জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই এক গ্রাম্য বধূর গল্প। গ্রামে আবারও ভোট এসেছে। তার স্বামী এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। কিন্তু গৃহবধূটি জানে এই প্রার্থীটি চরম বদমাশ। তাই সে এই প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
এই নিয়ে স্বামী স্ত্রী ঝগড়া লাগে।
প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে তার স্বামী নানা অপকর্মে জড়ায়। বিরোধী পক্ষকে বিপদে ফেলার জন্য নানা পরিকল্পনা করে। সে তার স্বামীকে বার বার সতর্ক করে।
তার স্বামী তার জন্য নতুন শাড়ি নিয়ে আসে।
জানায়, তাদের পক্ষের প্রার্থী জিতলে আরও সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু বধূটি তার স্বামীকে কিছুই বলতে পারে না।
অবশেষে ভোটের দিন আসে। ভোটের দিন সকালে তার হাতে স্বামী গুজে নেয় নগদ টাকা । সে টাকা নিয়ে খুশি হয় না।
জানে এটা তার ভোট বিক্রির টাকা। সে টাকা নিতে বাধ্য হয় । কিন্তু ভালো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আসে।
তার স্বামী রাতে জিজ্ঞেস করে সে কাকে ভোট দিয়েছে। সে মিথ্যা কথা বলে।
পরে রাতে জায়নামাজে বসে খোদার কাছে মাফ চায়।
চরিত্রসূচি :
নং চরিত্র বয়স চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রস্তাবিত শিল্পী
০১ জয়নাল ৩০ লোভী এবং বিবেকহীন
০২ জরিনা ২৫ সরল
০৩ আবুল ৫০ কুটিল
দৃশ্য -০১
স্থান : জয়নালের বাড়ি / ইনডোর
সময় : দিন
চরিত্র : জয়নাল ও জরিনা
ঘটনা : স্ত্রী জরিনাকে স্বামী জয়নাল মার দেয়। তাকে তার কথায় উঠবস করতে বলে। স্ত্রী জরিনা তার কথা মেনে নেয় না।
জরিনাকে মার দিয়েছে তার স্বামী জয়নাল।
জরিনা মাটিতে পড়ে কাঁদছে।
জয়নাল : আমার কথা না শুনলে আরও মাইর খাবি।
জরিনা : তর হারামের পয়সায় আমি থুথু দেই। তর ওই চেয়ারম্যানের আকাম কুকাম সবাই জানে।
জয়নাল : অত কথা বুজি না।
তুই চেয়ারম্যানের কুমির মার্কায় ভোট দিবি। নইলে তো বুঝসই।
জয়নাল বাইরে চলে যায়। মাটিতে পড়ে কাঁদতে থাকে জরিনা।
কাট।
দৃশ্য -০২
স্থান : জয়নালের ঘর/ ইনডোর
সময় : রাত
চরিত্র : জয়নাল ও জরিনা
ঘটনা : স্ত্রীর জন্য জামা কাপড় ও অলংকার নিয়ে আসে জয়নাল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসব গ্রহণ করতে বাধ্য হয় জরিনা
জরিনাকে নতুন জামা-কাপড় ও অলংকার দেখাচ্ছে। জরিনার মুখ থমথমে । বোঝা যায়, অনেকক্ষণ কেঁদেছে।
জয়নাল : দেখ, শাড়িটা তর পছন্দ হয় কি না।
একটা কানের দুলের তর না অনেক শখ আছিল।
(জরিনা কিছু বলে না কেবল দেখে। জয়নালের মুখ উজ্জ্বল। )
জয়নাল : শাড়িটা অহনই একটু পর।
জরিনা : আমরা বলদরে কখন আদর যতœ করি জান ?
জয়নাল : কখন ?
জরিনা : কোরবানীর চান উঠলে।
জরিনা রান্না ঘরে চলে যায়। বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে থাকে জয়নাল।
কাট।
দৃশ্য-০৩
স্থান : একটি গ্রাম্য রাস্তা / আউটডোর
সময় : বিকেল
চরিত্র : আবুল মিয়া, জয়নাল এবং অসংখ্য লোক
ঘটনা : গ্রামের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে প্রার্থী আবুল মিয়া। তার পাশে দেখা যায় জয়নালকে।
ভোট প্রার্থী আবুল প্রচারণা চালাচ্ছে। একটা মিছিল বের হয়েছে। মিছিলে শ্লোগান দিচ্ছে জয়নাল। প্রার্থী হাত নেড়ে নেড়ে মানুষকে অভিভাবদন জানাচ্ছে।
জয়নাল : মার্কাটা কী ?
সবাই : কুমির মার্কা
জয়নাল : জিতব কেটায় ?
সবাই : কুমির
জয়নাল : এবার যাবে
সবাই : আবুল ভাই
জয়নাল : সিল মার ভাই, সিল মার
সবাই : কুমির মার্কায় সিল মার
সবাই মিছিল করতে করতে সামনে এগিয়ে যায়।
কাট।
দৃশ্য-০৪
স্থান : জয়নালের ঘর / ইনডোর
সময় : গভীর রাত
চরিত্র : জয়নাল এবং জরিনা
ঘটনা : রাতে স্ত্রীকে বোঝায় এবং লোভ দেখায় জয়নাল । তার স্ত্রী একমত হয় না। বিরক্ত হয় জয়নাল।
জয়নাল ও জরিনা খাটে শুয়ে আছে।
জরিনাকে বোঝাচ্ছে জয়নাল ।
জয়নাল : শোন, আবুল ভাইয়ে কইছে, এইবার ভোটে জিতলে আমারে একটা ব্যবস্থা কইরা দিব। কালকা আবুল ভাইরে একটা ভোট দিস।
জরিনা : এর আগেও তো আবুল ভাইরে ভোট দিছি। কী লাভ হইছে ? আবুল ভাইয়ের বাড়িঘর খালি বাড়ছে।
তুমি হেই ভাঙ্গা ঘরেই আছ।
জয়নাল : বেশি বুঝিছ না। যা কইতাছি হেইডা কর। লাভ হইব।
জরিনা : লাভ হইব আবুল ভাইয়ের।
ভোটের সময় ভোট বেইচ্যা দুই চাইর পয়সা ছাড়া আমাগো কোন লাভ হইব না।
জয়নাল : ওইটা বা কম কী ?
জরিনা : টেকা পাইলে কি তুমি আমারেও বেইচ্যা দিবা ?
জয়নাল : বাজে কথা কইস না। যেইটা কইতাাছি হেইডা কর।
জরিনা : হ, ভালো কইরা দিমু নে। অহন ঘুমাও।
তুমি তো আর ভোটে খাড়াও নাই।
জরিনা পাশ ফিরে শোয়। বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে থাকে জয়নাল।
কাট।
দৃশ্য-০৫
স্থান : জয়নালের বাড়ি/ বারান্দা/আউটডোর
সময় : সকাল
চরিত্র : জয়নাল এবং জরিনা
ঘটনা : ভোট দিতে যাওয়ার আগে তার হাতে টাকা গুজে দেয় জয়নাল।
বাইরে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। ঘরের ভেতর তৈরি হয়েছে জরিনা। বারান্দায় দাড়িয়ে তাড়া দেয় জয়নাল।
জয়নাল : কী হইল তাড়াতাড়ি কর । তর ভোট তো দেয়া হয়া যাইব।
(জরিনা বারান্দায় বেরিয়ে আসে। তার কাছে এগিয়ে যায় জয়নাল। তার হাতে একটা ৫০০ টাকার নোট গুঁজে দিতে চেষ্টা করে। )
জয়নাল : ল, এইটা রাখ। আবুল ভাইয়ে পাঠাইছে।
জরিনা : লাগব না, কুমির মার্কায় সিল মারমু।
জয়নাল : মারবি তো ?
জরিনা : টাকার কাছে কী না বিক্রি হয় ? মা, বইন, বৌ- সবই বিক্রি হয়।
জরিনা টাকা নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। তার পেছনে পেছনে যায় জরিনা।
কাট।
দৃশ্য -০৬
স্থান : ভোটের বুথের ভেতরে/ইনডোর
সময় : সকাল
চরিত্র : জরিনা
ঘটনা : ভোটের সময় দ্বিধায় পড়ে যায় জরিনা। অবশেষে একজন ভালো প্রার্থীকে ভোট দেয় সে।
জরিনা বুথের ভেতর একা। তার সামনে ব্যালট পেপার। সে কুমির মার্কার দিকে তাকায়।
তার স্বামীর কথা মনে পড়ে। একের পর এক সব ঘটনা মনে পড়তে থাকে। কিন্তু অবশেষে সে অন্য একটা মার্কায় ভোট দেয়।
কাট।
দৃশ্য -০৭
স্থান : জয়নালের বাড়ি/রাত/ইনডোর
সময় : রাত
চরিত্র : জয়নাল ও জরিনা
ঘটনা : জায়নামাজে বসে খোদার কাছে মাফ চায় জরিনা।
জরিনা জায়নামাজে বসে আছে। তার পেছনে খাটে ঘুমাচ্ছে জয়নাল। সে একবার স্বামীর দিকে তাকায়। তারপর মোনাজাত নেয়।
জরিনা : (স্বগত) হে খোদা, তুমি জান, ওই খারাপ লোকের কাছ থিকা আমি টাকা নিতে চাই নাই।
বাধ্য হয়ে টাকা পয়সা নিছি। কিন্তু ভোট বেচি নাই। আমার ভুল হলে আমারে ক্ষমা কর খোদা। আমার স্বামীকে ভালো পথ দেখাও। আমার স্বামীকেও মাফ করে দাও।
ফেড আউট।
টাইটেল।
এবার সবাই বলেন, কী কী ভুল করলাম। আর গল্পটা কেমন লাগল ?
শাহজাহান শামীম
চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক
০১৬৮২৩০৩৩১৯, ০১৯১২৫৭৭১৮৭ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।