রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, দলকে গতিশীল না করে এ দুই নেতা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন দফতরে দলবাজি, চাঁদাবাজি ও তদবিরবাজি করে গত সাড়ে চার বছরে 'আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ' হয়েছেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় সভাপতি ও সম্পাদক পদে পরিবর্তনসহ কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন নেতা-কর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র থেকে সাফিয়ার রহমানকে সভাপতি ও তুষার কান্তি মণ্ডলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের রংপুর মহানগর কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ আড়াই বছরেও ৩৩টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে পারেননি তারা। ফলে নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। তবে ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকেই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ দুই নেতা। মেতে ওঠেন বিভিন্ন দফতরে তদবিরবাজিতে। সাড়ে চার বছরে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে এ দুই নেতার ৫০ জনকে নিয়োগ দিতে হয়েছে। গত মাসে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ৩৬ জন এমএলএসএস পদে লোক নেওয়া হয়। সেখানেও সভাপতি ও সম্পাদকের একজন করে লোক নিয়োগ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মদ স্বীকার করেছেন। এদিকে, ৩১ জুলাই পীরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য টাকা সংগ্রহের নামে চাঁদাবাজিতে নামেন সভাপতি-সম্পাদক। চাঁদা না দেওয়ায় ২৯ জুলাই তারা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে লাঞ্ছিতসহ তার কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সাধারণ সম্পাদক তুষার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রংপুর সমবায় ব্যাংক এবং ভূমি বন্ধকী ব্যাংকের নির্বাচিত সভাপতিকে সরিয়ে দুটি পদ একাই দখল করেন। সমবায় ব্যাংকের ৪০ লাখ টাকা তসরুপের ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় সভাপতির পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে বলপ্রয়োগ করে আটা ও চালের ওএমএস ডিলারশিপ নেন। কিন্তু পণ্য বিক্রি না করে তা কালোবাজারে বিক্রি করছেন বলে খাদ্য কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন। অন্যদিকে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৪ হাজার ৯৫৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান সভাপতি সাফিয়ার। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, সভাপতি-সম্পাদকের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করছে। দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সভাপতি ও সম্পাদক পদে পরিবর্তন এনে কমিটি পুনর্গঠন করা দরকার।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমান নেতৃত্ব দিয়ে দল চললে মহানগর আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না। তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে হলে শীঘ্রই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সভাপতি সাফিয়ার ও সম্পাদক তুষার তাদের উত্থাপিত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করে বলেন, আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।