আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপিতে তারেক সংকট



বিএনপিতে তারেক সংকট ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিএনপি এখন বিভোর হলেও দলটিতে তারেক সংকট প্রবল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় গিয়ে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাঁর হাতে বিএনপির নেতৃত্ব তুলে দিতে চান খালেদা জিয়া। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্ব তারেক রহমানের হাতে চলে যাওয়ার বিষয়ে প্রবল মতদ্বৈততা আছে বিএনপির নীতি নির্ধারকদের মধ্যে। শুধু নীতি নির্ধারণী পর্যায়েই নয়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতা নেত্রীদের মধ্যেও তারেক রহমানকে নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন আছে। বিষয়টি কিছুটা প্রকাশ পায় বিএনপির মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া কর্তৃক তারেক রহমানকে কটূক্তি করার মধ্য দিয়ে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, পাপিয়া সম্প্রতি লন্ডনের এক বিএনপি নেতার সঙ্গে টেলিফোনে তারেক রহমানকে ‘মেট্রিক পাস’ নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে বিএনপির মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পাপিয়া পুরো বিষয়টি অস্বীকার করলেও অনেকেরই মন্তব্য, বিএনপিতে তারেক রহমানের অবস্থান পাপিয়ার মন্তব্যের মতোই। বিএনপিতে তারেক সমর্থক ও তারেকবিরোধী উভয় পক্ষই সমানভাবে সক্রিয়। এক পক্ষ চায় তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে আসুক, আরেকপক্ষ চায় খালেদা জিয়ার হাতেই বিএনপির নেতৃত্ব থাকুক।

বিএনপি যেমন ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছে, তেমনি চাচ্ছে তারেক রহমানকে দলে প্রতিষ্ঠিত করতে। যে পক্ষটি তারেক রহমানকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে, তাদের প্রচেষ্টার কারণে ইতোমধ্যে দলে নানান সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারণ, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বেশির ভাগই তারেককে পছন্দ করেন না। তারেকের সঙ্গে রাজনীতি করতে আপত্তি আছে দলের নীতি নির্ধারকদের অনেকের। বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতা মনে করেন, তারেকের বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের প্রশ্ন আছে।

তাঁর বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদদ দেওয়া এবং গিয়াসউদ্দিন আল মানুনের মতো বন্ধু পরিবেষ্টিত হয়ে হাওয়া ভবন নামে ‘হাওয়াই’ ভবন তৈরি করে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতা আরও মনে করেন, তারেকের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি সম্পর্কে ইতোমধ্যে যে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে, তা এখনো প্রবলভাবে বিদ্যমান রয়েছে। বিএনপির একটা অংশের মধ্যে ‘হাওয়া ভবন’ আতঙ্কও বিদ্যমান। গত মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় এই হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক একটি পক্ষ মূলত তারেকের সঙ্গে থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দল। তারেকের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন অনেক নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী।

বিএনপির এই অংশটি আরো মনে করে, এখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসা এবং দলে তারেকের কারণে হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক পক্ষটি আবার সক্রিয় হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই পক্ষটি আবার আগের রূপে আবির্ভূত হবেন বলে মনে করেন বিএনপির কিছু সিনিয়ার নেতা। বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কিছু নেতার ধারণা, খালেদা জিয়া মনে করেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান দলের হাল না ধরলে বিএনপি টিকবে না। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হবে না বলে খালেদা জিয়া মনে করেন। এ জন্য আদর্শিক অবস্থান বাদ দিয়ে বিভিন্ন আদর্শের অনুসারীদের নিয়ে জোট গঠন, ন্যূনতম আদর্শিক মিল না থাকার পরেও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে পাশে রাখার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া।

আবার কওমি ধারার বিপরীত চিন্তার দল জামায়াতকে খুশি করতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে ‘প্রহসন’ বলেছেন খালেদা জিয়া এবং গোলাম আযম-নিজামীদের মুক্তিও চেয়েছেন তিনি। খোদ বিএনপির প্রভাবশালী একটি পক্ষ মনে করে, যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতার কারণে এখন বিএনপিতে আদর্শিক কোনো অবস্থান নেই। বিএনপির এখন নীতি হলো, ‘যে আওয়ামী লীগের শত্রু’ সে বিএনপির বন্ধু। বিএনপির দুর্নীতিপ্রিয় একটি অংশের কাছে তারেক রহমান অসম্ভব জনপ্রিয় নেতা। কিন্তু দলটির ক্লিন ইমেজধারী নেতাদের অনেকেই তাঁকে পছন্দ করেন না খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র হওয়া সত্ত্বেও।

এই পক্ষটি মনে করেন, তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে আসলে তারা আত্মসম্মান বজায় রেখে রাজনীতি করতে পারবেন না। কারণ তারেক তোয়াজ পছন্দ করেন। যে যত বেশি তোয়াজ করতে পারবেন, সে ততই জনপ্রিয় হবেন তারেক রহমানের কাছে। তারেকের অধীনে রাজনীতি করার বিষয়ে বিএনপির ১৯ সদস্যবিশিষ্ট স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের অস্বস্তি আছে। ঢাকা মহানগর নেতাদের মধ্যেও আছে তারেককে নিয়ে বিভক্তি।

জেলাপর্যায়ের অনেক প্রবীণ নেতাও তারেকের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যেই। এজন্য জেলা কমিটির অনেক প্রবীণ নেতাই কমিটি থেকে বাদ পড়ে এখন বিএনপির জেলা কমিটিতে আছেন উপদেষ্টা হয়ে। এর বিপরীতে তারেককে যারা পছন্দ করেন, তাদের বেশির ভাগই অপেক্ষাকৃত তরুণ। আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হওয়া এবং সর্বোপরি জ্যেষ্ঠ নেতাদের হটিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় বলে এ অংশটির পছন্দ খালেদার চেয়েও তারেককে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.