আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে আইন

বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সংগ্রহমালা

জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে আইন প্রণয়নে জোট সরকার জামাতের প্রচন্ড আপওি। অথচ এধরণের আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দেশের নিরাপওা, স্থিতি ও সংহতির জন্য অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু রাজনীতির নোংরা খেলার কাছে দেশপ্রেম আর জননিরাপওা অতি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ভোরের কাগজে জুলাই মাসের 20 তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অত্যন্ত তথ্যবহুল। এতে বলা হয়, "জঙ্গি উত্থান ঠেকাতে প্রস্তাবিত সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন বর্তমান বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে আর হচ্ছে না।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, জঙ্গি উত্থান ও জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকা, মদদদান, পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতার দায়ে যারা বারবার অভিযুক্ত হচ্ছে সেই জামাতে ইসলামীই এক্ষেত্রে প্রধান বাধা। জোট সরকারের এই প্রধান শরিকের আপত্তির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহকেও পাত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। সারা দেশে জঙ্গিদের একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা, আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি হুমকি, প্রচলিত সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার যে অপতৎপরতা শুরু হয়েছিল তার বিরুদ্ধে কঠোর আইন করার জন্য সরকার তোড়জোড় শুরু করে বেশ আগে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় জঙ্গি কারা_ এই সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো চলে আসায় জামাতসহ ক্ষমতাসীন 4 দলীয় জোটের অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোর আপত্তির মুখে সরকার আর এ মুহূর্তে আইনটি করতে চাচ্ছে না। আইনটি করার জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির মেয়াদ দুদফা বৃদ্ধির পর তৃতীয় দফার সময়ও শেষ।

গত 18 জুলাই মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক না হওয়ায় এ নিয়ে আর বৈঠকে না বসার সম্ভাবনা বেশি। সে েেত্র জোট সরকারের আর মাত্র চার মাস সময়ের মধ্যে এ আইনটি হচ্ছে না এটা এখন প্রায় নিশ্চিত। এদিকে ইসলামি দলগুলোর চাপে সরকার সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন করা থেকে পিছু হটলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতা সংস্থাগুলো চাচ্ছিলো বাংলাদেশে এ ধরনের একটি আইন হোক। দেশে উগ্র ধমর্ীয় বাতাবরণে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে জঙ্গি দমনের জন্য বাংলাদেশেও যুক্তরাষ্ট্রের আদলে কঠোর আইন করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছিল পশ্চিমা কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা। প্রসঙ্গত, গত বছরের 17 আগষ্ট রাজধানীসহ দেশের প্রায় সবগুলো জেলায় একসঙ্গে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উগ্র ইসলামি মৌলবাদী জঙ্গিরা আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামে।

জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশসহ (জেএমজেবি) নানাবিধ নামে দেশে নতুন ধরনের জঙ্গি তৎপরতা শুরু হয়। দেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য জঙ্গিরা সশস্ত্র তৎপরতা শুরুকরে। জঙ্গিরা টার্গেট হিসেবে বেছে নেয় আদালত ও বিচারাঙ্গন, বিভিন্ন মাজার, প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে। 17 আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার পর 3 অক্টোবর একসঙ্গে বোমা হামলা চালানো হয় চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর আদালত অঙ্গনে। 18 অক্টোবর সিলেটে এক বিচারকের ওপর বোমা হামলা চালিয়ে বিচারককে গুরুতর আহত করা হয়।

14 নভেম্বর ঝালকাঠীতে বোমা হামলা চালিয়ে দুজন বিচারককে হত্যা করা হয়। 29 নভেম্বর গাজীপুর আইনজীবী সমিতি ভবনে বোমা হামলা চালিয়ে আইনজীবীসহ হত্যা করা হয় 10 জনকে। এভাবে একের পর এক চলতে থাকে জঙ্গিদের তৎপরতা। ইসলামি শাসন কায়েমের নামে জঙ্গিরা দেশজুড়ে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। জঙ্গি দমনের জন্য সরকার উদ্যোগ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি পাকড়াও শুরুকরে।

কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন ধরনের এই জঙ্গি তৎপরতা দমন ও জঙ্গিদের বিচার করা প্রচলিত আইনে সম্ভব নয়, এ জন্য নতুন আইন করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নির্দেশ দেন জঙ্গি দমনের জন্য নতুন আইন করতে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জঙ্গি দমনের জন্য নতুন আইনের খসড়া তৈরি শুরুকরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত আইনের একটি খসড়া তৈরি করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয় এ আইন করার জন্য ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের এ সংক্রান্ত আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খসড়া চূড়ান্ত করে।

সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রসত্দাবিত সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনের খসড়ার শুরুতেই জঙ্গি ও জঙ্গি সংগঠনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। প্রস্তাবিত আইনে জঙ্গি ও জঙ্গি সংগঠনের সংজ্ঞায় বলা হয়, ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে তাদেরকেই জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করা হবে এবং ধর্মের নামে সংগঠন সৃষ্টি করে জঙ্গি তৎপরতা চালালে এসব সংগঠনকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে। জঙ্গি সন্ত্রাসের সংজ্ঞায় আরো বলা হয়, যে বা যারা ধর্মের নামে খুন, বোমাবাজি, রক্তপাত ঘটাবে এবং যারা এসব কাজে অর্থসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা জোগাবে তাদেরকেও জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করা হবে। জঙ্গি সন্দেহে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে এবং গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো 30 দিনের আটকাদেশ দিতে পারবে। পুলিশ 30 দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করবে এবং সবের্াচ্চ 90 দিনের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।

এ আইনে অপরাধ প্রমাণিত হলে সবের্াচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ড এবং সর্বনিম্ন শাস্তি 7 বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। প্রস্তাবিত আইনে 10টি অধ্যায় এবং 68টি ধারা রাখা হয়। 17 এপ্রিল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রস্তাবিত সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন না দিয়ে প্রস্তাবিত আইনটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদকে সভাপতি করে একটি মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের সময় দেওয়া হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া, যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা, ডাক ও টেলি যোগযোগমন্ত্রী আমিনুল হক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।

মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাবিত সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনের খসড়া নিয়ে তিন দফা বৈঠকে বসে। সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত 7 জুন। কিনত্দ তিন দফা বৈঠক করেও মন্ত্রিসভা কমিটি চূড়ানত্দ করতে পারেনি সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনের খসড়া। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রসত্দাবিত আইনের জঙ্গি ও জঙ্গি সংগঠনের যে সংজ্ঞা নিরূপণ করা হয়েছে তা পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে জোট সরকারের শরিক জামাতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট। সূত্র মতে, জঙ্গি ও জঙ্গি সংগঠনের যে সংজ্ঞা প্রস্তাবিত আইনে দেওয়া হয়েছে তাতে আইনটি কার্যকর হলে এর আওতায় জামাত, ইসলামী ঐক্যজোট, খতমে নবুওয়াতসহ এমন অনেক সংগঠনকেই যেকোনো সময় নিষিদ্ধ করে দিতে পারবে সরকার।

এসব সংগঠন ধর্মের নামে রাজনীতি করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগও রয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, জোট সরকারের শরিক জামাত, ইসলামী ঐক্যজোট তীব্র বিরোধিতা করে আসছে প্রসত্দাবিত আইনের । আর এই বিরোধিতার কারণেই সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন করার বিষয়টি। জোট সরকারের শেষ মুহূর্তে এসে এ ধরনের আইন করা হলে ইসলামি দলগুলো ক্ষুব্ধ হবে এবং তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এ আশঙ্কা থেকে সরকারের নীতিনির্ধারকরা এখন আর সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন করার ব্যপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। মন্ত্রিসভা কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে এ আইনটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারাও নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভা কমিটির একজন সদস্য ভোরের কাগজের এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশে এখন আর জঙ্গি তৎপরতা নেই। জঙ্গি নেতাদের সব গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রচলিত আইনেই তাদের বিচার করে মৃতু্যদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাই নতুন আইন করার আর প্রয়োজন নেই। তাহলে নতুন আইন করার ব্যপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্যোগ নিলেই বাস্তবায়ন করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে অপর একজন সদস্য বলেন, প্রস্তাবিত আইনে জঙ্গিদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা পরিবর্তন বা বাদ দেওয়া হলে আইনটির বিশেষত্বই আর থাকবে না।

কারণ আইনটির স্পিরিটই হলো ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যা প্রচলিত আইনে নেই। কিন্তু সংজ্ঞা পরিবর্তন করলে এ আইন করারই আর প্রয়োজন নেই। তারচেয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন অনেক শক্তিশালী। শেষ পর্যন্ত এ আইনটি হবে না এমন ইঙ্গিতই দিলেন মন্ত্রিসভা কমিটির এই সদস্য। প্রসঙ্গত, জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ এখন পর্যন্ত যেসব জঙ্গি নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে প্রচলিত আইনে বিচার করা হয়েছে।

ঝালকাঠীতে দুজন বিচারক হত্যা মামলায় এ দুজঙ্গি নেতাসহ 7 জন জঙ্গিকে মৃত্যদণ্ড দিয়ে আদালত রায় দিয়েছে। সরকারের অনেক নীতিনিধর্ারক মনে করেন, যেহেতু শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে গেছে এবং তাদের বিচার কাজও সম্পন্ন হয়ে গেছে ফলে নতুন আইন করে সরকারের মিত্র ইসলামি দলগুলোকে িেপয়ে কোনো লাভ নেই। সরকারের শেষ সময়ে এসে ইসলামি দলগুলো পেলে আগামী নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। তবে ইসলামি দলগুলোর চাপে সরকার সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন করা থেকে পিছু হটলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতা সংস্থাগুলোও চাচ্ছে বাংলাদেশে এ ধরনের একটি আইন হোক"।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.