বিএনপিতে একই নেতা একাধিক পদ দখল করে রাখায় ক্ষুব্ধ পদ বঞ্চিতরা। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাই এখন ৫টি পদের অধিকারী। তার মূল পদ হলো দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। আর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বে থাকার কারণে তিনি পদাধিকার বলে স্থায়ী কমিটিরও সদস্য।
এই তিনটি পদ ছাড়াও তার পুরোনো আরও দুটি পদ এখনও তার হাতেই রয়েছে। একটি কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অন্যটি তার নিজ জেলা ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতির পদ।
একজন নেতার এত পদের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘একজন নেতার এতগুলো পদ দখল করে রাখাটা যুক্তিসঙ্গত কাজ নয়। বিএনপি একটি বড় দল। এ দলের এমনিতেই পদ-পদবি নিয়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব সংঘাত।
সেজন্য যারা বড় পদে চলে যান তারা যদি পুরোনো পদ ছেড়ে দেন তাহলে নতুন নেতার সৃষ্টি হবে। ’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক ব্যক্তি একাধিক পদের অধিকারী এমন অনেকেই আছেন বিএনপিতে। তাদের মধ্যে দুই পদে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি একই সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবার শ্রমিক দলের সভাপতি। এই নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার আগে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও দফতর সম্পাদক ছিলেন।
কিন্তু তারপর এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতির পদ আঁকড়ে আছেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে পুরো পাঁচ বছর বিদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালেও তিনি দলের দুটি পদের কোনটিই ছাড়েননি। সম্প্রতি শ্রমিক দলের এক অনুষ্ঠানে এক নেতার দুই পদ নিয়ে কথা উঠলে তিনি আর শ্রমিক দলের সভাপতি থাকবেন না বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু পরবর্তিতে শ্রমিক দলের নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনিই থেকে যান।
শামসুজ্জামান দুদু চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য একই সঙ্গে দীর্ঘদিন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক আবার চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপিরও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান একই সঙ্গে ঢাকা জেলা বিএনপিরও সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে ঢাকা জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি আবদুল মান্নান একই সঙ্গে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি। এরা সবাই চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য।
দলের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ারও তিনটি পদ দখল করে আছেন।
তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি, অন্যদিকে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বিএনপির দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ একই সঙ্গে দলের যুগ্ম মহাসচিবের পদেও আছেন। অপর যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি। যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। অন্য যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি।
রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ সম্পাদক পদে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগের সাগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি। গুম হওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একই সঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি। সাত মাস ধরে তিনি নিখোঁজ থাকা সত্ত্বেও ওই পদ দুটি এখনও ইলিয়াস আলীর দখলে রয়েছে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী একই সঙ্গে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সভাপতি। সাদেক হোসেন খোকা কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অন্যদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক।
রাবেয়া চৌধুরী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান একই সঙ্গে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ-বিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে তিনি জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি।
সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন-বিষয়ক সম্পাদক তিনি একই সঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাদা মিয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শিল্পবিষয়ক সম্পাদক।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি।
কেন্দ্রীয় সহসাংস্কৃতিক-বিষয়ক সম্পাদক এম এ মালেক বিএনপির অংগ সংগঠন জাসাস সভাপতি।
খায়রুল কবির খোকন কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অন্যদিকে নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি।
আবুল খায়ের ভূঁইয়া কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ-বিষয়ক সম্পাদক একই সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি।
আসাদুল হাবিব দুলু কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকার-বিষয়ক সম্পাদক। সম্প্রতি তাকে নতুন বিভাগ রংপুরের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি লালমনিরহাট জেলা বিএনপিরও সভাপতি।
রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু কেন্দ্রীয় কমিটির স্বনির্ভর-বিষয়ক সম্পাদক ও নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি।
হাবিবুল ইসলাম হাবিব কেন্দ্রীয় সহ-শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি।
এদিকে দলের একটি সূত্র জানায়, একাধিক পদ ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশ মানছেন না দলের কোনও নেতা। চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে বার বার মৌখিক নির্দেশ পাওয়া সত্ত্বেও তা তোয়াক্কা না করে পদ আঁকড়ে রেখেছেন তারা। একাধিক পদ ধরে রাখা নেতাদের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অনেক অভিযোগও জমা পড়েছে। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কাউন্সিলের পর থেকেই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ নির্দেশ দিয়ে আসছেন।
দলের গঠনতন্ত্রেও এক নেতার একাধিক পদে থাকাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক নেতা একাধিক পদে থাকলে দলে প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের বাড়তি সুযোগসুবিধা পান। আর এ কারণেই কেউ পদ ছাড়তে চান না। হাইকমান্ড নির্দেশ দিলেও একাধিক পদ ছেড়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন অজুহাতে আবারও থেকে যান। কিছুদিন পর হাইকমান্ড তা ভুলে যায়।
এভাবেই তারা বছরের পর বছর দলের বিভিন্ন স্তরে একাধিক পদ দখলে রাখেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।