কাজের চাপ আর অসুস্থতা এই দুটো মিলে আমার মন মানসিকতা কেমন জানি হয়ে গিয়েছিল। কিছুতেই নিজেকে কোনভাবে খুশি করতে পারছিলাম না। তাই ভাবলাম ঘর থেকে বের হয়ে প্রকৃতিকে উপভোগ করি হয়তো কিছুটা অস্বস্তিকর অনুভূতি থেকে মুক্তি পাবো। সঙ্গে সঙ্গী হিসেবে নিলাম আমার সাংবাদিক বন্ধু RJ Al Amin কে। সময়টা ছিল ২৬ শে অক্টোবর,শনিবার।
বের হওয়ার আগে আম্মু একটা কাজ দিল বোনের বাসায় যাওয়ার জন্য। মানা করলাম না কারন আমি আগে আমার মনকে খুশি করি তারপর ধীরে সুস্থে বোনের বাসায় গিয়ে যে কাজ করার কথা তা করা যাবে। বের হলাম আমি আর আলামিন। ভালোই লাগলো কখনো দুই বন্ধু এতো দীর্ঘ সময় একসাথে কাটায় নাই। বাইরের আবহাওয়াটায় হাল্কা পশলা বৃষ্টি ছিল কিন্তু প্রকৃতির রূপটা আমার কাছে অসাধারন লাগছিল কেন জানি হয়তো অনেকদিন প্রকৃতিকে কাছে পাওয়ার আকুল সাধটা বাস্তবতায় পাওয়ায় এক অন্য রকম রোমান্টিসিজম সৃষ্টি হয়েছে প্রকৃতি এবং আমার সাথে।
সকাল গড়িয়ে বিকেলে ভালো লাগাটা আরো অন্যরকম হল যখন ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর আড্ডাবাজি হল। তবে সন্ধ্যের আগমনে কেমন জানি এক অদ্ভুত রকমের ভয়টা কাজ করল চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে। আলামিন এর এবং আমার বাসা থেকে ক্রমাগত ফোন আসাতে ভয়টা আরো সবোর্চ্চ শৃঙ্গে উঠার মতো। যখন শুনলাম গনগ্রেফতার চলছে তখন আমার কাছে পরিস্থিতিটা ৭১ এর মতো লাগছে যদিও ৭১ এর সময় আমি দেখি নাই, নাটক, মুভি দেখে যা অভিজ্ঞতা। বোনের বাসা থেকে দ্রুত কাজ সেরে যাত্রা শুরু করলাম বাসার অভিমুখে দুই বন্ধু।
আমার মনের ভিতর অজানা কোন এক আতঙ্কের পদচারনা হচ্ছে। নাটক, মুভিতে দেখার অভিজ্ঞতা সাথে রাস্তাঘাট মিলালাম অবচেতন মনে। কিছুক্ষন পর পর দেখি বিজেবি, পুলিশের গাড়ি যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আমি ৭১ এর কোন এক সময়ে অবস্থান করছি। মনে হচ্ছে এই এখনই পুলিশ অথবা বিজিবি ৭১ এর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর স্টাইলে এসে বলবে-"তুম দোনো শিবির হো, এরেস্ট কারলো দোনোকো"
আসলে আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা এমন, জনজীবনে আতঙ্ক নামে এক নতুন অনুভূতিশীল রোগের দেখা দিয়েছে। আমার মনে আছে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল, চারদিকে পুলিশের গনগ্রেফতার আর শিবিরের ঝটিকা অভিযান ও কক্টেল বিস্ফোরন এইসব দেখতে দেখতে আমার এমন অবস্থা হয়েছিল যে আমি ঘুমেও কক্টেল বিস্ফোরনের আওয়াজ শুনতে পেতাম।
যাক শত উৎকণ্ঠার মধ্যেও ভাল লাগলো যখন লেগুনা দিয়ে আসার সময় আমরা সব যাত্রীরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে টকশোর মতো আলোচনায় মেতে উঠলাম। অবশেষে বাড়ি ফেরা এবং একটা কথা মনে হল-"Sweet Home". আনন্দ, উৎকণ্ঠা সবমিলিয়ে সেদিনের অপরিকল্পিত বাইরে ঘোরা অসাধারন ছিল মানে কিছুটা এডভেঞ্চারধর্মী...হা হা হা হা হা......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।