স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারি চক্রগুলো। তাদের কৌশলের কাছে হার মানছেন বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার লোকজনও। চোরাচালান নিয়ে কেউ ধরা পড়লেও বেশির ভাগ চোরাকারবারিই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে অভিযোগ রয়েছে, চোরাকারবারিদের সঙ্গে বিমান, সিভিল এভিয়েশন ও নিরাপত্তাকর্মীদের পরস্পর যোগসাজশ থাকায় বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকছে একের পর এক স্বর্ণের অবৈধ চালান। চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সুপারিনটেনডেন্ট এস এম জাকির হোসাইন বলেন, 'আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের মাধ্যমে স্বর্ণ আনার পর অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের মাধ্যমে বের হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে বিমানের ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু এর প্রতিকারের জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।'
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বর্ণের চোরাচালান নিয়ে দেশে ঢুকতে অভিনব পন্থা ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। আন্তর্জাতিক রুটের বেশির ভাগ বিমান চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকায় অবতরণ করে। যেসব বিমান চট্টগ্রামে অবতরণ করে সেগুলো অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীসহ আবার ঢাকায় চলে যায়। এ সময় চট্টগ্রামের ফ্লাইটে যাত্রীবেশে স্বর্ণের চোরাকারবারি ওঠে। তার হাত থেকে স্বর্ণ চলে যায় অভ্যন্তরীণ রুটের ঢাকার যাত্রীবেশী চোরাকারবারির কাছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা স্বর্ণের চালান ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে নিরাপদে বের করে নেয় ওই ছদ্মবেশী ঢাকার যাত্রী। একই পন্থা অবলম্বন করা হয় ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আসা ফ্লাইটগুলোতেও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে এই অভিনব কৌশল প্রয়োগ করছে চোরাকারবারিরা। অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সন্দেহ না থাকায় স্বর্ণের অবৈধ চালান নিয়ে সহজে বের হয়ে যায় যাত্রীবেশী চোরাকারবারিরা। তারা এ কৌশল প্রয়োগের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরকে। কারণ শাহ আমানত বিমানবন্দরের বেশির ভাগ যাত্রীই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসেন। স্বর্ণের চালানগুলোও আসে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান থেকে। স্বর্ণ চোরাকারবারিদের এ কৌশল অবলম্বন করার কারণ হিসেবে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের যেভাবে নজরদারিতে রাখা হয়, অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের সেভাবে দেখা হয় না। তাই সুযোগটি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারিরা চোরাচালান করছে। জানা যায়, স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালনকারী সিভিল এভিয়েশন, শুল্ক বিভাগ, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একশ্রেণীর প্রভাবশালী কর্মকর্তা জড়িত। পাচারকারী সিন্ডিকেটের প্রলোভনে পড়ে বিমানবালা, ক্যাবিন ক্রু, প্রকৗশলী ও যাত্রীবেশী পাচারকারীরা স্বর্ণের চালান বহন করে থাকে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ উল্লেখ করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার (বিমানবন্দর) মোহাম্মদ সেলিম বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমলেও পাশের দেশ ভারতে এখনো এর মূল্য আকাশছোঁয়া। চট্টগ্রামকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে করায় বাংলাদেশ-ভারতের একটি চক্র একে স্বর্ণ চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।'
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ইমিগ্রেশন) মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, 'স্বর্ণের চোরাচালানের তথ্য থাকলেও তা কখনো পুলিশ তল্লাশি করতে পারে না। এ দায়িত্ব শুল্ক বিভাগের। তাই স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে পুলিশের কোনো অাঁতাতের প্রশ্নই আসে না।'
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।