সরকারের ভেতরে ও বাইরে আগামী চার মাসের প্রশাসন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সাবোটাজ করতে পারে সিভিল এবং পুলিশ প্রশাসনের হতাশ ও বঞ্চিতরা। আবার নিজেদের নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে আরেকটি গ্রুপ নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে- যারা এতদিন বর্তমান সরকারের কাছ থেকে নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এই কারণে প্রশাসন নিয়ে সতর্ক থাকার জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে পরামর্শ দিয়েছে একাধিক সংস্থা।
জানা গেছে, গত সাড়ে চার বছরে যারা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, এখনো তারা একই অবস্থানে আছেন।
তবে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা লাভজনক অবস্থান থেকে সরে পড়েছেন। কেউ কেউ চলে গেছেন ঢাকার বাইরে। আবার চাকরিচ্যুত বিএনপিপন্থি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও অনেকে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সরকারবিরোধী চাকরিচ্যুত এবং অবসরপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা যোগাযোগ রাখছেন সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে তাদের ঘনিষ্ঠ
বন্ধুদের সঙ্গে। সিভিল প্রশাসনে একজন কর্মকর্তা জানান, ক্ষোভ শুধু বঞ্চিতদের মধ্যেই নয়, সুবিধাভোগীরাও এখন সুর বদলাচ্ছেন।
তারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন শুরু করেছেন। বলছেন, যোগ্যতা অনুযায়ী তারা কিছুই পাননি। সুবিধাভোগীদের এই আচরণে বঞ্চিতরাও বিস্মিত।
সূত্র মতে, ২৪ অক্টোবরের পর দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হলে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও পরিকল্পিতভাবে অসন্তোষ তৈরির চেষ্টা হতে পারে। আন্দোলন বেগবান হলে জনতার মঞ্চের আদলে সচিবালয়ের সরকারবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে সচিবালয়ের আশপাশে একটি মঞ্চ তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধী শিবিরে।
এ ব্যাপারে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সচিবদের একটি গ্রুপ কাজও করছে। এদের মধ্যেই সাবেক এবং বর্তমান আমলা উভয়েই রয়েছেন। একইভাবে বড় ধরনের আন্দোলনে মাঠপর্যায়ের পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রাখতেও কাজ করছে সরকারবিরোধী একাধিক গ্রুপ। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সব দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৪ অক্টোবরের পর বিরোধী দল দেশে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে।
তবে আন্দোলন করার মতো অবস্থা তাদের নেই। তাছাড়া প্রধান বিরোধী দলও নির্বাচনমুখী। প্রশাসনে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই মন্ত্রী বলেন, প্রশাসন নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণই থাকবে প্রশাসনের ওপর। তাছাড়া প্রশাসন বিগড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণও নেই বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের মেয়াদ রয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সংসদ অকার্যকর হলেও সংবিধানের ৫৫ ও ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বর্তমান সরকারই ক্ষমতায় থাকবে। সংবিধান মতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই পরিচালিত হবে সরকার। আর যেহেতু প্রধানমন্ত্রী তার পদে বহাল থাকবেন, সরকার কার্যকর থাকবে, তাই জনপ্রশাসনসহ সব প্রশাসনের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও থাকবে।
এ নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ সেই। প্রশাসন নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে ব্রিটেন, ভারত, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশেই বিদ্যমান সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশেও একইভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই প্রশাসনও পরিচালিত হবে বর্তমান সরকারের অধীনে।
এখানে বিশৃঙ্খলার কোনো সুযোগ নেই।
সরকারের প্রভাবশালী আমলা হিসেবে পরিচিত স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো দলের কর্মকর্তা-কর্মচারী নয়। সরকারে কোন দল আছে, আর কোন দল আগামীতে সরকারে আসবে এগুলো তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। সংবিধান সমুন্নত রেখে আইন ও বিধি অনুসারে কাজ করে জনগণের সেবা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, ২৫ অক্টোবরের পর দেশে কী হবে এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
কিন্তু এ জল্পনা-কল্পনার কোনো গুরুত্ব প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জহুরুল আলম বলেন, ২৫ অক্টোবর আশা করি প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে। কে সরকারে থাকল বা না থাকল সেটা প্রশাসনের বিষয় নয়। কারণ তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে।
তার মতে, ২৫ অক্টোবরের পর প্রশাসনের বড় অংশই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। যদিও থাকে তাহলে সেই সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। অবশ্য সরকার চেষ্টা করবে তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।