সুশীলরা গণমানুষের শত্রু
বস্তুবাদী নাস্তিকেরা দাবি করে সমস্ত কিছুই জাগতিক পদার্থের তৈরি । আসলেই এই পৃথিবীটি বিভিন্ন ধরনের পদার্থের সমন্বয়ে তৈরি । তেমনি প্রতিটি জীব দেহও তার পিতা-মাতার শুক্রানু-ডিম্বানু নামক জাগতিক পদার্থেরই সমন্বয়ে তৈরি , বস্তুবাদীদের এ যুক্তিটি মানলাম । কিন্তু এই জীবদেহের মধ্যে মনটি এলো কোথা থেকে??, অনুভূতি আসলো কোথা থেকে??মায়া আসলো কোথা থেকে?? অনুভূতি ধারণকারী আত্মার তৈরির রহস্যের ব্যাপারে ,মায়া সৃষ্টির ব্যাপারে বস্তুবাদীতার আলোকে তাদের কাছে থেকে যুক্তিযুক্ত কোন যুক্তি তো পাচ্ছি না । যে মন ভয় পায়, যে মন ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে, নানান ধরনের অনুভূতি লালন করে, সেই মনের মত একটি অতি-প্রাকৃত সত্বার অস্তিত্বই প্রমান করে এর সৃষ্টির পেছনে অবশ্যই কেউ না কেউ একজন আছেন ।
আর তিনিই হলেন এই জগতকূলের স্রষ্টা -মহান সৃষ্টিকর্তা । পদার্থের তৈরি এই প্রকৃতির মাঝে, পদার্থের তৈরি এই জীবদেহের মাঝে অতি প্রাকৃত সত্বা আত্মার ঊপস্হিতিই প্রমান করে দেয় যে, অনুভব-অনুভূতি ধারনকারী রহস্যময় সত্বা মনের সৃষ্টির পেছনে , মহান সৃষ্টিকর্তা নামধারী কেউ না কেউ একজন আছেন।
আপনি গ্লাসের উপর হাত রেখে তালি মারবেন আর এতে পানি উৎপন্ন হয়ে গ্লাস ভর্তি হয়ে যাবে, আর আপনি সেই পানি পান করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন। এটা এমনি এমনি ঘটা সম্ভব ??
চাঁন্দের বুকে যখন পাথরের টুকরা পাওয়া যায় তথন বলা হয় -টুকরাটারে কেউ বানায় নাই, পাথরটার উপাদানগুলোরেও কেউ বানায় নাই , টুকরাটা এমনি এমনি হইছে । অথচ ঐ চাঁন্দের বুকে যদি একখান মোবাইল পাওয়া যাইতো তথন ঠিকই বলা হইতো- এইডা নিশ্চয়ই কেউ না কেউ বানাইয়া এইখানে রাখছে ।
একবার এক নাস্তিক ও এক খোদাবিশ্বাসী তর্ক করতেছে। একজনে বলে আল্লাহ আছে আরেকজনে বলে নাই। এই নিয়া একটা সভা হওয়ার কথা শনিবারে । সবাইকে সকাল ৯ টার মধ্যে সকলের উপস্থিত থাকার কথা । শনিবার সকাল ৯ টার মধ্যে নাস্তিকসহ সবাই উপস্থিত।
একটু পরে যুক্তি তর্ক শুরু হবে। কিন্তু ধর্মবিশ্বাসীর খোঁজ নাই। সকাল গরিয়ে দুপুর, দুপুর গরিয়ে বিকাল। তারপরেও ধর্মবিশ্বাসীর খোঁজ নাই। সবাই ভাবল ধর্মবিশ্বাসীর হয়ত হেরে যাবে সেই কারনে ভয়ে আসতেছে না।
প্রায় সন্ধার দিকে ধর্মবিশ্বাসী এসে উপস্থিত হইল। সবাই হতবাক কিরে ধর্মবিশ্বাসী এত পরে কেন !! তাকে জিজ্ঞেস করা হইল আপনে এত পরে আসলেন কেন? ধর্মবিশ্বাসী উত্তর দিলঃ
আমি যখন আসতে ছিলাম তখন দেখি ব্রিজ ভাঙ্গা । অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর হঠাৎ নদীর ধারে জঙ্গলের মধ্যে দেখলাম একটা গাছ গোড়া থেকে কেটে গেল। তারপর একা একাই গাছটা দুই টুকরা হয়ে গেল। তারপরে একা একাই কাঠ বের হয়ে এলো ।
একটু পর দেখি কাঠগুলো নিজেরা নিজেরা জোড়া লেগে চমৎকার একখান ডিঙ্গি নৌকায় পরিণত হল। এরপর ডিঙ্গি নৌকাটি সুন্দর করে জঙ্গলের মধ্যে থেকে বের হয়ে একা একা আমার কাছে আসলো । এরপর আমাকে নদী পার করে দিল। তাই আমার আসতে দেরি হয়ে গেল ।
তখন নাস্তিক রেগে গিয়ে বলে ধুর মিয়া গল্পকাহিনী বাদ দেন।
এই সব কি কখনও সম্ভব নাকি। একা একা আবার কিভাবে সম্ভব।
তখন ধর্মবিশ্বাসী বললঃ একা একা সম্ভব নয় বলেই তো আমি বিশ্বাস করি মহাবিশ্বের এতোকিছুর পিছনে কেউ একজন আছেন।
নাস্তিক ব্যাটা তো এবার পুরাই চুপ ।
এই মহাবিশ্ব, ছায়াপথ, অন্তরীক্ষ, আমাদের সৌরজগত এবং আমাদের বাসস্থান এই পৃথিবী অনেকগুলো বিষয় দ্বারা পরিচালিত।
মানুষের বসবাস এবং জীবন ধারণের জন্য এইসব নিয়ম এবং সাম্যতা গুরুত্বের সাথে পরিকল্পিত এবং পরিচালিত হচ্ছে। আমদের এই মহাবিশ্ব পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করে পাওয়া যায় যে গুরুত্বপূর্ণ মহাবিশ্বের সুত্র থেকে শুরু করে জটিলতর পদার্থের বৈশিষ্ট্য পর্যন্ত, ক্ষুদ্রতম সাম্যতা থেকে অতিক্ষুদ্র অনুপাত পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ততটুকুই আছে যতটুকু মানুষের বেঁচে থাকার এবং জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে ছায়াপথে পৃথিবীর অবস্থান, সূর্যের বিকিরিত রশ্মির পরিমান, পানির সান্দ্রতা, পৃথিবী থেকে চাদের দূরত্ব, বায়ুমণ্ডল সৃষ্টিকারী গ্যাসেগুলোর অনুপাত এবং অন্যান্য বিষয়গুলো মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সঠিক পরিমানে আছে। এসব হাজার হাজার বিষয় এবং অবস্থাগুলো একত্রীত হয়ে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করেছে। এসব কিছুর সামান্যতম ব্যতিক্রম হলেই পৃথিবী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যেত।
আজগুবি ঘটে যাওয়া কোনো coincidence এর মাধ্যমে এতগুলো বিষয় সঠিক হওয়া অসম্ভব। হঠাৎ ঘোটে যাওয়া কোনো ঘটনা থেকে এত কিছু সঠিক ভাবে তৈরি হওয়াটা অসম্ভব। কোনো অলৌকিক শক্তির সাহায্য ছাড়া আপনা আপনি এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব। এই মহাবিশ্বের এই নিয়ন্ত্রিত অবস্থাই প্রমাণ করে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব।
নাসার জ্যোতির্বিদ প্রফেসর জন ও’কিফ এর মতে “ আমরা (মানবজাতি) পরিকল্পিত ভাবে সৃষ্টি করা একটি জাতি।
যদি এই মহাবিশ্ব সঠিক ভাবে তৈরি না হত তাহলে আমাদের অস্তিত্বই থাকত না। এসব দেখে আমার মনে হয় এই মহাবিশ্ব মানুষের সৃষ্টি এবং বসবাসের লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছে। “
মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের হার এর বর্তমান অবস্থায় উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে আসছে। যদি এই হার সামান্য কম হতো তবে আমাদের এই সৌর জগত সৃষ্টি হওয়ার আগেই পুরো মহাবিশ্ব আবার সঙ্কুচিত হয়ে মিশে যেত। যদি এই সম্প্রসারণের হার সামান্য বেশী হতো তবে এই মহাবিশ্বের সবকিছু ইতস্তত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেত অন্তহীন অন্তরীক্ষে।
ফলে সৌর জগত, তারকারাজি, ছায়াপথ এসব গড়ে উঠার সুযোগ পেত না।
উপরের যেকোন একটি ঘটলেই আমাদের সৌর জগত, পৃথিবী প্রান তথা মানুষের জীবনধারণের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠত না। কিন্তু এমনটা হয়নি। এর কারন সম্প্রসারণের সঠিক হার। কিন্তু এই সম্প্রসারণ হার আসলেই কতটুকু নিয়ন্ত্রিত? অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত গণিত ও পদার্থবিদ অ্যাডলিডে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর পল ডেভিস এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে কিছু গানিতিক গণনা এবং গবেষণা করেন।
এই গবেষণার মাধ্যমে তিনি অভূতপূর্ব একটি ব্যাপার খুজে পান। তা হচ্ছে, মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণের হার মাত্র ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০১ সেকেন্ডের হেরফের হতো, তবে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতো না। এর সামান্য কম বেশী হলেই মহাবিশ্ব আজকের এই অবস্থায় থাকত না। Allan Guth, যাকে বলা হয় father of the inflationary universe model, মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং সম্প্রসারণের উপর ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে এক অসাধারন ফলাফল পান। তিনি বলেন এই সম্প্রসারণের হার এতটাই নিয়ন্ত্রিত, যেখানে ভুলের সম্ভবনা ১/১০^৫৫ ।
এত সূক্ষ্ম এবং সুনিয়ন্ত্রিত ব্যাবস্থা বা প্রক্রিয়া কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা হতে পাওয়া অসম্ভব। তাই বলা যায় এটি অবশ্যই একটি নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া ,যা কারো দ্বারা অবশ্যই সুনিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
{এখানে আরেকটি কথা বলা হয়ে থাকে যে,যদি কার্যকরণের ধারায় একের পর এক ঘটনা ঘটে নিজে নিজেই এই পৃথিবী বসবাসের উপযোগী হতো,তাহলে শুধু পৃথিবী কেন ,চন্দ্র,সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রেও এমনি এমনি মানুষ টাইপের বুদ্ধিমান প্রাণীর উৎপত্তি হতো। এমনি এমনি সূর্যের মধ্যে সূর্যে বসবাস করার মত আগুনের তৈরী প্রাণীর উদ্ভব হইত। যাইহোক এটা একটা বাড়তি কথা।
কারণ এমনি এমনিতো হয়ইনি। আর যদি সব গ্রহ নক্ষত্রে বসবাস উপযোগী পরিবেশ ও প্রাণী থাকতও তবুও এটা প্রমাণ হতোনা যে,এমনি এমনি হয়েছে। তখন আরো বেশী করে প্রমাণ হতো যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। }
আস্তিকের যুক্তিঃ
১-কোন কিছু কারণ ছাড়া হয়না।
২-সুতরাং এই মহাবিশ্বও কারণ ছাড়া হতে পারেনা।
৩-আর মহাবিশ্ব যে কারণে অস্তিত্ব লাভ করলো তিনিই হলেন সৃষ্টিকর্তা।
নাস্তিকের পাল্টাযুক্তিঃ
তোমার এই যুক্তির উপর তিনটি আপত্তি আসে।
১- ধরো মানলাম কোনকিছু কারণ ছাড়া হয়না। তো এই সূত্র অনুসারে তো সৃষ্টিকর্তারও একটা কারণ লাগে।
২- আর যদি বলো যে, সৃষ্টিকর্তার পিছনে কোন কারণ নাই, তাহলে তো তোমার যুক্তির ১ম ধাপটি অর্থাৎ কোন কিছু কারণ ছাড়া হয়না এটা তুমি নিজেই মানলে না।
৩- সেক্ষেত্রে তো আমি বলতে পারি যে, এই মহাবিশ্বের পিছনেও কোন কারণ নেই। এটা অনাদি কাল থেকে আছে। তুমি যেটা স্রষ্টার জন্য ধরে নিলে, আমি সেটা মহাবিশ্বের জন্য ধরে নিলাম।
এবার আস্তিক মাথা চুলকাচ্ছে, কি বলবে বুঝতে পারছেনা। এমন সময় মঞ্চে হাজির হলেন একজন বৃদ্ধ আস্তিক।
তিনি বললেনঃ ভাই নাস্তিক তুমি কথা ঠিকমত বুঝনি। " কোন কিছু কারণ ছাড়া হয়না" একথাটি নিয়ে তুমি একটু চিন্তা করো যে, এটা দিয়ে আসলে কি বুঝানো হচ্ছে। এটা দিয়ে আসলে বুঝানো হচ্ছে যে, যা কিছু আগে ছিলোনা, পরে অস্তিত্বে এসেছে সেটার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে, এটাকে অস্তিত্বে আনার জন্য অবশ্যই একটা কিছু লাগবে। আর মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে, তাই এর জন্য একজন সৃষ্টিকর্তা লাগবে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কোন শুরুই নাই, এমন নয় যে তিনি আগে ছিলেন না , পরে অস্তিত্বে এসেছেন।
তাই তার জন্য কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই। উপরের ১ম আস্তিকের যুক্তিকে আমি নীচের মত করে পেশ করছি।
১-কোন কিছু শূন্য থেকে নিজে নিজে অস্তিত্বে আসতে পারেনা, অপর কোন সত্তার হাত ছাড়া।
২-আর এই মহাবিশ্ব একসময় ছিলো না, পরে অস্তিত্বে এসেছে।
৩-অতএব অবশ্যই কেউ তাকে অস্তিত্ব দান করেছে ।
আর তিনিই হলেন সৃষ্টিকর্তা।
৪- আর সৃষ্টিকর্তা শূন্য থেকে অস্তিত্বে আসেননি, বরং তিনি অনাদি কাল থেকেই ছিলেন। তাই তার কোন স্রষ্টা নেই।
এবার নাস্তিক বললোঃ বুঝলাম আপনার কথা। আপনার যুক্তির প্রথম ধাপ আপাতত মেনে নিলাম ।
কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের প্রমাণ কি? অর্থাৎ এই মহাবিশ্ব যে একসময় ছিলো না, পরে অস্তিত্বে এসেছে এ কথার প্রমাণ কি ?
বৃদ্ধ আস্তিক বললোঃ তোমার এই প্রশ্নের জবাব দুইভাবে দিবো । ১) দার্শনিক দৃষ্টিকোন থেকে ২)বিজ্ঞানের আলোকে । তোমার এ কথার প্রমাণ তো অনেক আগেই দার্শনিকরা দিয়ে গেছেন। এই মহাবিশ্বের যদি কোন শুরুই না থাকে, অর্থাৎ এই মহাবিশ্ব যদি অসীম হতো তাহলে তো আমাদের আজকের এই কথাবার্তার আগে অবশ্যই বহুধরনের অসীম ঘটনা এই অসীম মহাবিশ্বে ঘটতো । আর আমাদের পূর্বে যদি অসীম ঘটনাই থাকতো, তাহলে তো সেই অসীম ঘটনা কোনদিন ঘটে শেষ হতো না, ফলশ্রুতিতে আমরাও আজকে এই কথাবার্তা বলার চান্স পেতাম না।
কিন্তু যেহেতু আমাদের কথাবার্তা বলার পর্বটি এসেই গেছে, এতে বুঝা যায় যে এই পর্বটি কিছু সসীম ঘটনার পরেই এসেছে । কোন অসীম ঘটনার পরে আসে নি ।
আরও বিশদ ব্যাখ্যা করিঃ
আমরা যখন আমাদের চারপাশ দেখি -তাহলে আমরা দেখব, আমাদের এই বিশ্বজগতে কোন কিছুই এমনি এমনি হয় না, সব কিছুর পিছনে একটা কারণ আছে, দর্শনের ভাষায় বলে “কার্যকরণ সূত্র” বা “law of causality”। যেমন-একটা লেখাটা কেউ হয়ত পিসিতে বসে পড়ছে, এই পিসিটা এমনি এমনিই হাজির হয়নি, সেটা কেউ তৈরি করেছে এবং এটা চালাতে ইলেকট্রিসিটি লাগে। ইলেকট্রিসিটি এমনি এমনি পাওয়া যায় না, তাকে টারবাইন ঘুরিয়ে উৎপাদন করতে হয়।
টারবাইন বেচারাকেও কষ্ট করে কোন মেকানিক্যাল ফোর্স দিয়ে ঘুরাতে হয়। সে ফোর্স আবার এমনি এমনি আসবে না, সেটা আসবে তেল-গ্যাস জ্বালিয়ে … এটা একটা চেইনের মত, প্রত্যকটি ঘটনা(effect) এর পিছনে একটি কারণ (cause) থাকে।
তোমাদের এই যে দাবিটি ত্রুটিপূর্ণ তা হল, কারণ(cause) এবং ঘটনা(effect) এর এই চেইনটির পেছনের দিকে যেতে থাকলে তার কোন শেষ নেই অর্থাৎ অসীম, এই চেনের কোন শুরু বা শেষ নেই। আসলে কি এটা সম্ভব ? আমাদের চারপাশে যা দেখি সবকিছুরই শুরু আছে, অনাদি থেকেই exist করে বসে আছে এমন কিছুই আমাদের নেই, কারণ প্রতিটি বস্তুর অস্তিত্ব অন্য কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল।
তাই মহাবিশ্বের শুরু নেই এই ধারণাটি কার্যকরণ সুত্রকেই তো লঙ্ঘন করে।
আমরা আরও যদি দেখি তাহলে দেখব যা কারণ এবং ঘটনার যে চেইনকে তোমরা নাস্তিকরা অসীম বলছে তা কি আদৌ সম্ভব? ধরি, একটি অসীম(infinite) সংখ্যক সৈন্যের একটি লাইন। নিয়মটা এমন, যে প্রত্যেক সৈন্য তার ডান পাশের সৈন্যের নির্দেশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত গুলি করবে না, পাশের সৈন্যটিও তার ডান পাশের সৈন্যের নির্দেশ পেলে গুলি করবে না, পাশেরটিও তার পাশের সৈন্যের অপেক্ষায় বসে আছে … এভাবে এই অপেক্ষা চলে যাবে অসীম পর্যন্ত … … … প্রশ্ন হল, কোন সৈন্যের কাছে কি আদৌ গুলির নির্দেশ পৌছবে ? পৌছবে না, কারন এটি অসীমে চলে যাবে, তাই ঘটনাটিই ঘটবে না। ঠিক একইভাবে চিন্তা করো আমাদের মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও।
সব কিছুর পেছনে একটি কারণ আছে, সে কারণের পেছনে আরেকটি কারণ আছে, তার পেছনে আরেকটি কারণ … এভাবে অনেকদূর চলে যেতে পারবে কিন্তু অসীমে যেতে পারবে না, কারণ অসীমে চলে গেলে এই চেইনের শুরুই পাওয়া যাবে না, তথন বর্তমান ঘটনাগুলো আর ঘটবে না, বা ঘটতে লাগবে অসীম সময়। অসীম সময়ের পরে কি পরের ঘটনা ঘটে ?? না ।
কেননা অসীম সময়ের পরে, পরের ঘটনা আসারই সুযোগ পায় না । তাহলে পরে যে সব ঘটনা ঘটছে, তা থেকে বুঝতে হবে-এর আগের ঘটনাগুলো অবশ্যই সসীম ছিল,অসীম নয় । বাস্তবজগতে অসীম বলে কিছু নেই, এটি একটি সুপ্ত(potential) ধারণা, বাস্তব (actual) ধারণা নয়। তাই মহাবিশ্বের অবশ্যই একটি শুরু আছে, শুরু না থাকলে এই কারণ-ঘটনা-কারণ এই চেইনের অস্তিত্বে আসাই সম্ভব নয়। যেহেতু এর শুরু আছে সুতরাং এ মহাবিশ্ব অসীম নয় ।
২)বিজ্ঞানেই বলছে মহাবিশ্ব সসীম, এমনকি আজ-কালকার বিজ্ঞানীরা এর সৃষ্টির কাহিনীও প্রচার করছে!!এর তো শুরু আছে , তাহলে মহাবিশ্ব অসীম হইলো কিভাবে??
বর্তমান যুগের বৈজ্ঞানিক বলছেন -এখন থেকে ১৩•৭ বিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্ব জন্ম হয়। । তখন মহাবিশ্বের আয়তন ছিল একটি পরমানুর থেকেও ছোট এবং তাপমাত্রা ছিল কয়েক বিলিয়ন ডিগ্রি সেন্ট্রিগেড। এর ঠিক ১০-১৮ সেকেন্ডে সেই ছোট বিন্দুটি হারিয়ে ফেলে তার মহাকর্ষন শক্তি এবং প্রসারিত হতে থাকে অসীম গতিতে চারদিকে। এই প্রসারনকে বলা হয় বিগ ব্যাং।
এছাড়া পৃথিবী গঠিত হওয়ার কথা, গ্রহ নক্ষত্র, জ্যোতিস্ক গঠিত হওয়ার কথা কিংবা নক্ষত্রের আয়ু শেষ হইয়া ব্লাকহোলে পরিনত হওয়ার কথা, সবগুলো ব্যাপারেই তো আধুনিক বিজ্ঞানীরা সময়সীমার কথা উল্লেখ করছেন। মহাবিশ্ব শুরুই যেখানে হচ্ছে মাত্র ১০-১৮ সেকেন্ডের মহাবিস্ফোরণে , সেইখানে মহাবিশ্বরে তোমার অসীম বলাটা মূর্খামিরই পরিচয় বহন করে ।
আবার বিজ্ঞানীরা এও বলছে ক্রমবর্ধমান প্রসারণশীলতার চরম পর্যায়ের পরে নতুন করে কেন্দ্রমুখী সংকোচন শুরু হবে । আর ঐ সংকোচনের প্রভাবে বর্তমান মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে । আমাদের আস্তিকদের ভাষায় যারে বলে-কেয়ামত ।
তাহলে তুমি মহাবিশ্বরে অসীম বলছো কার উপর ভিত্তি করে ?? বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম কেউই তো তোমার এই ধারণার সাথে একমত না । তাহলে কি বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম সবাই ভূয়া, তুমি নাস্তিক-তুমিই একমাত্র ঠিক !!
এই মহাবিশ্বের যে একটি শুরু আছে তার আর একটি বড় প্রমাণ হলো,তাপগতি বিদ্যার প্রথম দুই সূত্র । এই দুই সূত্রের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, মহাবিশ্বের বস্তু ও শক্তির মোট পরিমাণ সীমিত ও ধ্রুব এবং মহাবিশ্বের ব্যবহারোপযোগী শক্তি নিত্য অকার্যকর শক্তিতে রুপান্তরিত হচ্ছে । এমন এক সময় সামনে আসছে যখন আর কোন ব্যবহারোপযোগী শক্তি থাকবে না। এতেই বুঝা গেলো যে, এই মহাবিশ্বের একটি শুরু অবশ্যই আছে।
কারণ, যদি এর শুরুই না থাকতো তাহলেতো কবেই সব শক্তি অকার্যকর শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে এই মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যেতো। অতএব এটা অকাট্যভাবে প্রমানিত হলো যে, এই মহাবিশ্ব এক সময় শুরু হয়েছে এবং তা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
২য় জবাবঃ আর যদি তর্কের খাতিরে মেনে নেই যে, এমন হতে পারে যে,বস্তু ছিলো কিন্তু কোন ঘটনা ছিলোনা অর্থাৎ কোন নড়াচড়া বা পরিবর্তন ছিলোনা; তাহলে বলুন, বস্তুর মধ্যে নড়াচড়া শুরু হওয়ার আগে বস্তু কতদিন স্থির অবস্থায় ছিলো? কতদিন স্থির থাকার পর বস্তুর মধ্যে নড়াচড়া শুরু হলো? বস্তুর এই দুই অবস্থার মধ্যে ব্যবধান কতদিনের? যদি বলেন, অসীম কাল; তাহলে আমরা আগেই প্রমাণ করে এসেছি যে, অসীম কাল পর কোন ঘটনা ঘটতে পারেনা। আর যদি বলেন সসীম কাল; তাহলে আপনি স্বীকার করে নিলেন যে, বস্তুরাজিরও শুরু আছে।
এই মহাবিশ্ব এক সময় ছিলোনা, এটা অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এসেছে।
অতএব অবশ্যই মহাবিশ্বের অস্তিত্বে আসার জন্য একটা কারণ বা একজন স্রষ্টা লাগবে। ব্যাস, এতটুকুর দ্বারাই স্রষ্টার অস্তিত্ব অবধারিতভাবে প্রমাণ হয়ে গেলো।
বৃদ্ধ আস্তিকঃ মহাবিশ্ব অসীম ,এর শুরুও নাই ,শেষেও নাই তোমার এই থিউরী তো বিজ্ঞানী আর দার্শনিকদের হাতেই ধরা খেয়ে গেলো । সুতরাং আবারো বলছিঃ
১-“কার্যকরণ সূত্র” বলছে-কারণ ছাড়া কোন কিছুই শূন্য থেকে নিজে নিজে অস্তিত্বে আসতে পারে না।
২-এই মহাবিশ্ব সসীম একটু আগেই যেটা আমরা প্রমাণ করলাম ।
আর এই মহাবিশ্ব যেহেতু সসীম,একসময় ছিলো না, পরে অস্তিত্বে এসেছে। অতএব “কার্যকরণ সূত্র” অনুসারে অবশ্যই কাউকে না কাউকে একে অস্তিত্ব দান করতে হয়েছে। আর তিনিই হলেন সৃষ্টিকর্তা।
৩-আর মহাবিশ্ব যে কারণে অস্তিত্ব লাভ করলো তিনিই হলেন সৃষ্টিকর্তা। আর সৃষ্টিকর্তা শূন্য থেকে অস্তিত্বে আসেননি, বরং তিনি অনাদি কাল থেকেই ছিলেন।
তাই তার কোন স্রষ্টা নেই।
এবার নাস্তিক বললোঃ বুঝলাম আপনার কথা। মানলাম কোনকিছু কারণ ছাড়া হয়না।
এই সূত্র অনুসারে তো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির পেছনেও একটা কারণ লাগে। আর যদি বলো যে, সৃষ্টিকর্তার পিছনে কোন কারণ নাই, তাহলে তো তোমার যুক্তির ১ম ধাপটি অর্থাৎ কোন কিছু কারণ ছাড়া হয় না এটা তুমি নিজেই মানলে না।
তাহলে তোমরা(আস্তিকেরা) যে বল-স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করেনি এটার প্রমাণ কি?দেখাও ।
বৃদ্ধ আস্তিকঃ তোমার প্রশ্নটি আমি বুঝতে পেরেছি । তুমি জানতে চাচ্ছোঃ “সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির পেছনেও একটা কারণ লাগে । অতএব সৃষ্টিকর্তা কে সৃষ্টি করলো কে”?
“সৃষ্টিকর্তা কারো দ্বারা যে সৃষ্টি হয় নি” এব্যাপারে তোমার এই প্রশ্নের জবাব দুই ভাবে দিয়ে প্রমান করবোঃ একটা কমন সেন্সের মাধ্যমে আর একটা গানিতিক দৃষ্টিকোন থেকে ।
প্রথমতঃ তোমার এই প্রশ্নটি প্রশ্ন হওয়ারই যোগ্যতা নেই ।
ধরুন আপনি একটি রুমে বসে আছেন ,মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে, ফ্যানের বাতাসে পর্দা নড়ছে। দেখুন, পর্দা কেন নড়ছে? ফ্যান ঘুরার কারণে। ফ্যান কেন ঘুরছে? কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার কারণে। কারেন্ট কেন প্রবাহিত হলো ? কোন যন্ত্রের মাধ্যমে এটাকে তারের ভিতর দিয়ে পাঠানো হয়েছে। দেখুন পর্দা এক জিনিষ, আর সেটার নড়ার কারণ যে ফ্যান সেটা আরেক জিনিষ; ফ্যান এক জিনিষ, আর সেটা ঘুরার কারণ যে কারেন্ট সেটা আরেক জিনিষ; এভাবে কারেন্ট যে যন্ত্রের মাধ্যমে পাঠানো হলো সেটা আরেক জিনিষ ।
এজন্যই পর্দার ক্ষেত্রে যেভাবে প্রশ্ন করা হচ্ছে ফ্যানের ক্ষেত্রে সেভাবে প্রশ্ন করা হচ্ছে না, ফ্যানের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রশ্ন করা হচ্ছে কারেন্টের ক্ষেত্রে সেভাবে প্রশ্ন করা হচ্ছে না। পর্দার ক্ষেত্রে বলছি নড়ে কেন, কিন্তু ফ্যানের ক্ষেত্রে বলছি ঘুরছে কেন, এই উদাহরণের জিনিষগুলো সম্পর্কে আমি আপনি জানি বলেই যেভাবে প্রশ্ন করা সাজে ঐভাবেই আমরা প্রশ্ন করছি। আবার দেখুন, ধরুন আপনি কারেন্ট সম্পর্কে কিছু জানে না এমন একজন লোককে বললেন যে, ফ্যান ঘুরছে কারেন্টের কারণে। তখন কিন্তু এই লোকটা কারেন্ট সম্পর্কে অন্য কোন উল্টাপাল্টা প্রশ্ন না করে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করবে কারেন্ট কি জিনিষ। আগে সে কারেন্টের প্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা করবে।
এটাই সাধারণ কমন সেন্সের দাবী। সুতরাং এই মহাবিশ্ব, স্থান এবং সময় যে কারণে অস্তিত্ব লাভ করলো সেই কারণটি সম্পর্কে অন্য কোন উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করার আগে আমাদের জানতে হবে সেই কারণটির প্রকৃতি কি। কি কি রকম প্রশ্ন তার ক্ষেত্রে মানায়।
আরও একভাবে উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিঃ তোমার প্রশ্নটিরই আসলে প্রশ্ন হওয়ার যোগ্যতা নেই ।
তোমার এই প্রশ্নটি প্রশ্ন হওয়ারই আদৌ যোগ্যতা নেই ।
প্রশ্ন হওয়ার যোগ্যতা বলতে একটা কথা আছে। ধরুন একজন মানুষ একটা বই বাধিয়েছেন। যে মানুষটা বইটা বাধিয়েছেন তার নাম ধরুন সাগরিকা। এখন আপনাকে একজন প্রশ্ন করল বইটা বাধিয়েছে কে? আপনার উত্তর হবে নিশ্চয়ই সাগরিকা। এখন আবার যদি লোকটা প্রশ্ন করে সাগরিকাকে বাধিয়েছে কে? আপনার কাছে কি কোন উত্তর আছে? না, নেই।
কারন কি ? কারন প্রশ্নটা ঠিক হয় নি। সাগরিকার এর ক্ষেত্রে বাধানোর প্রশ্ন টা আসে না। আসে কি। সাগরিকার ক্ষেত্রে প্রশ্নটা করতে হবে এভাবেঃ সাগরিকাকে সৃষ্টি করেছে কে? এবার উত্তর টা কি হবে। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ তা'আলা।
এখন যদি প্রশ্ন করেন সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে? তখন প্রশ্নটা কি "সাগরিকা কে বাধিয়েছে?" প্রশ্নটা এ রকম হয়ে গেল না? অর্থাৎ দেখতে হবে প্রশ্নটি আদৌ প্রশ্ন হওয়ারই যোগ্যতা আছে কি না । অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটা প্রযোজ্য নয়। আর যে প্রশ্নটাই ভুল তার তো আর উত্তর পাওয়া যাওয়া সম্ভব না।
গানিতিক ব্যাখ্যাঃ স্রষ্টা অনাদিকাল থেকেই বিদ্যমান। তাঁকে কেউ সৃষ্টি করে নি ।
অর্থাৎ স্র্রষ্টার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, থাকতে পারে না ।
(বিশেষ অফটপিকঃ- মহাবিশ্ব যে সসীম; এটা কিন্তু আগের অধ্যায়েই তুলে ধরা হয়েছে)
ব্যাখ্যাঃ স্রষ্টার কোন সৃষ্টিকর্তা থাকা সম্ভব নয়। কেননা স্রষ্টারও যদি কোন সৃষ্টিকর্তা থাকে তাহলেতো সেই সৃষ্টিকর্তারও আরেকজন স্রষ্টা লাগবে। আবার তারও আরেকজন লাগবে। এভাবে চলতেই থাকবে পিছনের দিকে অসীম ধারা।
অথচ এটা অসম্ভব, বর্তমানে বিদ্যমান এমন কোন কিছুর পিছনের দিকে কোন অসীম ধারা থাকতে পারেনা। তাহলে তো বর্তমানে বিদ্যমান বস্তুটির অস্তিত্বে আসার পালা বা সুযোগই কখনো আসতোনা। যেমন ধরেন এই মহাবিশ্ব হলো X, তার স্রষ্টা হলো A, আবার A এর স্রষ্টা হলো B, আবার B এর স্রষ্টা হলো C এভাবে অসীম ধারা চলা অসম্ভব। অবশ্যই এক জায়গায় থামতে হবে, যার কোন স্রষ্টা নেই, যার কোন শুরু নেই। এটা বুঝার জন্য কিছু উপমা দিচ্ছি ।
মনযোগ দিয়ে পড়ুন। ধরুন, আপনি বাসে উঠার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার সামনে যদি ৫০০জন থাকে, তাহলে আপনি ৫০০জনের পরে বাসে উঠার চান্স পাবেন। যদি আপনার সামনে ১০০০ জন থাকে তাহলে আপনি ১০০০জনের পরে বাসে উঠতে পারবেন। কিন্তু যদি আপনার সামনে অসীম সংখ্যক লোকের লাইন থাকে , তাহলে কি আপনার বাসে উঠার পালা কখনো আসবে? না, কখনো আসবে না। কেননা , অসীম সংখ্যক লোকেরও বাসে উঠা শেষ হবেনা, আর আপনারও বাসে উঠার পালা কখনোই আসবেনা।
এবার উল্টাভাবে চিন্তা করুন। ধরুন, একটা লোক তার সামনের লোকদের বাসে উঠার পরে সে বাসে উঠেছে। এখন এই লোকটা কত জনের পর উঠেছে? যত জনের পরেই উঠুকনা কেন, সেটার অবশ্যই একটা সীমা আছে। একথা বলা যাবেনা যে, সে অসীম সংখ্যক লোকের পর বাসে উঠেছে। কেননা তার সামনে যদি অসীম সংখ্যক লোকই থাকতো, তাহলেতো সেই অসীম সংখ্যক লোকেরও কোনদিন বাসে উঠা শেষ হতোনা, আর তারও কোনদিন বাসে উঠার পালা আসতনা।
কিন্তু যেহেতু তার পালা এসেই গেছে, বাসে যেহেতু সে উঠেই গেছে; এটাই অকাট্য প্রমাণ যে সে সসীম ও নির্দিষ্টসংখ্যক কিছু লোকের পর বাসে উঠেছে। ঠিক তেমনি এই (সসীম) মহাবিশ্ব যেহেতু অস্তিত্বে এসেই গেছে, এটাই অকাট্য প্রমাণ যে এই মহাবিশ্বের অস্তিত্বের “পিছনে কারণের” কোন অসীম লাইন নেই । বরং শুরুতে এমন একজন স্রষ্টা আছেন যার পিছনে আর কোন স্রষ্টা নেই। এই “সসীম”মহাবিশ্ব যেহেতু অস্তিত্বে এসেই গেছে সুতরাং এর পেছনের দিকে কোন অসীম ধারা থাকতে পারেনা। কেননা তাহলে তো বর্তমানে বিদ্যমান “সসীম”বস্তুটির অস্তিত্বে আসার পালা বা সুযোগই কখনো আসতোনা।
অতএব অবশ্যই এক জায়গায় থামতে হবে, যার কোন স্রষ্টা নেই, যার কোন শুরু নেই।
১- কিছু বিশৃঙ্খল জড় বস্তু নিজে নিজে সুশৃঙ্খল কোন সিস্টেম বানাতে পারেনা কোন শক্তিময়,বুদ্ধিমান কারণ বা সত্তার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া।
২-আমরা নিজেরা,গাছপালা,ফুলফল,মাছপাখি,সুশৃঙ্খল এই পৃথিবী,সুশৃঙ্খলএই মহাবিশ্ব এগুলো শৃঙ্খলাহীন অবস্থা থেকে সুশৃঙ্খল হয়েছে।
৩- সুতরাং অবশ্যই এমন কোন শক্তিময়,বুদ্ধিমান কারণ রয়েছে যা এই বিশৃঙ্খল জড় বস্তুগুলোকে সুশৃঙ্খল করেছে,অগণিত কোটি কোটি বস্তু ও নিয়মের মাঝে অকল্পনীয় সমন্বয় সাধন করেছে ।
আশাকরি সত্যান্বেষী সবাই বুঝে নিয়েছেন আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি।
একটা উদাহরণ দেই,আল্লাহই জানে মিলবে কিনা,সূর্য যেটা চোখে দেখা যায়,তো চোখে দেখাকে বাদ দিয়ে সেটাকে যদি ফিজিক্স আর গণিতের আলোকে বুঝতে চান তাহলে কঠিনতো লাগবেই,এমনও হতে পারে আপনি সারা জীবনেও বুঝবেন না। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাসের মত অতি জরুরী বিশ্বাসের ভিতকে সৃষ্টিকর্তা কমন সেন্সের উপর রেখেছেন,যেটা নাকি চোখে দেখার চেয়েও বেশী। তো আপনি যদি এরকম সহজ বিষয়, যেটা নাকি সাধারণ কমন সেন্স দিয়েই বুঝা যায় সেটাকে কোয়ান্টাম ফিজিক্স দিয়ে বুঝতে চান তাহলে কঠিনতো লাগবেই। সমস্যা হলো,আপনারা অনেকেই জ্ঞানের অহমিকায় আবদ্ধ। আপনাদের অনেকেরই যে কমন সেন্স নষ্ট হয়ে গেছে সেটা অহমিকার কারণে বুঝতেও পারছেন না।
আচ্ছা,অন্ধ যদি পথের দিশা পেতে চায় তাহলে তাকে কি করতে হবে? তেমনি যার কমন সেন্স নষ্ট হয়ে গেছে তাকে কি করতে হবে? সমস্যা হলো অন্ধ যদি নিজেকে অন্ধ ভাবতে নারাজ হয়ে চক্ষুষ্মানের মত পথ চলে তাহলে তো সে গর্তে পড়বেই। আর নাস্তিকরা পড়বে জাহান্নামের গর্তে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।