দুর্বার আন্দোলনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত বিএনপির। দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে সারা দেশে দুর্বার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। প্রতিটি থানা থেকে শুরু করে জেলা, মহানগর এমনকি বিভাগীয় পর্যায়ে চলছে এই প্রস্তুতি। ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি গঠনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকারের শেষ মুহূর্তের ধরপাকড় আর জেল-জুলুম কবুল করেইঅক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মাঠে নামতে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল। সঙ্গে থাকছে জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলীয় জোটের শরিকরা। এর মধ্যে জামায়াতের প্রস্তুতি আরও ব্যাপক। তবে গরজ নেই শুধু রাজধানী ঢাকা শহরে। সারা দেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আন্দোলনের দুর্বার প্রস্তুতি অব্যাহত থাকলেও নিস্তেজ শুধু ঢাকায়। ঢাকায় বিএনপি বা অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো 'হোম-ওয়ার্ক' নেই। নেতারা ব্যস্ত পরিবার, ঈদ আর কোরবানির গরু নিয়ে। রাজধানীর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও রীতিমতো হতাশ। এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না থানা বা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর বিএনপির হাফ ডজন নেতা রাজধানীর এ অবস্থা বর্ণনা করে বলেছেন, ২০ বছর ধরে কোনো আপডেট নেই মহানগর বিএনপিতে। ২০ বছর আগে যারা ছিলেন তারাই এখনো আছেন। সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন একেকজন। সম্পদ রক্ষা করবেন, পরিবার দেখবেন নাকি দলের কথা চিন্তা করবেন! এ অবস্থায় দলের কথা চিন্তার সময় না থাকলেও পদ-পদবিটা অন্তত ধরে রাখতেই হবে। ফলে ওই পদ-পদবি ধরে রাখা পর্যন্তই এখন ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতি। ওয়ার্ড বা থানা কোনো কমিটিই আর আপডেট করা সম্ভব হয়নি। নিতান্তই যে কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন স্তরে, তাদেরও বেশির ভাগই হয় বয়সের ভারে ন্যুব্জ, না হয় বিশাল অর্থ-বৈভবের মালিক। যে জন্য দল বা আন্দোলনের দিকে দৃষ্টি কিংবা সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেকের মতে বঞ্চিত, অবহেলিত ত্যাগী নেতাদের নিয়েও যদি ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কমিটিগুলো গঠন করে আন্দোলনের দায়িত্ব দেওয়া হতো, তাহলেও আগামী দিনে কিছু না কিছু পাওয়ার আশায় হলেও অন্তত ঢাকায় বিএনপির আন্দোলন অনেক গতি পেত। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো এর সম্পূর্ণ বিপরীত। ঢাকায় বিএনপির চেয়ে জোটের শরিক জামায়াতসহ অন্য সমমনা দলগুলো বেশ সক্রিয়। তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম আন্দোলন নিয়ে বেশ আশাবাদী। এ সম্পর্কে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এখনো আশা করি সরকার ২৪ অক্টোবরের মধ্যেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি মেনে নেবে। না হয় আন্দোলনের মাধ্যমেই জনগণ তাদের এই ন্যায্য দাবি আদায়ে বাধ্য হবে। এ জন্য দেশব্যাপী বিএনপিসহ ১৮ দল প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাই গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং দেশকে নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে রক্ষা করতে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, দেশকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অতীতের মতো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করে জনগণকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিন। অন্যথায় উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির জন্য দায়ী থাকবেন। আর এটা পরিষ্কার যে দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবেও না, সে নির্বাচন হতেও দেবে না। কারণ ২০০৭ সালে নির্দলীয় প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ মেনে নেয়নি। তাহলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কীভাবে আমরা নির্বাচনে যাব? এ নির্বাচনে অংশ নিলে জনগণের কাছে তো আমরা কোনো কৈফিয়ত দিতে পারব না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হলে জামায়াতে ইসলামী শেষ পর্যন্ত মরণ-কামড়ের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামতে যাচ্ছে এবার। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন মোড়ে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা কর্মসূচির নির্মম শিকার জামায়াতের অর্ধডজন নেতার পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার এটাই মোক্ষম সুযোগ হিসেবে ভাবছে জামায়াত। আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ছাড়া ১৮ দলীয় জোটসহ বাকি সব রাজনৈতিক দল ও মহলের ধারণা ও বিশ্বাস- অক্টোবরের পর দেশের কোনো রকমের প্রশাসন আর আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। কারণ কোনো স্তরের কর্মকর্তাই আর শেষ সময়ে এসে আওয়ামী লীগের জন্য অত্যুৎসাহী হয়ে নিজের এবং পরিবারের জীবন বিপন্ন করতে যাবেন না। এ বক্তব্য বিকল্পধারা থেকে শুরু করে গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ মহাজোটের বাইরের সব রাজনৈতিক দলের।
১৮ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রকাশ্যেই বলেছেন, ২৪ অক্টোবরের মধ্যে সরকার নির্দলীয় সরকারের গণদাবি মেনে না নিলে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে এবং তা শুধু ঢাকায়ই সীমাবদ্ধ থাকবে না, সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়তে পারে একসঙ্গে। কারণ মানুষের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে সরকারের দুঃশাসনে। ফলে জনরোষের কবলে পড়তে যাচ্ছে এ সরকার।
২৪ অক্টোবরের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সরকার মেনে না নিলে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে দেশ চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন জোটের শরিক বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে মানুষ ও দেশকে রক্ষার জন্য সরকারকে অবিলম্বে দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি জোট নেত্রীর আহ্বানে সারা দেশেই ১৮ দলের ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি গঠনের কাজও দ্রুত গতিতে চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২৫ অক্টোবর সরকার বিএনপিকে রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি না দিলে এর পর থেকে এ সরকারের আর কোনো অনুমতির তোয়াক্কা করবে না বিএনপি। অনুমতি ছাড়াই ২৫ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ করবে। এতে বাধা দিলেই ২৭ অক্টোবর থেকে লাগাতার হরতাল, ঘেরাও, অবরোধসহ আন্দোলনের যত রকমের কর্মসূচি আছে এর সবই পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করবে ১৮ দলীয় জোট। এ ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশের রাজপথ দখলে নেওয়ারও চূড়ান্ত ছক অাঁটা হয়ে গেছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া শুরুও করে দিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। প্রয়োজনে দল-মত নির্বিশেষ সর্বস্তরের জনগণকেই একসঙ্গে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।