অভিনন্দন জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন দর্শক। প্রেস বক্সে সাংবাদিকরাও ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে কথা বলছেন। কেউ কেউ 'বাংলাদেশের টেন্ডুলকার'ও বলছেন। আবার কেউ হালকা প্রতিবাদের সুরে বলছেন, 'না না তা কেন, 'প্রিন্স অব কক্সবাজার' বললে দোষ কোথায়?' শুধু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম নয়, গোটা দেশই গতকাল বিকালে মমিনুল হকে মোহিত ছিল। কিন্তু কিউই বোলার কোরে অ্যান্ডারসনের গুডলেন্থ এক ডেলিভারিতে সব ভাবনায় ছেদ ঘটে।
মুহুর্মুহু গর্জনে কয়েক মুহূর্ত আগে যে স্টেডিয়াম প্রকম্পিত হচ্ছিল, সেখানে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। ক্রীড়া সাংবাদিকরাও দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। মমিনুলের আউটটা যেন কেউ-ই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না!
মমিনুল হক সৌরভ নিজেও হতাশ! সারা দিন সৌরভ ছড়িয়ে ডাবল সেঞ্চুরির এত কাছে এসে যে আর শেষ রক্ষা হলো না। দুর্দান্ত এক ইনিংসের ইতি ঘটল ১৮১ রানে। সোয়া ছয় ঘণ্টা উইকেটে থেকে ২৭টি বাউন্ডারিতে এ রান করেন মমিনুল।
তাছাড়া গতকালই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন এই বাঁহাতি। তারপরও হতাশ তিনি। আরেকটু হলেই যে মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলতেন কঙ্বাজারের এই তারকা। দেশের মাটিতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে সোনার হরফে লেখা হয়ে যেত তার নাম। সে কারণেই কিনা সেঞ্চুরির আনন্দের চেয়ে ডাবল সেঞ্চুরি না হওয়ার জন্যই ব্যথিত মমিনুল, 'প্রথম সেঞ্চুরির আনন্দ থাকলেও ডাবল সেঞ্চুরি না হওয়ার জন্য বেশি খারাপ লাগছে।
যদিও আমি ভাবিনি এত ভালো করব, তারপরও ডাবল সেঞ্চুরির এত কাছে গিয়ে তা করতে না পারাটা কষ্টের। ' তারপরও দেশের মাটিতে মমিনুলের ১৮১ রানের ইনিংসটি এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর।
আগের দিন মমিনুল ব্যাটিং করেছেন টি-২০ স্টাইলে। ৭১ বলে করেছিলেন ৭৭ রান।
কিন্তু গতকাল ব্যাটিং করেছেন টেস্ট মেজাজে। যদিও সেঞ্চুরিটা এসেছে ৯৮ বলে। ট্রেন্ট বোল্টের বল স্কয়ার ড্রাইভ করে কাভার পয়েন্ট দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে হেলমেট খোলেন। পরিতৃপ্তির এক সেঞ্চুরি। কিন্তু এত সুন্দর এই ইনিংসটাই দিনশেষে অতৃপ্তির কারণ হবে তা কে জানত? অতৃপ্তি রয়েছে দলের স্কোর নিয়েও।
শেষ বিকালে নাসিরের উইকেটটা না পড়লে হয়তো ভীষণ চাপে পড়ে যেত নিউজিল্যান্ড। তারপরও দিনটি কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষেই। ৭ উইকেটে ৩৮০ রান, খুব খারাপ নয়। যদিও এখনো নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ৮৯ রানে পিছিয়ে মুশফিকরা। হয়তো ড্রয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে টেস্টটি।
কিন্তু মিরাকলও তো ঘটতে পারে। তাছাড়া অনিশ্চয়তার ক্রিকেটে বৈচিত্র্যময় টেস্ট ম্যাচে অসম্ভব বলে কিছু নেই!
সব মিলে মুশফিকদের কালকের ব্যাটিং কিন্তু প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যই। দুর্দান্ত শুরু, প্রথম সেশনেই সেঞ্চুরি আদায় করে নেন মমিনুল। মার্শাল দ্রুত ফিরে গেলেও সাকিবের সঙ্গেও জুটিটা ভালোই জমে উঠেছিল মমিনুলের। কিন্তু স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ।
একটুখানি অমনোযোগী হওয়ায় সাকিবও ওয়াটলিংয়ের তালুবন্দী হন। বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না এই তারকা অলরাউন্ডার। তবে অধিনায়ক মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১২১ রানের জুটি গড়েন মমিনুল। এই জুটিই বাংলাদেশের বড় ইনিংসের ভিত গড়ে দেয়। মমিনুলের ১৮১-এর পর মুশফিকও খেলেন ৬৭ রানের দারুণ এক ইনিংস।
শেষ বিকালে আলো ছড়িয়েছেন নাসিরও। আইএস সোধির বল পুল করতে গিয়ে মিডঅনে টেইলরের হাতে ধরা পড়ার সময় তার স্কোর ছিল ৪৬ রান। সারা দিন দুর্দান্ত ব্যাটিং করার পরও শেষ বিকালে নাসিরের উইকেটই বাংলাদেশকে খানিকটা পিছিয়ে দিয়েছে। তারপরও কালকের দিনটি যে মুশফিকদেরই ছিল এ কথা বলাই যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।