বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সরকারের শেষদিন আসলেই দেশ ব্যাপী চরম উত্তেজনা ও শঙ্কার সৃষ্টি হয় । বর্তমান আওয়ামী সরকারের ৫ বছর মেয়াদের শেষদিন অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখ । অবশ্য এটা তাদের পাঁচ বছর পূর্তি নয় । সংবিধানের ১৪ তম সংশোধনী পর্যন্ত তাদের ক্ষমতার মেয়াদ থাকার কথা ছিল ২৯ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত । আওয়ামী সরকার কর্তৃক সংবিধানকে ১৫ তম বার সংশোধন করে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা অর্থ্যাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করার কারনে যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের মেয়াদেই নির্বাচন দিতে হবে সেহেতু ক্ষমতা শেষ হওয়ার আড়াই মাস আগেই তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে ।
আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচনের রুপরেখাও প্রকাশ করেছে । সরকারী দলের পরিকল্পিত রুপরেখাকে সকল বিরোধীদল বর্জন করেছে এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংঘাত এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব জনমতের প্রতি গুরুত্বারোপ করার জন্য । সরকারী দল তাদের সিদ্ধান্তে অটল । তারা কোন অবস্থাতেই তাদের পথ থেকে সরে আসবে না । বিরোধীদলগুলোও কোন অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না ।
অনেক দিন আগ থেকেই তত্ত্ববধায়ক ইস্যু নিয়ে দুই দলের মধ্যে বাগবিতান্ডা চললেও হাতাহাতির পর্যায়ে যায় নি । তবে সকল সময়েই ধরি ধরির অবস্থা ছিল । বিরোধীদল গ্রেফতার আতঙ্কে তাদের আন্দোলনকে বেগমান করতে সাহস পায়নি অপরদিকে সরকারী দল তাদের পুলিশবাহীনি এবং দলীয় কর্মী সমর্থক দিয়ে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে । অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই দলের এরকম সংঘাত বাধার পর দেশ যখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে নিপতিত হয়েছিল ঠিক সেই সময়ে ত্রাতার ভূমিকা পালন করেছিল এদেশের গৌরব, সেনাবাহিনী । মঈন-ফখরুদ্দীন সরকার জনমনে ব্যাপক সস্থির সঞ্চার করলেও ব্যাপক ভীতির সঞ্চার করেছিলেন দুর্নীতিবাজ এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ।
বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী দ্বয়কে দীর্ঘদিন জেলখানায় কাটাতে হয়েছিল । সে ভীতি থেকেই নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেই দেশরত্ন শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উচ্ছেদে উঠে পড়ে লাগেন । দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকার কারনে সেটা বাস্তবায়ন করাও অসম্ভব হয় নি । প্রধানমন্ত্রী আশা করেছিলেন বিরোধীদল থেকে আর কেউ না হোক অন্তত বেগম খালেদা জিয়া তাকে ধন্যবাদ জানাবেন । তারা যে পাশা পাশি জেলেই অবস্থান করেছিল ।
বেগম খালেদা জিয়া সে পথে হাঁটলেন না । সারা দেশবাসীর মত তিনিও বুঝতে পারলেন এতো জেল থেকে বাঁচানোর জন্য তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থা বাদ দেয়া নয় ,এতো ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্ত । বর্তমান সময়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ২৪ শে অক্টোবর পরবর্তী দেশের গন্তব্য কী ? অনেকেই খুব সহজে অনুমান করতে পারলেও মুখে বলতে পারার সাহস দেখাচ্ছেন না । বিরোধী দল যে কোন মূল্যেই হোক দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূনর্বহাল করার দাবী জানিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশটাকে অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে । সরকারী দল ঘোষণা করছে কেয়ামত পর্যন্ত এ দেশে আর তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে না ।
সাধারণ মানুষ রায় দেয়ার ক্ষমতা রাখে না । তবে তারা জোড়ালো ভাবে সত্য বা মিথ্যার সমর্থন বা বিরোধীতা করতে পারে । নিরাপদে সময় কাটবে এ উদ্দেশ্য নিয়েই তারা একটি দলকে সমর্থন করে সরকার নির্বাচন করে । সেই সরকার কর্তৃক যখন তাদের জানমাল বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয় তখন তাদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । যার প্রতিফলিত রুপ দেখেছিলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনে ।
যে দল ৩০০ আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার দখল করে সেই তারা মাত্র গোটা তিরিশেক আসন পেয়ে চরম লজ্জার সম্মূখীন হয় । গত নির্বাচনের চেয়ে এ নির্বাচনের অবস্থা আরও লজ্জাজনক হওয়ার আশঙ্কায় সরকারী দল এখন নানা টাল বাহানা শুরু করেছে । বিভিন্ন জরিপ সংস্থার সূত্রে পাওয়া তথ্যে সরকারের প্রতি জনগনের ক্ষোভের নানা রকম প্রতিক্রিয়া বেরিয়ে এসেছে । দেশবাসী চেয়ে আছে ২৫ অক্টোবরের দিকে । বহুদিন পূর্ব থেকেই বিরোধী দল এ দিনটিকে দুর্বার আন্দোলনগড়ে তোলার দিন হিসেবে ঘোষনা করে রেখেছে অপরদিকে আওয়ামী সরকার বিরোধী দলকে যে কোন ভাবে প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে ।
তাই ধারনা করা হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি কালো দিন যোগ হবে অক্টোবরের ২৫ তারিখ । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া¬-আপনাদের দু’জনের উদ্দেশ্যে আমার কিছু কথা আছে । রাজনীতির ইতিহাসে আপনারা উজ্জল নক্ষত্র । আপনাদের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী । এ দেশের মানুষের বিপদে আপদে আপনারা যে রকম সহানুভূতি দেখিয়েছেন সেটা এ দেশের মানুষ কখনো ভূলতে পারবে না ।
আপনারাই এ দেশের মানুষের প্রকৃত বন্ধু । বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা যেরকম সম্মানিত মানুষ জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াও তেমনি সম্মানিত । আপনারা জাতির কান্ডারী । আপনারা যদি বস্তির মেয়েদের মত ঝগড়া করেন সেটা দেখে লোক না হেসে পারে ? আপনারা জনসভার মঞ্চে উঠলেই এ জাতির মঙ্গলের কথা যতটুকু না বলেন তার চেয়ে একে অপরের কুৎসা বলেন বেশি । একি ! আপনারা এ দেশের জনগনের প্রতিনিধি ? পক্ষে বিপক্ষে অবস্থানের কারনে একজন আরেক জনের বিরুদ্ধে না বললে জনমত সৃষ্টি হয় না সেটা সত্যি তবে এ বলার মধ্যে মাধুর্য থাকবে না ? এ দেশের আপামর জনগন বিশ্বাস করে আপনার তাদের কল্যান কামনা করেন ।
তাদের বিশ্বাস ভেঙ্গে দিয়েন না । তাদের বিশ্বাস ভেঙ্গে দিলে আপনাদেরও অস্তিত্ত্ব বিলীন হয়ে যাবে । তার তৃতীয় কোন শক্তি খুঁজবে । জাতিসংঘ প্রধানের ফোন আপনাদের অবস্থান নাড়াতে সক্ষম হয়নি এটা জাতির জন্য খুবই দূর্ভাগ্যের । মানুষে বৃদ্ধহলে তাদের ক্ষমতার লিপ্সা বাড়ে এটা যেমন সত্যি বুদ্ধিবাড়ে এটাও তেমনি সত্যি ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী ,বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া জনমত জরিপের রিপোর্ট আপনাদের কাছে আছে । তা দেখে সিদ্ধান্ত নিন ,নমনীয় হোন , অভাগা জাতির কথা একটু ভাবুন । এ দেশটাকে আপনারা দু’জনেই শাসন করবেন ,সেটা ভাগ বটোয়ারা করে করুন । এ দেশেরে নাগরিক হিসেবে , আপনাদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারনে আবার সেনাবাহিনী এ দেশটাকে শাসন করুক সেটা কখনো চাইব না । গনতান্ত্রিক এ দেশটায় গনতন্ত্রের নিয়মে চলুক এটাই কাম্য ।
সেটার পথ কেবল আপনারাই রচনা করুন । এখনো সময় আছে জাতির কথা বিবেচনা করে নমনীয় হয়ে সংলাপে বসুন । এ দেশে বুদ্ধিজীবি গুনী মানুষের অভাব নেই তাদের পরামর্শ নিন । মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি জাতির ভাগ্য বদলানোর ক্ষমতা আপনাদের নেই তবে মঙ্গল আনয়ন করার ক্ষমতা আপনাদের আছে । ক্ষমতাকে উত্তরাধীকারী হিসেবে পাওয়া সম্পত্তি না মনে করে অর্জন করার চেষ্টা করুন ।
আপনাদের মাধ্যমেই এ দেশে ফিরে আসুক সঠিক গনতন্ত্রেরে ধারা । দেশ ও জাতির শুভ কামনায় ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।