আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহিত্যের প্রতি ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং ফেসবুক হ্যাকিং



ঘটনার সূত্রপাত ফেসবুকে আমার গত 24/09/13 ইং তারিখের স্ট্যাটাস থেকে। অবশ্য ফেসবুক না বলে আমার মেডিকেলের ক্লাশরুম বলাই ভালো, কেন- সেটা বুঝতে স্ট্যাটাসটা তুলে ধরলাম- "আজ একটা অজানা তথ্য জানলাম- আমাদের গ্রেট পোয়েট কাজী নজরুল ইসলাম মারা যান নিউরো সিফিলিস" এ আক্রান্ত হয়ে। তথ্যটা হয়তো অনেকেই জানেন, কিন্তু আমি জানতাম না! তথ্যদাতা আমাদের একজন লেকচারার। অজানা কিছু জানার জন্য কৃতজ্ঞতায় স্যারের প্রতি মন ভরে উঠছিলো, ঠিক এমন সময় ধাক্কাটা খেলাম! প্রায় সবাই জানেন-সিফিলিস একটা সেক্স ডিজিজ। এর সংক্রমণ ঘটে সেক্সুয়াল কমিউনিকেশন এর মাধ্যমে।

স্যার বিদ্রোহী কবির নিউরো সিফিলিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বললেন- "কবিরা তো একটু আবেগ প্রবণ হয়, তারা তো বেশির্ভাগই প্রেমের গল্প টল্প লেখে,যেমন কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- তো এইজন্য আসলে আবেগ দরকার হয়। এইকারণে তাদের নানান জায়গায় যাতায়াত থাকে" আমি শকড! স্যার বললেনটা কী! কথাগুলো বলার সময় স্যারের মিটিমিটি অর্থপূর্ণ হাসি দেখে খুব ক্ষোভ হয়েছিলো আমার এবং একসময় সেই ক্ষোভ রুপান্তরিত হলো হতাশায়- আমি জানতাম, ধর্মভীরু মানুষেরা কখনো সাহিত্য সমঝদার হয়না; কিন্তু কবি-লেখকদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এতোটা নিম্নমানের (!!!)" পোষ্ট হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কমেন্ট- পাল্টা কমেন্টে স্ট্যাটাসের মূলভাব অন্যদিকে মোড় নেয়। ভাবটা তখন গিয়ে দাঁড়ায়- হিন্দু- মুসলিম বিভেদ কিংবা আস্তিক- নাস্তিকতার প্রশ্নে! ( আমরা ধর্মপ্রাণ জাতি, ধর্মের কথা শুনতেই "চায়ের কাপে ঝড়" তুলবো- এ আর এমন কী!) পরিচিত ফ্রেন্ডদের মধ্য থেকে একজন ( আইডি - পানিজল) নজরুলের শ্যামা সংগীত লেখা উল্লেখ করে তার আস্তিকতা-কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। পানিজল এর এই কমেন্টের বিপরীতে অনেকেই নজরুলের গজল এবং অপর একজন হিন্দুব্যক্তি কর্তৃক মুসলিমদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরীফের অনুআদ (যা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য হয়েছে) -এর উদাহরণ দিয়ে পানিজলকে আক্রমণ করে বসে! অতঃপর পানিজল পাল্টা আঘাত না করে সারেন্ডারমূলক কমেন্ট করে চুপ করে যায় এবং আমি পরদিন সকালে কনফেশনধর্মী একটি স্ট্যাটাস দেই; যার ভাষা ছিলো এমন- "গতকাল একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম যার বিষয়বস্তু সাহিত্য এবং ধর্মের মাঝে "মন কষাকষি"। কিন্তু দুঃখের বিষয় কমেন্ট- পাল্টা কমেন্টে সেই স্ট্যাটাসের পুরো ভাবার্থটাই উল্টোদিকে মোড় নিয়েছে! ধর্ম এবং সাহিত্য- দুটোর প্রতি ই আমি সমান সংবেদনশীল।

ধর্ম ছাড়া পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব ছিলোনা আর সাহিত্য ব্যতীত চিন্তাধারা এবং মনুষত্বের বিকাশ অবরুদ্ধই থেকে যেতো (যারা সাহিত্যকে অপ্রয়োজনীয় ভাবেন, তাদের মনোভাব কী তা তারাই ভালো বোঝেন- সেটা আমি ব্যাখ্যা করতে পারবো না। তবে ধর্মকে যদি কেউ অপ্রয়োজনীয় ভেবে থাকেন, তার প্রতি অনুরোধ রইলো- এই বিশাল সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে ভেবে দেখবেন; অবশ্যই স্টিফেন হকিং এর সাম্প্রতিক মতবাদের ভিত্তিতে নয়। কারণ এই মতবাদ ভবিষ্যতে (এবং আদৌ) সত্যি বলে প্রমানিত হবে কিনা আমার জানা নেই! তাই চিন্তাধারার ক্ষেত্রে শান্তির পথ বেছে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের হবে ( আমার মতে)। ) এখন আসল কথায় আসি- আমি যদি বলি " আমার ধর্ম মানবধর্ম" ধর্ম আমাকে চোখ রাঙাবে-;কিন্তু এইকথার মানে কিন্তু এই নয় যে- আমি আমার ধর্মের রীতিনীতি মেনে চলি না ( বরং আমি আমার স্রষ্টার প্রতি প্রত্যেকটা জিনিসের অনেক বেশী নির্ভর্শীল!) অথচ কিছু না জেনেই আমার গায়ে সরসরি "নাস্তিক" তকমা এটে দেয়া হবে! সাথে এও বলা হবে-" কবি-লেখকরা সব নাস্তিক" কিন্তু আমার এই কথায় সাহিত্য কোন ভ্রুকুটি করবেনা আশা করি। তবে সবকিছুতে শুধুমাত্র নিজের ধর্মকে টেনে আনলে- আমাকে হয়তো "গোঁড়া" বলে আখ্যায়িত করবে! তাই সাহিত্য- ধর্মের বিদ্বেষটা চিরন্তন (প্রকৃত কতোটুকু জানিনা, তবে আমরা তো সৃষ্টি করি!!) ধর্ম অবশ্যই নিরীহ, কিন্তু আমরা, অনুসারীরা একে বিপ্লবী, অপপ্রায়োগিক রূপ দিয়ে ফেলি- যে রূপের প্রতি অভিযোগ সমস্ত সাধারণ মানুষের।

তবে তাদের অভিযোগ কেবল চারদেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়, আর লেখকরা কলম ধরলেই হয়ে ওঠেন "নাস্তিক" ( আমরাই কী আমাদের মানসিক-দূষণের জন্য দায়ী নই!? পরিশেষে পূর্ববর্তী স্ট্যাটাস সম্পর্কে কিছু কনফেশনঃ ধর্ম প্রথমত সবার জন্মগত এবং শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আর- সাহিত্য প্রভাবিত হয় পারিপার্শ্বিক দ্বারা। সুতরাং, কাজী নজরুল ইসলামের ক্ষেত্রে "গজল" যেমন চিরন্তন, তেমনি "শ্যামা সংগীত" ও শোভা পায়! তিনি অবশ্যই একজন সন্মানিত ব্যক্তি। বি. দ্রঃ সবার ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই স্ট্যাটাসটি লেখা, তারপর ও যদি কারো সেন্টিমেন্টে আঘাত লাগে- আমি ক্ষমাপ্রার্থী। " ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো,কিন্তু তা না হয়ে নতুন একটি ঘটনার জন্ম হয়! এর পরদিন হোমপেজে পানিজল এর স্ট্যাটাস দেখে আমি থ-সেখানে সরাসরি ইসলামের উপর আঘাত করা হয়েছে! আমি ওকে সতর্ক করার চেষ্টা করলাম কিন্তু খুব একটা লাভ হলোনা।

নিয়মিতভাবে এধরণের পোষ্ট দেখতে পাই (শুধু ওর ওয়ালেই নয়, আমাদেরকে ইনবক্সেও সেসব পাঠানো হয়!)। পানিজল কে ব্যক্তিগতভাবে আমরা "শান্ত এবং নিরীহ" প্রকৃতির ছেলে হিসেবেই চিনতাম। কিন্তু, ক্রমেই আমাদের বন্ধুমহল ওর কার্যক্রমে ত্যক্ত- বিরক্ত হতে থাকে, কেউ কেউ মারমুখিও হয়ে ওঠে। এরকম পরিস্থিতিতে হঠাৎ একদিন পানিজল এর ফোন পেলাম, জানলাম- যেসব পোষ্ট দেখে আমরা বিরক্ত হচ্ছি, তার নাটের গুরু আসলে ও নয়! অন্য কেউ! ওর আইডি হ্যাকড হয়েছে.... আমার স্ট্যাটাসে কমেন্টের পরপরই!! অবশেষে, অনেক টেকনিক্যাল কসরতের পর বন্ধুবরের আইডিখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জানিনা হ্যাকারটি কে।

তাকে পেলে আস্কাইতুম- "ভাই, ধর্ম নিয়ে পলিটিকস শুরু করলেন ক্যান? আমাদের পলিটিক্যাল ফিল্ডের তাহলে কি হবে!"

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।