, তার বাজার মূল্য ক্যালরি আর ভিটামিনে হিসাব করলে 50 টাকার কম হবে না (এটাও আমার হিসাব, আপনাদের সাথে মিলতে না-ও পারে)। ঢাকা শহরে দশ হাজার অটোরিকশা প্রতিদিন ব্যবহার করে কমপক্ষে দুই লক্ষ যাত্রী, এই ভোগান্তির মূল্য তাহলে প্রতিদিন এক কোটি টাকা।

এই ক্ষতি রোধ করতে সরকারের কোন প্রচেষ্টা আমরা দেখি না। এর দায় বা দায়িত্ব যে সরকারের, সেটা স্বীকার মাত্র করেননি মাননীয় মন্ত্রী। তিনি অর্থনীতিশাস্ত্রে ব্যাপক দখল রাখেন, তবে গণমনস্তত্ত্বে সম্ভবত একটু কাঁচা। বিরোধী দল এই ইসু্যটিতে টোকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তারাও জনগণের ভোগান্তি কমানোতে আগ্রহী, এমন কোন নমুনা আমরা দেখি না। কিছুদিন আগে একটা নামকাওয়াস্তে বিক্ষোভ-ধর্মঘট করেছে সিয়েঞ্জিয়েরোবৃন্দ।

কোন ফল মেলেনি। এই সরকারের কাছে পাঁচ বছর ধরে চেয়ে চেয়ে আমরা হতাশ, এবারের মতো তাঁদের বিদায়ের সময়ও চলে এসেছে। তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি এ ব্যাপারে কিছু করতে পারেন? সেই এখতিয়ার কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কান্ডারীদের আছে? অর্থনীতি শিখে শিখে আমরা ক্লান্ত। প্রতিদিন এই হ্যাপা আর ভালো লাগে না। অর্থনীতির পাশাপাশি স্থানীয় সমাজনীতিও আমরা অল্প শিখেছি, তার মধ্যে একটি জনপ্রিয় বাক্য হচ্ছে, মাইরের উপরে ঔষধ নাই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.