গাজীপুরে যমুনা গ্রুপের কারখানায় প্রায় আট কোটি টাকা গ্যাসের বিল বকেয়া। তিতাস কর্তৃপক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্নে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে তা বিচ্ছিন্ন করতে দেয়নি যমুনার চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের লালিত বাহিনী। পরে তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছে ২৪ ঘণ্টার সময় চেয়ে মুচলেকা দিয়ে পার পান বাবুল।
মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত যমুনা গ্রুপের একটি ইউনিটের তিনটি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস বিল বকেয়ার দায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালায় তিতাস। এ সময় তিতাসের লোকজনকে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধা দেয় বাবুলের বাহিনী। লালিত এসব বাহিনীর তোপের মুখে পড়ে একপর্যায়ে বাবুলের মুচলেকা গ্রহণ করে ২৪ ঘণ্টার সময় দেয় তিতাস কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় যমুনা গ্রুপের একটি ইউনিটে তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হলো- যমুনা নিটিং, ডাইং, যমুনা ডেনিম ফেব্রিকস লি., যমুনা ডেনিম গার্মেন্ট লি.। এ ছাড়া অন্ধেরটেক এলাকায় রয়েছে শামীম স্পিনিং মিল ও যমুনা বেভারেজ।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, যমুনা গ্রুপের এই ইউনিটে গ্যাসের বিল সাত মাসের বকেয়া রয়েছে। সাত মাসের বকেয়া হিসেবে প্রায় আট কোটি টাকা পাওনা তিতাসের। বকেয়া পরিশোধ না করায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে কারখানায় গেলে যমুনার চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল একটি মুচলেকা দিয়ে ২৪ ঘণ্টার সময় চান। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যমুনা গ্রুপের লোকজন মিটার টেম্পারিং করে কোটি কোটি টাকার বিল ফাঁকি দিয়ে আসছে। সূত্র জানায়, ১৯৯১ সাল থেকে কারখানাগুলোর গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল না দিয়ে বকেয়া করে যমুনা গ্রুপ। এ ছাড়া মিটার টেম্পারিং করে কোটি কোটি টাকার বিলে ঘাপলা সৃষ্টি করে তারা। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলেই যমুনার বাবুলের বাহিনীর তোপের মুখে পড়তে হয় তিতাস কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের। আর এসব কারণেই যমুনার কারখানাগুলো গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিয়ে চালিয়ে এলেও কেউ কিছু করতে পারেনি। তিতাসের লোকজন যমুনা গ্রুপের নাম শুনলেই অাঁতকে ওঠেন।
দৈনিক ১২ ঘণ্টা কারখানা চালানোর অনুমোদন নিয়ে টানা ২৪ ঘণ্টা তা খোলা রাখা এবং ছুটির দিনেও কারখানা চালু রাখার কারণে যমুনার কারখানাগুলোতে বিলের কোনো স্বাভাবিক হিসাব রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় তিতাসের একটি সূত্র।
এর আগেও বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে গেলে যমুনা গ্রুপ তিতাসের ওপর চড়াও হয়েছে। নুরুল ইসলাম বাবুলের অস্ত্রধারী গুণ্ডারা একাধিকবার পরিদর্শকদের কারখানা গেটে হামলা করেছে বলে জানায় একটি সূত্র। এ ছাড়া ২০০৫ সালে জ্বালানিবিষয়ক সংসদীয় কমিটি পরিদর্শনে গেলে কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাদের।
গাজীপুরের তিতাস অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল অনেক ডেঞ্জারাস মানুষ। ওনার ব্যাপারে কেউ কিছু করতে সাহস পায় না। তাই আমাদের অফিসের লোকজনও কোনো কিছু করার সাহস পায় না।' তিনি আরও বলেন, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বাবুল নিজেই সরাসরি অন্ধদের গুলি করে হত্যা করেছেন।
অভিযানকারী দলের তিতাসের অন্যতম এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'যমুনা কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করার লিখিত অঙ্গীকার করায় বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।' তিনি বলেন, 'বিল বকেয়া। তাই আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়েছি। কিন্তু অন্য গ্রাহকের মতো তারাও তো আমাদের একজন গ্রাহক। তাই তাদের আবেদনটি গ্রহণ করে ২৪ ঘণ্টা সময় দিই।' এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা তো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য লাঠিসোঁটা নিয়ে যেতে পারি না। গ্রাহকের সঙ্গে মারামারি করতে পারি না। আমাদের দায়িত্ব বকেয়া বিল না দিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।'
গাজীপুর তিতাস অফিসের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যমুনা গ্রুপের কারখানাগুলোতে অবৈধ সংযোগ রয়েছে জানতে পেরেছি। অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আমাদের একটি দল কাজ করছে। শীঘ্রই আমরা ফলাফল পেয়ে যাব।' তিনি আরও বলেন, 'যমুনা গ্রুপের অনেক কারখানা রয়েছে গাজীপুরে। তারা সরকারি জমি ও অন্ধদের জমি দখল করে কারখানা করেছে। যারা অন্ধদের জমি দখল করতে পারে, তারা তো সবই পারে। তাই আমরা যমুনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তিতাস কর্তৃপক্ষকে পাত্তা না দিয়ে জোর খাটিয়ে আসছেন নুরুল ইসলাম বাবুল। এতেই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।'
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।