ফুটবলে ব্যর্থ হলেই তদন্তের কথা উঠে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এবারও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভরাডুবি ঘটার পর বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তার এ বক্তব্যে অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে সাবেক ফুটবলাররা বলছেন, খেলায় হারজিত থাকতেই পারে। কিন্তু বার বার ব্যর্থতা থেকে কেন বের হতে পারছে না তার রহস্য খুঁজে বের করা দরকার। সালাউদ্দিন বলেছেন, কারণ খুঁজে বের করা হবে। এর আগেও সভাপতির দায়িত্বে যারা ছিলেন তারাও একই কথা বলেছেন। অথচ বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এবারও তদন্ত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ১৯৮৯ সালে ইসলামাবাদ সাফ গেমসে বাংলাদেশ স্বর্ণ জিতবে এ ব্যাপারে অনেকে নিশ্চিত ছিলেন। নাসের হেজাজিকে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ চালানো হয়েছিল। যতটুকু সম্ভব ততটুকুই সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল তৎকালীন বাফুফে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে তীরে এসে তরী ডোবায় বাংলাদেশ। এই ব্যর্থতায় তৎকালীন সরকারের টনক নড়েছিল। এখনতো বাফুফে সভাপতি তদন্তের কথা বলছেন। ১৯৮৯ সালে সাফ গেমসে ব্যর্থতার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ এক অনুষ্ঠানে বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন দেশের ফুটবলকে এভাবে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া যায় না। সাফ গেমসে ব্যর্থতার তদন্ত করে দেখা হবে এর পেছনে কোনো কারণ লুকিয়ে আছে কিনা। না, রাষ্ট্রপতি বললেও তদন্তের কথা মুখেই সীমাবদ্ধ ছিল। রিপোর্টতো দূরের কথা শেষ পর্যন্ত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। শুধুমাত্র কোচ হেজাজিকে বিদায় জানিয়ে দায়িত্ব সেরেছিল বাফুফের কর্মকর্তারা।
প্রশ্ন হচ্ছে, তদন্তের বাধাটা কোথায়? একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে জাতীয় দল কোনো টুর্নামেন্টে যখন অংশ নেয় তখন এর সঙ্গে দেশের মান-সম্মান জড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৯ সালে সাফ গেমসে বাংলাদেশ যখন প্রথম স্বর্ণ বা ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হলো তখন পুরো দেশে উল্লাস হয়েছিল। শুধু তাই নয় সাফল্যের জন্য ফুটবলারদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সুতরাং জিতলে যখন পুরস্কৃত করা হয় তখন হারলে কারণ খোঁজা হবে না কেন? জাতীয় দলের প্রথম অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু বেশ আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, লিগে খারাপ খেললে খেলোয়াড়দের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। অনেক সময়তো ফুটবলারদের শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। অথচ জাতীয় দলে কোনো জবাবদিহিতা নেই। কেন নেই এটাই অবাকের ব্যাপার। পিন্টু বলেন, কেউ কেউ আবার বলেন, এক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের চার্জ করা হবে কোন যুক্তিতে। ওদের কি জাতীয় দলে খেলার জন্য কোনো বেতন বা অর্থ দেওয়া হয়? পিন্টু বলেন, এটা ঠিক উন্নত বিশ্বে ফুটবলারদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের যত আশা তা শুধু সাফকে ঘিরে। ভারততো বেশ ক'বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অন্য দেশও ভালো খেলছে। কই শুনলাম না তো ভারত বা অন্যদেশ ফুটবলারদের বেতন বা আরও সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ প্রশ্ন উঠবে কেন? ভারত এর আগে ছয়বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অথচ এবার ফাইনালে আফগানিস্তানের কাছে হারাতে ভারতীয় ফুটবলারদের নিয়ে ধিক্কারের ঝড় উঠেছে। ইন্ডিয়ান ফুটবল ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ হারের তদন্ত হবে। বাংলাদেশতো প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছে তাহলে তদন্ত হবে না কেন? জাতীয় দলে খেলে খেলোয়াড়রা কোনো অর্থ পান না বলে কি তদন্তের প্রয়োজন পড়ে না। আসলে তদন্ত না হওয়ার রহস্যটা কি?
ব্যাপারটি নিয়ে প্রতিবারই আলাপ হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয়টি এড়ানো হয়েছে। এবার ফেডারেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ ক'জন কর্মকর্তা রহস্যটি উন্মোচন করলেন। সরাসরিই বললেন, তদন্ত না হওয়ার পেছনে বাফুফের কর্মকর্তারাই দায়ী। কারণ তদন্ত হলে কোনো না কোনো খেলোয়াড়ের ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কর্মকর্তারা চান না, কেউ ফেঁসে যাক। কারণ তাদের যদি শাস্তি দেওয়া হয় তাহলেতো লোকাল আসরে তাদের ক্লাবের হয়ে সেসব খেলোয়াড়দের মাঠে নামা সম্ভব নয়। নেপাল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ব্যর্থতায় কোচ ক্রুইফ বেশ ক'জন খেলোয়াড়ের উপর ক্ষুব্ধ। জানা গেছে ৫ খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগও তৈরি করেছেন। যে অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে তা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে শাস্তি নিশ্চিত। অথচ এসব খেলোয়াড়কে রক্ষা করতে কয়েকটি ক্লাব নাকি উঠে পড়ে লেগেছে। কারণ আসছে মৌসুমে এরা তাদের ক্লাবের পক্ষে খেলবেন। সালাউদ্দিন তদন্তের কথা বলেছেন। কিন্তু এসব কারণে তা আলোর মুখ দেখবে কিনা এ নিয়ে অনেকেই সন্ধিহান। কেউ কেউ বলেছেন, আগে যাই হোক না কেন, এবার সালাউদ্দিনের তদন্ত করা উচিত। তদন্ত মানে এই নয় যে খেলোয়াড়রা ফেঁসে যাবেন। তবে তদন্তে কারোর যদি দায়িত্বহীনতার প্রমাণ মেলে তাকে চিহ্নিত করতে ক্ষতিতো নেই।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।