ব্যাংককের পাতায়ায় বসেছিল ‘অ্যাডফেস্ট ২০১৩’-এর আসর। পর্দায় তখন প্রদর্শিত হচ্ছে ‘ফেবুলাস ফোর’ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, দি এম্পটি সাইড। সবার চোখ পর্দার দিকে, একজন ছাড়া। তাঁর নাম রেজাউল আমিন, চলচ্চিত্রটির নির্মাতা। রেজাউল তখন দর্শকের মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ করতে ব্যস্ত।
বাংলাদেশি তরুণটির তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, পাঁচ মিনিট ২০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ছবি তাঁকে নিয়ে এসেছে বিশ্বসেরা পরিচালকদের আসরে!
সেদিনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে রেজাউল আমিনের মুখে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য’ হাসি, ‘আগের রাতে ঘুমাতে পারিনি। যখন আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য সামনে ডাকা হলো, উত্তেজনায় পেটের ভেতর গুটুর গুটুর করছিল! আমার সিনেমাটা যখন দেখানো শেষ হলো, সবাই তালি দিল, সেই মুহূর্তটা ভুলব না। ’
রেজাউল আমিনের মতো অনেক স্বপ্নবান তরুণকেই আজকাল টানছে ‘লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন’-এর দুনিয়া। মুঠোফোন, ডিএসএলআর, হ্যান্ডিক্যাম—ভিডিও করার মতো একটা সরঞ্জাম পেলেই হলো। অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়েও মাঠে নামছেন তরুণেরা।
তরুণদের এই প্রয়াসকে স্বাগত জানাতেও প্রস্তুত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব’। অনেকের কাছে উৎসবে যোগদান করাটাও মুখ্য ব্যাপার নয়। স্বপ্ন আছে, ইচ্ছা আছে, আর কী চাই?
আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন দীপন। দীপনের ফেসবুক প্রোফাইলে লেখা আছে ‘ইন আ রিলেশনশিপ উইথ প্রিয়তমা ক্যামেরা’! বেশ কয় বছর আগেই চলচ্চিত্র নির্মাণের ভূত চেপেছে তাঁর মাথায়। ছোটখাটো ভাবনা আর গল্প পেলেই ডিএসএলআর ক্যামেরা হাতে, বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়েন কর্মযজ্ঞে।
বলছিলেন, ‘শুরুর দিকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে শর্টফিল্ম বানাতাম। নিজেরাই সম্পাদনা করতাম। তখন অত কিছু ভাবতাম না, বুঝতামও না। এখন হাতে ডিএসএলআর আছে। অনলাইনে দেখে কিংবা বড় ভাইদের কাছে সুযোগ পেলেই শিখতে চেষ্টা করি।
স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি তৈরি করতে করতেই একদিন বড় কিছু করার ইচ্ছা। ’
দীপনের থেকে জানা গেল, ‘সিনেমা পিপলস’ নামে একটি সিনেমা-পাগল তরুণদের দলের কথা। ফেসবুকভিত্তিক এই দলটির সদস্যসংখ্যা চার হাজারের বেশি। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন এভাবে, সিনেমা পিপলস একটি ফিল্ম মেকিং নেটওয়ার্ক। এখানে একঝাঁক তরুণ-তরুণী বিনা স্বার্থে একে অন্যকে ক্ষুদ্র চলচ্চিত্র নির্মাণে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেন।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রনির্মাতার দল, যেখানে সমমনা স্বপ্নবাজেরা এক হতে পারেন। কথা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি বিশ্বাস রিয়াজুল হকের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘আমরা প্রতিবছর আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করি। দেশি-বিদেশি বহু চলচ্চিত্র জমা পড়ে। সীমাবদ্ধতা নিয়েও তরুণেরা চেষ্টা করছেন, এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে।
যাঁরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা সবাই হয়তো ভবিষ্যতে পরিচালক হবেন না। কিন্তু এঁদের মাধ্যমেই সুস্থ ধারার দর্শক তৈরি হবে। ’
চলচ্চিত্রকার জাহিদুর রহিম অঞ্জনও তরুণদের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেন। তবে সঙ্গে এ-ও বললেন, ‘চলচ্চিত্র একটা শিল্প। এর একটা ভাষা আছে।
গানটা যেমন শিখে গাইতে হয়, তেমনি চলচ্চিত্রের ভাষাটাও শিখতে হবে। সেই শেখাটা নিজে নিজে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই হোক না কেন। ভালো চলচ্চিত্র দেখতে হবে, পড়তে হবে। অনেকে ইচ্ছা আর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ভালো সিনেমা বানাতে পারছেন না চলচ্চিত্রের ভাষাটা জানা নেই বলে। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।