আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি মেডিকেল সাইন্স ফিকশান-- পরিচয়



১ এতদূর পৌঁছতে কাঠ খড় নেহাত কম পোড়াতে হয় নি। সার্ভার হ্যাক করা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাটের সিকিউরিটি গার্ড কে ঘুষ দেয়া। অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছেছি। গন্তব্য এখন আমার সামনে। সত্যি বলতে কি এর পরে কি করব সে ব্যাপারে কোন প্ল্যান করিনি।

আসলে ভেবেছিলাম নিজেকে ইন্ট্রোডিউস করা তেমন কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু হচ্ছে। আসলে শুধু নিজেকে ইন্ট্রোডিউস করার ফর্মুলা খুঁজে পাচ্ছি না, সঙ্গে এথিক্যাল একটা ব্যাপারও আছে। ব্যাপারটা যদি শুধু ইন্ট্রোডিউস করাই হত তাহলে সমস্যা হত না। ‘আমি আমেরিকা থেকে এসেছি শুধু তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে’, কথাটা বেজায় খটমটে।

শুনে এই মেয়ে নিঃসন্দেহে আমার দিকে চোখ গোল গোল করে তাকাবে। হয়তো প্রণয় ঘটিত চেষ্টা ভাববে। আর আমার সঙ্গে খুব বেশী আলাপ করতেও হয়তো চাইবে না। আর পুরো ঘটনাটা বলাটাও খুব আনএথিক্যাল হবে। খুব যদি সমস্যায় পড়ি তখন হয়তো বলব।

তবে চেষ্টা থাকবে না বলে সুন্দর একটা বন্ধুত্ব তৈরি করে ফেরত যাওয়া। সমস্যা সেখানেই। কি বলব? খুব বিশ্বাসযোগ্য একটা কাহিনী বানানো জরুরী। যেখানে ইমোশান থাকবে। ফেসবুকে ছবি দেখে পছন্দ হয়েছে তাই বন্ধুত্ব করতে চাই।

আর সেজন্য সুদুর আমেরিকা থেকে এখানে এসেছি। নাহ, বেশী বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। যা মনে হচ্ছে এযাত্রা কেবল ‘হাউ ডু ইউ ডু’ এর বেশী সম্পর্ক এগোবে না। আমাকেও হয়তো ‘নাইস টু মিট ইউ’ বলে চলে যেতে হবে। --আপনার সঙ্গে কি একটু কথা বলতে পারি? অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম।

কাহিনীর এই নতুন মোড় একেবারেই অপ্রত্যাশিত। কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম। --সিওর। --কি কথা বলতে এসেছি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন? এবার বড় সড় ধাক্কা খেলাম। এই মেয়ে কি তবে সব জানে? অসম্ভব।

সার্ভার হ্যাক করা এতো সোজা না। নেহাত এই লাইনে আমি এক্সপার্ট বলেই পেরেছি। এই মেয়েও কি তবে? নাকি অন্য কোন ভাবে জেনেছে? সেটাও তো সম্ভব না। অন্য কাউকে তথ্যটা জানানোর কথা না। পরে ভাবা যাবে।

এখন উত্তর দেয়া দরকার। --আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার ওপর কোন কারণে আপনি ক্ষিপ্ত। আমি কি ঠিক বলছি? --বসতে পারি? হেসে ফেললাম। বললাম, --আপনার ইউনিভার্সিটি, আপনাদের ক্যান্টিন। আমিই বরং বাইরের লোক।

--স্টিল, কার্টেসি বলে একটা কথা আছে। কথাবার্তায় কেমন একটা হালকা ভাব এসেছে। ভাবটা বাচিয়ে রাখা দরকার। খুব সিরিয়াস টাইপ সিচুয়েশান হয়ে গেলে সমস্যা হয় যাবে। এদিকে সুন্দর ইমোশানাল গল্প এখনও ঠিক করতে পারিনি।

কি বলব ভাবছি। নিজের পরিচয় দিয়েই শুরু করি --আমি রোহিত। রোহিত রায়। --আমি অনামিকা। --নাম বলতে চান না? না সত্যিই নাম অনামিকা।

--কি ব্যাপার? আবার সিরিয়াস টার্ন নিচ্ছে। মেয়েটা রেগে আছে কেন? আমার অপরাধই তো খুঁজে পাচ্ছি না। এব্যাপারটার ফয়সালাই আগে করা দরকার। বললাম, --আমার মনে হয় কোথাও কিছু একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে। --তো রিয়েল আন্ডারস্ট্যান্ডিং টা একটু ক্লিয়ারলি বলবেন? --দেখুন, কোন কিছুই আমার বলতে আপত্তি নেই।

স্পেসিফিক্যালি কি জানতে চান, বলুন। আমি বলছি। --বেশ। সোজাসুজি জিজ্ঞেস করছি এবং একবারই জিজ্ঞেস করব। আমাকে ফলো করছেন কেন? ২ আমার জন্ম পরিচয় আজকে জানতে পারলাম।

বড় সড় গোছের একটা ধাক্কা। তবে অবাক হলাম বাবার, মানে আমাকে প্রতিপালন করা বাবার, মহানুভবতা দেখে। এই পঁচিশ বছরে একবারও বুঝতে পারিনি তিনি আমার আসল বাবা না। এই ভারতীয় বাঙ্গালী ফ্যামিলিটি যে পুরোপুরি আমার না, এমনটা কখনও মনে হয় নি। আমাদের সম্পর্কে একটু ভালো ভাবে বলি।

আমরা এখন ইউ এস এ তে সেটলড। বাবা মা একসময় কলকাতা থাকতো। পরে পড়াশুনার সুবাদে এখানে আসা। এরপরে চাকরীর সুবাদে এখানে থেকে যাওয়া। একসময় স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাওয়া।

তবে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে বাঙ্গালীয়ানা ধরে রাখার। আমিও তাই এক টিপিক্যাল বাঙ্গালী স্টাইলেই মানুষ। বাসায় বাংলা বলা অনেকটাই বাধ্যতামূলক ছিল। উদ্যোগটা সম্ভবতঃ বাবার। বিশেষভাবে অপছন্দ করতেন বাসায় ইংরেজীতে কথা বলা।

দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবার চেষ্টাও চলত। বছর, দুবছরে কলকাতা যেতাম। আত্মীয় স্বজন আছে ওখানে। বাবার তরফের, মায়ের তরফের। দেখা সাক্ষাৎ হত।

তবে দাদার বাসায় যেতে খুব ভালো লাগতো না। কেন যেন মনে হত আমি ওদের কেউ না। খুব আনএক্সপেক্টেড কেউ তা পদে পদে টের পেতাম। এদিক দিয়ে বরং নানার বাসা অনেক আন্দন্দের ছিল। ওখানেই থাকতে ভালো লাগতো।

তবে ওখানে থাকা হতো কম। একটু বড় হওয়ার পরে বিভিন্ন ছুতোয় চেষ্টা করতাম না যাওয়ার, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হত না। একসময়, সব গ্র্যান্ড প্যারেন্ট মারা গেলেন। ওখানে যাওয়াও কমে আসলো। আমরা অনেকটা এখানকার মানুষ হয়ে গেলাম।

এখন পাঁচ বছরেও যাওয়া হয় না। কলকাতার আমার বাবার তরফের আত্মীয়দের ব্যবহারের কারণ তখন বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি। বাবা উদারতা দেখালেও তাঁরা দেখাতে পারেন নি। তাঁদের কাছে আমি আন এক্সপেক্টেডই ছিলাম।

কারণ আমার শরীরে তাঁদের বংশের রক্ত ছিল না। আজ মনে হচ্ছে নিজের অজান্তেই আমার সেই অ্যাডপ্টেড আত্মীয়রা আমার একটা উপকার করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, রক্ত কি জিনিস। দারুণ একটা আগ্রহ কাজ করছে আমার রক্তের সন্ধান বের করার। ঘটনার শুরু কিছুদিন আগে।

মা’র ক্যান্সার ধরা পড়ল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হোল পরে পুরনো সব রেকর্ড। এখানে যেহেতু সব যত্ন করে রাখা হয় তাই আমার জন্ম সংক্রান্ত তথ্যও ছিল। এসব তথ্য এতদিন যত্ন করে রেখে দেয়া হলেও এখন সব এক জায়গায় জড় করা হয়েছে। মায়ের কি অবস্থা, চিকিৎসা কি দেয়া হবে, তাতে মায়ের কি অবস্থা হবে এইসব আমাদের ডেকে বোঝানো হল।

চিকিৎসক সাহেব মা’র সঙ্গে প্রথমে, পরে পুরো পরিবারের সঙ্গে কাউন্সিলিং এ বসলেন। সেখানেই আমার জন্ম সম্পর্কে কিছুটা জানলাম। পরে বাবা নিজেই ডিটেইলস জানালেন। চিকিৎসা মোটামুটি ভালোই হল। মা এখন অনেকটাই সুস্থ।

এই ফাঁকে আমি কিছু কাজ করেছি। কম্পিউটারে আমার যা জ্ঞান তাতে কোন হাসপাতালের সার্ভার হ্যাক করা আমার জন্য কোন সমস্যা না। যে হাসপাতালে আমার ভ্রূণ তৈরি হয়েছিল তাঁর খবর মায়ের ফাইল ঘেঁটে আগেই পেয়েছি। আমার কাজ ছিল খুঁজে বের করা আমার আসল বাবা, বা বলা যায়, স্পার্ম ডোনার বাবা কে খুঁজে বের করা। সেই কাজটা করতে সময় লাগে নি।

বাংলাদেশের এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী আমার বায়োলজিক্যাল বাবা। তিনি আর এখন বেঁচে নেই। তাঁর নামে সেখানে কিছু ইন্সটিটিউট, হাসপাতাল আছে। তথ্য গুলো জেনে আমার খুব উপকার হয়তো কিছু হল না। কিংবা হয়তো কিছুটা জেনারেল নলেজ বাড়ল, এই যা।

আরও কিছু জানা যায় কি না এই ভেবে প্রায়ই ইন্টারনেটে খোঁজ করতাম। একদিন চিন্তাটা মাথায় আসলো। হঠাৎ আমার সেই বাবা স্পার্ম ডোনেট করতে গেলেন কেন? উত্তর পেতে দেরি হল না। সেই হাসপাতালের ওয়েব সাইটেই পেয়ে গেলাম। ওরা একটা প্রোজেক্ট নিয়েছিল।

‘স্পার্ম ব্যাংক’ তৈরির। যেসব কাপল এর স্পার্ম দরকার তাঁরা যেন মেধাবী কিংবা স্বনামধন্য কাউকে পান। উদ্যোগ খারাপ না। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্পার্ম জোগাড় করা হয়। কোথাও কিনে কোথায় ডোনেট।

আমার বাবার যেহেতু বাঙ্গালী সন্তান চাই, তাই একজন বাঙ্গালী ডোনার ছিল তাঁর চয়েজ। এমন সময় চিন্তাটা মাথায় আসলো। তাইতো? এটা আগে কেন মাথায় আসেনি? খুঁজতে শুরু করলাম। ওদের সার্ভার তো এখন আমার হাতের মুঠোয়। খুঁজে পেয়ে গেলাম।

খুব বেশী নেই। শুধুমাত্র একজন। যার শরীরে বইছে একই রক্ত। সে আছে বাংলাদেশে। সেই থেকেই আমার মন ছটফট করছে।

একটি বার দেখার জন্য। শুধু ভয় একটা। সে কিভাবে নেবে। সে কি জানে? যদি না জেনে থাকে? তবে তাকে জানানো টা কি ঠিক হবে? ঠিক করলাম যাব। তবে তাকে না জানিয়ে তাঁর সঙ্গে পরিচিত হয়ে আসবো।

কিন্তু কিভাবে? এখনও জানি না। তবে আমাকে পারতেই হবে। পরিচিত হতেই হবে আমার সেই ভাই বা বোনের সঙ্গে। ৩ --আমি আমেরিকা থেকে এসেছি। --শুনছি।

বলতে থাকুন। --আর আপনার সঙ্গে পরিচিত হতেই এসেছি। --কোন বিশেষ কারণ? --জ্বী। তবে সেটা বলার আগে আমি আপনার বাবা মার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। --দেখুন আপনি কেন এসেছেন, আমি জানি না।

তবে গত কয়েকদিন যা করেছেন, তা রীতিমত আপত্তিকর। আমি খুব ভালোভাবে আপনাকে সাবধান করতে এসেছি। এবার আমি রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম। এই কয়দিন তেমন কিছুই তো করিনি। ওয়েবসাইট হ্যাক করে যে ঠিকানা পেয়েছিলাম সেই ঠিকানায় গিয়ে কেবল জানতে চেয়েছি, ভদ্রলোক কোন ফ্ল্যাটে থাকে আর তাঁদের কয় ছেলে মেয়ে।

আর একদিন সকাল থেকে অপেক্ষা করেছিলাম মেয়েটাকে দেখার জন্য। এর মাঝে অন্যায় কি করলাম বুঝতে পারছি না। বললাম, --আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? --আপনার জন্য আজকে আমাদের ফ্ল্যাটের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরী গেছে। --হায় হায়, ওর তো কোন দোষ নাই।

--দোষ টা কার তাই তো জানতে চাচ্ছি। --দেখুন। আমি শুধু আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে বাংলাদেশে এসেছি। আর আমার কাছে আপনাদের ফ্ল্যাটের ঠিকানা ছাড়া আর কিছু ছিল না। আর আমি এও জানতাম না আপনি ছেলে না মেয়ে।

ঐ সিকিউরিটি গার্ডকে শুধু বলেছিলাম আপনাকে চিনিয়ে দিতে। --সেখানেই তো প্রশ্ন। আপনি আমাদের বাড়ীর ঠিকানা কোথা থেকে পেলেন। আর কেন হঠাৎ আমার সঙ্গে পরিচিত হতে চাইলেন। এই প্রশ্নের উত্তর এখনও ঠিক করিনি।

তবে পরিস্থিতি এখন বেশ ঘোলাটে হয়ে গেছে। বিশ্বাসযোগ্য কিছু না বলতে পারলে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। কি করব ভাবছি। বললাম, --আমার ওপর কি একটু বিশ্বাস রাখা যায়? -- রাখা কি উচিৎ? --দেখুন আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য নেই। আই জাস্ট কেম টু মিট ইউ।

অ্যান্ড দ্যটস অল। মেয়েটা বেশ খানিক্ষন এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল, এরপর খুব ঠাণ্ডা গলায় বলল, --আপনি এভাবে বলবেন না, এই তো? ৪ এরপর অনেক ঝড় ঝাপটা গেল। সেদিন রাতে পুলিশ এসে আমাকে অ্যারেস্ট করল। লক আপে থাকলাম। পুলিশ কোন কারণ জানালো না।

শুধু বলল ওপরের নির্দেশ আছে। আমি আমেরিকান নাগরিক শুনে একটু বোধ হয় ভয় পেল। তারপর জানালো, আপনি পুলিশের ডিজির বন্ধুর মেয়েকে কেন ফলো করছিলেন? কে পাঠিয়েছে আপনাকে? কোন নাশকতার প্ল্যান আছে কি না? বুঝলাম বেশ প্যাচে পড়েছি। কাল হয়তো ইন্টারোগেশান হবে। আমাকে ফাঁসাতে হয়তো আমার কাছে কোকেন পাওয়া গেছে এমন কিছু বলবে।

ফোনও কেড়ে নিয়েছে। ফলে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। এমন সময় থানায় একটা ফোন আসলো। পরিস্থিতি হঠাৎ করে পাল্টে গেল।

থানার এক সিপাহী এসে আমার লোক আপের তালা খুলে দিল। আপ্যায়ন করে বাইরে চেয়ারে বসতে দেয়া হল। --আপনাকে নিতে এখুনি উনারা আসবেন। --কে? --তা তো জানি না। ডিজি সাহবে শুধু বললেন, আপনাকে নিতে আসছে।

অবাক লাগলো। এতো হঠাৎ করেই অ্যারেস্ট হয়েছিলাম যে কাউকেই কিছু জানাতে পারিনি। আমেরিকায় বাবাকে একটা ফোন করতে পারলে হয়তো বেশ কিছু সাহায্য পাওয়া যেত। সেটাও করতে পারিনি। আসলে কি যে করব, তাই তখন বুঝতে পারছিলাম না।

পুলিশ এসে শুধু বলেছিল, --আপনাকে একটু আমাদের সঙ্গে থানায় যেতে হবে। এদেশের নিয়ম কানুন জানি না। ওদের সঙ্গে থানায় আসবার পরে, সোজা লোক আপে ঢুকিয়ে দেয়। আরও জানানো হল, সকালে ডিজি সাহেব আমার সঙ্গে কথা বলবেন। যেন ভালভাবে থাকি।

কাউকে দিয়ে কোন রকম ফোন করাবার চেষ্টা না করি, ইত্যাদি। ভদ্র ছেলের মত বসেছিলাম। হঠাৎ কি এমন হল যে, সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল। হোটেল থেকে কি এম্ব্যসি তে ফোন করেছে? হতে পারে। একজন ইউ এস সিটিজেন কে এভাবে এরেস্ট করেছে, এই তথ্য জানতে পারলে, এমব্যাসি চুপ করে বসে থাকবার কথা না।

তাই হবে হয়তো। ওরাই কি আসছে আমাকে নিতে? এমন সময় আবার ফোন আসলো। --স্যার, উনারা একটু জ্যামে আটকেছেন। এখানে তো স্যার এসি নাই। আপনার হয়তো কষ্ট হচ্ছে।

আপনি চাইলে আমরা আপনাকে হোটেলে রেখে আসতে পারি। আমার অবাক লাগা তখনও কাটছে না। তারপরও এই নরক থেকে মুক্তি পেতে ওদের প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলাম। বললাম, --খুব উপকার হয়। --স্যার কিছু মনে করবেন না।

আমাদেরও তো চাকরী করতে হয়। ওপরের নির্দেশ না মেনে উপায় থাকে না। এখন আর এসব ক্ষমা পর্ব শোনার ইচ্ছা নেই। শুধু বললাম, --একটু তাড়াতাড়ি যেতে পারলে, রেস্ট নিতে পারতাম। --তা তো অবশ্যই।

সারারাত অনেক কষ্ট হয়েছে আপনার। এক্ষুনি ব্যবস্থা করছি। এরপরে হোটেলে ফিরে এলাম। ঘরের অবস্থা বেশ বিশ্রী। আমার অবর্তমানে ঘরের বেশ ভালো রকম সার্চ হয়েছে।

তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে আমার কাছে কোন বোমা কিংবা কোকেন পাওয়া যায় কিনা। এসব এখন আর গোছানোর ইচ্ছা নাই। বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ৫ --আগে বলো নি কেন? আমি তখনও ধাতস্থ হতে পারিনি। তখন কেবল ঘুম লেগে এসছিল।

এমন সময় নক। এতো রাতে কে এসেছে? আবার পুলিশ নাকি? নাহ ওরা তো মনে হয় না আর আসবে। ও, কে যেন আমাকে নিতে আসছে বলেছিল। এমব্যাসির লোক? এতো রাতে আসার কি দরকার। ছেড়ে তো দিয়েছেই।

কালকে আসতো। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললাম। দরজায় দাঁড়িয়ে সেই মেয়েটা, আমার সেই বোন। দারুণ ঝলমলে এক হাসি। সঙ্গে আরও দুই জন।

বোধহয় ওর বাবা মা। প্রশ্নটার মানে তখনও বুঝতে পারিনি। জিজ্ঞেস করলাম। --কি বলিনি? --তুমি যে আমার ভাই। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম।

জানলো কি করে? আমার মনের কথা হয়তো বুঝতে পারলো, বলল, --পরে বলব। এখন সব তল্পি তল্পা গোটাও। আমাদের সঙ্গে চল। এবার সেই ভদ্রলোক এগিয়ে এলন। নিজের পরিচয় দিলেন।

--আপনারা জানলেন কি করে? ওর বাবাকে থামিয়ে দিয়ে মেয়েটা বলল, --বললাম তো, বলবো। এখন আর কোন কথা না। এখন চলো। আর হ্যাঁ আমি কিন্তু তোমাকে ‘ভাইয়া’ ডাকবো আর ‘তুমি’ করে বলবো। ওকে? তুমি চাইলে আমাকে ‘তুই’ করে বলতে পারো।

বুঝলাম এখন আর কিছু বলবে না। আমার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুরো তল্পিতল্পা, ব্যাগ আর কাপড় চোপড় গুটাতে শুরু করলাম। মেয়েটাও হেল্প করতে লাগলো। এমন সময় দেখি আমার ল্যাপটপ টা নেই। --যা, আমার ল্যাপটপ? --ভয় নেই।

ওটা আমার কাছে। জিনিসপত্র গোটাতে গোটাতে হঠাৎ চোখ তুলে তাকাল। দেখতে পেল আমি তখনও ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল। চোখে দুষ্টুমি।

--ঠিক ধরেছো। দ্যা ল্যাপটপ ডিড ইট ফর মি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.