আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পুরোদমে প্রস্তুতির পাশাপাশি মহাজোটের শরিকদের মান ভাঙানোর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে গতরাতে জাতিসংঘের উদ্দেশে নিউইয়র্ক রওয়ানা হয়েছেন শরিক দলের ৬ নেতা। ক্ষমতার পৌনে পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো শরিক দলের এত বেশিসংখ্যক নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরের সুযোগ পেলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী জোটের এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের শেষ সময়, সামনে জাতীয় নির্বাচন, তাই তাদের মান ভাঙানোর চেষ্টা হচ্ছে। শরিকদের খুশি করার চেষ্টার পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সারা দেশ সফর করে বেড়াচ্ছেন। মূল দলের পাশাাপাশি সহযোগী সংগঠনের নেতারাও জেলায় জেলায় সফর করছেন। আগামী তিন মাস নেতা-কর্মীদের সারা দেশে সভা সমাবেশ করে মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, দীর্ঘদিন জোটের বৈঠক না হওয়া, জোটের পরিধি বৃদ্ধি না করা, আসন ভাগাভাগি না হওয়া, শরিকদের বাদ দিয়ে এককভাবে প্রচারণায় নামাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ ১৪ দলের শরিকরা। দলীয় সূত্র মতে, জোটের ঐক্য ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র দুজন নেতা সার্বক্ষণিক শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগেই তাদের আসন বরাদ্দ করা, নির্বাচনী খরচ মেটানো এবং আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে মন্ত্রিত্ব দেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৪ দলের শরিক দুই শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, জোটের ব্যানারে আগামী মাস থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কোরবানির ঈদের আগে জোটগতভাবে প্রচারণায় নামার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রোগ্রাম শিডিউল তৈরি করেছে। ঈদের আগে যে কোনো একটি জেলায় জোট নেতারা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে জনসভা করতে চায়। আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঈদের পর ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি জেলায় জোট নেতারা জনসভা, গণসংযোগ, কর্মিসভা, র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। সূত্রটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক থেকে ফেরার পর মহাজোটের বৈঠক ডেকে এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানান, তারা মনে করছেন আগামী তিন মাস সরকার ও দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। যুদ্ধাপরাধীর রায়ও কার্যকর হতে পারে। রায় কার্যকর করা হলে জামায়াত-শিবির নৈরাজ্য চালাতে পারে। আর এদের ওপর ভর করে বিএনপি ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করবে। এ অবস্থায় বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলার জন্য সংগঠনকে চাঙ্গা করার কোনো বিকল্প নেই। আর সে জন্য জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব প্রস্তুতি নিতে হবে। জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সাংগঠনিক সফরে রয়েছে আওয়ামী লীগের ১৫টি টিম। সহযোগী সংগঠনের নেতারাও মাঠে নেমেছেন। ইতোমধ্যে যুবলীগ ৪০টি জেলায় সফর করে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি সরকার বিরোধী অপপ্রচারের জবাব ও নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার জন্য সংগঠনের নেতাদের ঘরে ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ মাসেই ছাত্রলীগ নেতারা বেশ কয়েকটি জেলা সফর করেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য জামায়াত অনেক আগে থেকেই তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সরকার জামায়াতের নৈরাজ্য সৃষ্টির সব তৎপরতা শক্তভাবে মোকাবিলা করেছে। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার সুযোগ নিয়ে জামায়াত যাতে আর কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থতি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও রাজপথে অবস্থান নেবে বলে তারা জানান। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, এ সময় জামায়াতকে ঢাকায় কোনো কর্মসূচি দিয়ে অবস্থান করার সুযোগ দেওয়া হবে না। পাশাপাশি সতর্ক নজরদারি রাখা হচ্ছে বিএনপির কর্মসূচির দিকেও। কোনো অবস্থাতেই রাজধানী অন্য কারও দখলে যেতে দেওয়া হবে না। শুধু ঢাকায়ই নয়, বিভাগীয় ও জেলা শহরসহ সারা দেশেই অনুরূপ প্রস্তুতি থাকবে বলেও জানান আওয়ামী লীগের নেতারা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচনী ট্রেনে। সারা দেশে সংগঠনকে সংগঠিত করা এবং আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটকে ভোট দিতে জনগণকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের নেতারাও মাঠে নেমে পড়েছেন। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের নামে কাউকে ফাঁকা মাঠে গোল করতে দেওয়া যাবে না। তারা নৈরাজ্য, অরাজকতা সৃষ্টি করবে এমন অবস্থা তো আর নেই।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।