দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের প্রশ্নে দেশবাসীর শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষার অবসান হতে পারে আজ। সংসদ নির্বাচন থেকে জাতীয় পার্টির সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর থেকে চার দিন ধরে নির্বাচনী সমঝোতার যে সমীকরণ চলছে তারই ফল হিসেবে আজ নির্বাচনে অংশগ্রহণের নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা আসতে পারে জাপার পক্ষ থেকে। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচনকালীন সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর এরশাদকে ঘিরে আবর্তিত হয় গত চার দিনের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার মুহূর্ত। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক সূত্র মতে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা আসতে পারে আজ। গত কয়েক দিনে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক নেতার দফায় দফায় বৈঠক ও আলোচনার কারণেই জাতীয় পার্টি তার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে বলে জানা গেছে। তবে জাতীয় পার্টিকে রাজধানীর দু-তিনটিসহ প্রায় ৭৫টি আসনে আওয়ামী লীগের ছাড় দিতে হচ্ছে বলে সূত্রের আভাস। জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারও গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। অসাংবিধানিক সরকার আসতে পারে এমন সিদ্ধান্ত তারা নেবেন না।
নির্বাচন থেকে এরশাদের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিভিন্ন পর্যায়ে জাপার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের মধ্য দিয়ে জাপার শীর্ষ নেতারা অনেকটা নমনীয় হন এবং পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদকেও পরিস্থিতি বোঝাতে থাকেন। যার ফলে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেননি এবং মনোনয়নপত্রও প্রত্যাহার হয়নি। জাপার মনোনীত প্রার্থীরা গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। যদিও কেউ কেউ প্রত্যাহার করেছেন।
সূত্রমতে, চার দিন ধরে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরে নির্বাচন নিয়ে নানা সমীকরণ চলছে এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নানামুখী তৎপরতায় পরিস্থিতি ক্রমে বদলাচ্ছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর থেকে পার্টির ভেতরেই একটি শক্তিশালী বলয় গড়ে উঠেছে যারা মনে করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো ভুল হবে। এরশাদের সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান না নিলেও মন্ত্রিসভা ও নির্বাচন থেকে জাতীয় পার্টির সরে দাঁড়ানোর প্রশ্নে এ অংশটি বিরোধিতা করছে। পরিস্থিতির আলোকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও তার অনড় অবস্থান থেকে ক্রমে নড়ছেন। নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় সর্বোচ্চ ছাড় দিতে আন্তরিক বলে সূত্রটি আভাস দিয়েছে। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারাও মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি রাজনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবে। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষির ভিত্তিতে অন্তত ৭৫টি আসনে সমঝোতার আলোকে জাতীয় পার্টি দলীয় প্রার্থী দিলে অধিকাংশ আসনেই বিজযী হবে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সমঝোতার ২৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২৭টিতে বিজয়ী হয়েছিল জাতীয় পার্টি। আসনভিত্তিক সমঝোতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারে জাতীয় পার্টির প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ না হলেও দলীয়ভাবে তাদের অবস্থান সুসংহত হয়েছে বলে মনে করে। জাপা নেতারা মনে করেন, এবার যদি ৭৫টি আসনে সমঝোতা হয় সে ক্ষেত্রে বিএনপি প্রভাবিত একাধিক নির্বাচনী এলাকায় জাপা সাংগঠনিকভাবে অস্তিত্ব খুঁজে পাবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।