রাজপথের আন্দোলন ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতায় ঢাকা মহানগর বিএনপিকে নিয়ে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর আন্দোলনে মহানগরের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিশেষ করে ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি সফল না হওয়ার পেছনে তিনি ঢাকার নেতাদের দায়ী করছেন। সম্প্রতি ১৮ দলের বৈঠকেও এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভের কথা জানান বেগম জিয়া। ওই কর্মসূচির আগ মুহূর্তে গ্রেফতার হয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা জেলে।
সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও ১৯ সদস্যের যুগ্ম আহ্বায়করাও মাঠের নেতা-কর্মীদের পাশে নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে কমিটি নেই। রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগরে বিএনপি কার্যত অভিভাবকহীন।
খালেদা জিয়া ২০১১ সালের ১৪ মে যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়ার দিন এই কমিটি অনুমোদন করেন। এর ১৯ জন যুগ্ম আহ্বায়ক হলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ, এস এ খালেক, নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, কাজী আবুল বাসার, এম এ কাইয়ুম, আবু সাঈদ খান খোকন, আবদুল লতিফ, এম এ মজিদ, সামছুল হুদা, সাজ্জাদ জহির, শাহাবুদ্দিন, আলী আজগর মাতব্বর, নূরজাহান মাহবুব, আতিকুল্লাহ আতিক, আজিজ উল্লাহ, আনোয়ারুজ্জামান, আবদুল আলীম নকি, বজলুল বাসিত আঞ্জু ও মোহাম্মদ মোহন।
কমিটি দেওয়ার সময় নিজের হাতে লেখা নির্দেশনায় বেগম জিয়া বলেন, আহ্বায়ক কমিটি ছয় মাসের মধ্যে সর্বস্তরে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচন করবে। কিন্তু গত দুই বছরেও নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।
সূত্র জানায়, ছয় দফা অবরোধ ও হরতালে মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাঠে দেখা যায়নি। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে খালেদা জিয়া ঢাকার আন্দোলন সফল করতে আটজনকে বিশেষ দায়িত্ব দেন। কিন্তু হামলা-মামলার ভয়ে তারাও আত্দগোপনে চলে যান।
সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। রাজধানীর নয়াপল্টনের সামনে ঘোষিত এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুই দিন আগেই তৃণমূলের অন্তত এক লাখ নেতা-কর্মী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ সময় তাদের খোঁজখবর নেননি। এমনকি ফোন বন্ধ করে আত্দগোপনে চলে যান। বাইরে থেকে আসা অনেক নেতা-কর্মী গ্রেফতারও হন।
আত্দীয়স্বজনের বাসা, মসজিদে কিংবা রাস্তায়ও রাত কাটান তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের অধিকাংশই বিত্তশালী। বিশেষ করে সাবেক ওয়ার্ড কমিশনারদের প্রায় সবাই বাড়ি-গাড়িসহ বিশাল সম্পদের অধিকারী। অনেকের সম্পদ শত কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি থানা পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছেন।
নিজেদের সম্পদ বাঁচানোর জন্য তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়ার্ড পর্যায়ে সরকারবিরোধী মিছিল-মিটিং করা হচ্ছে না। কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন সময় মিছিল বের করতে চাইলে বলা হচ্ছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যেতে। দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান করছে নিয়মিত। ফলে তৃণমূলের হতাশ নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। তবে মহানগরের আন্দোলনের 'ব্যর্থতার কাহিনী' বেগম জিয়ার দৃষ্টিতে রয়েছে।
সংগঠনকে চাঙ্গা করতে নতুন নেতৃত্ব জরুরি বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই বছর চলে গেলেও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। একইভাবে অধিকাংশ থানা ও ওয়ার্ডেরও কমিটি গঠন করতে পারেননি তারা। ইতোমধ্যে যে কয়টি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি দেওয়া হয়েছে, তার বিপরীতে পাল্টা কমিটি এসেছে। ঢাকার দুই প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার নেতা-কর্মীরা বিভক্ত থাকায় কমিটি দেওয়া নিয়েও নানা বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রমতে, ঢাকা মহানগরে এমপি প্রার্থীরা চান একভাবে কমিটি, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চান অন্যভাবে। আবার স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও চান তাদের মতো করে কমিটি। সবার মন জয় করতে গিয়ে অনেক স্থানে কমিটি গঠন করা যায়নি। তবে আন্দোলন ও কমিটি না দেওয়ার ব্যর্থতার দায় নিতে নারাজ ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'র্যাব-পুলিশের গুলির পাশাপাশি বাসাবাড়িতে তল্লাশি করে নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে।
তারপরও আমরা কেন্দ্র ঘোষিত আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অধিকাংশ ওয়ার্ড ও থানায় কমিটি দেওয়া হয়েছে। মহানগর বিএনপির কমিটিও হতো। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর ধরে কোথাও কর্মিসভা পর্যন্ত ঠিকমতো করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে কীভাবে আমরা কমিটি করব?' র্যাব-পুলিশের মারমুখী অবস্থানের কারণে ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় নেতা-কর্মীরা নামতে পারেননি বলেও তিনি মনে করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।