শঙ্কা-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে পঞ্চম ধাপে ৭৩ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হচ্ছে আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা চলবে ভোট গ্রহণ। কয়েক ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতা ঘটনায় আজকের ভোট নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বেপরোয়া অবস্থানের কারণে এ ধাপের ভোটে বেশি সংঘাত-সহিংসতা ও কারচুপির আশঙ্কা করছেন বিএনপি সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে কয়েক ধাপের নির্বাচনে জাল ভোট আর কেন্দ্র দখল রোধে নির্বাচন কমিশন ও মাঠ প্রশাসন ছিল অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।
পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে ১৫ জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর, ফেনী, নোয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, সাতক্ষীরা, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী জেলার নির্বাচনী এলাকায় বেশি সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ধাপে ৩৪ জেলার ৭৩ উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোট গ্রহণ। এর আগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা ঘটনায় এবার ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে নানা আশঙ্কা।
কেন্দ্রে কেন্দ্রে গতকাল পৌঁছে গেছে নির্বাচনী সামগ্রী।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে কাল। এ নির্বাচনে মোট এক হাজার ৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোট গ্রহণ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে ইসি।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চম ধাপের ৩৪ জেলার ৭৩ উপজেলায় এক হাজার ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৬২ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪১৮ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এসব উপজেলায় মোট ভোটার ১ কোটি ৩৮ লাখ ৯১ হাজার ৭৫১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ২৬৯ ও মহিলা ৬৯ লাখ ৬১ হাজার ৪৮২ জন। কেন্দ্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৩৪ ও ভোটকক্ষ ৩৪ হাজার ৮৮৫টি। প্রিসাইডিং অফিসার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে ৫ হাজার ৫৩৪ জন। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রতি ভোটকক্ষের জন্য একজন করে মোট ৩৪ হাজার ৮৮৫ জন।
৬৯ হাজার ৭৭০ জন দায়িত্ব পালন করবেন পোলিং অফিসার। তবে পঞ্চম ধাপের ৭৫টি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ঠাকুরগাঁও সদর ও টাঙ্গাইলের বাসাইলে ভোট স্থগিত রয়েছে।
মাঠে সেনা, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড : সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ৭৩ উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নেমেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড। নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচ দিন তারা করবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন। প্রতি উপজেলায় এক প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল দিচ্ছে।
বড় উপজেলায় এ সংখ্যা আরও বেশি। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২৯৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৭৩ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
থ্যাঙ্ক ইউ ফর বেটার ইলেকশন : যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ চতুর্থ ধাপের ভোট অপেক্ষাকৃত ভালো হয়েছে উল্লেখ করে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ২৩ মার্চ চতুর্থ পর্বের ভোটের পর তিনি লেখেন, 'এ বেটার ইলেকশন' নিশ্চিত করতে পারায় সবাইকে ধন্যবাদ।
সহিংসতা থেকে বিরত থাকুন : প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রুটিন দায়িত্বে থাকা মো. আবদুল মোবারক বলেন, 'আশা করি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
' বাড়তি প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান থাকবে তারা সহিংসতা থেকে বিরত থাকবে। সহিংসতার বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতা সৃষ্টি না করলে নির্বাচনে কোনো সহিংসতা হবে না। প্রথম পর্বে বড় ধরনের গোলযোগ না হলেও পরবর্তী তিন পর্বে ভোটের আগে-পরে ১০ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের মারধর, কেন্দ্র দখল, জাল ভোটের ঘটনা ঘটে।
পঞ্চম পর্বের ভোটের পর বাকি কিছু উপজেলায় মে মাসে ভোটের কথা রয়েছে। চলতি সপ্তাহেই ষষ্ঠ ধাপের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
উপজেলা নির্বাচনের ফল ছিনিয়ে নিতে সরকার মরিয়া : বিএনপি
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে বলেছেন, আজ অনুষ্ঠেয় পঞ্চম দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে 'আওয়ামী সন্ত্রাসীরা' দেশব্যাপী নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে। পঞ্চম দফায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছিনিয়ে নিতে এবারও সরকার মরিয়া।
গতকাল সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করেন তিনি।
এ সময় দলের অপর যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গত চারটি ধাপের নির্বাচনে যেভাবে সহিংসতা চালিয়ে কেন্দ্র দখল করে, ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের মাধ্যমে চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছিনিয়ে নিতে মরিয়া ছিল, এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে না।
সালাহউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ, ফেনীর ছাগলনাইয়া, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, কুমিল্লার চান্দিনা, নোয়াখালীর সুবর্ণচর, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ত্রিশাল ও নান্দাইল, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি সমর্থকদের ওপর হামলা, নির্যাতন চালানো হচ্ছে। অনেক জায়গায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি সমর্থকদের বাড়িতে তল্লাশির নামে হামলা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে, অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে।
গফরগাঁও ও টঙ্গীবাড়ি থানায় গত তিন দিন ধরে রাতভর বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ব্যাপকহারে ধরপাকড় করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও ভোট ডাকাতি ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান কমিশন নিজেদের সরকারের 'অতীব আজ্ঞাবহ' হিসেবে প্রমাণ করে প্রতিষ্ঠানটিকে কলঙ্কিত করেছে। তিনি এই কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেন। পাশাপাশি অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ারও দাবি জানান বিএনপির এই নেতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।