আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আর্সেনিক দূষণ সমস্যা: প্রতিরোধ ও করণীয়



আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধে করণীয় বাংলাদেশের আর্সেনিক সমস্যা বলতে বুঝায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঞ্চলে খাবার পানিতে আর্সেনিকের মাত্রাতিরিক্ত হার, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর্সেনিক মূলত একপ্রকার রাসায়নিক উপাদান। পানিতে স্বল্পমাত্রায় আর্সেনিক সব সময়ই থাকে। কিন্তু যখন এই মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকে তখনই তা পানকারীর শরীরে নানা রকম রোগের উপসর্গ তৈরি করে এবং পরবর্তীতে সেই সকল রোগব্যাধি মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী ১ লিটার পানিতে ১০ মাইক্রোগ্রাম আসের্নিক থাকলে সেই পানি দূষিত।

বাংলাদেশের মান অনুযায়ী ১ লিটার পানিতে ৫০ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকলে সেই পানিকে নিরাপদ পানি বলা হয় না। পশ্চিম বাংলার দীপঙ্কর চক্রবর্তী সর্বপ্রথম, ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে এই দূষণের ব্যাপারটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেন। তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম বাংলায় তাঁর গবেষণা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে সেগুলো প্রকাশ করেন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশে একটি গবেষণা শুরু করেন। সেখানে তিনি পানি, আক্রান্ত মানুষের নোখ, চুল এবং প্রসাবের হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করেন।

সেই গবেষণায় বেরিয়ে আসে ৯০০ গ্রামবাসীর শরীরে সরকারি মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড়ঘরিয়া ইউনিয়নের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি আবিস্কৃত হয়। এরপর ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে বাংলাদেশের ৬১টি জেলার নলকূপের পানি পরীক্ষা করে জানায় ৪২% নলকূপের পানিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে বেশি (২৫% নলকূপের পানিতে বাংলাদেশের মানের চেয়ে বেশি) মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। দিনে দিনে তা তা ব্যাপক আকার ধারণ করে চলেছে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে জানা যায় আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

পানিতে কি পরিমাণ আর্সেনিক আছে এবং একজন ব্যক্তি কতদিন যাবত এই পানি পান করেছেন; তার উপর মৃত্যুঝুঁকি নির্ভর করে। আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর প্রধান কারণ না হলেও তা মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিনের মোট আর্সেনিকের পরিমানের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। পানিতে আর্সেনিক বেশি থাকলে মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেশের আক্রান্ত এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয় বিভিন্ন সময়।

২০০৬-০৭ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন ছিলো। আর্সেনিক বিষক্রিয়া থেকে মুক্তির জন্য আপাতত প্রতিরোধক ব্যবস্থাই সবচেয়ে উপযোগী। ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়গুলো হলোbr /> -আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি পান ও রান্নার কাজে ব্যবহার না করা। -নিকটে আর্সেনিক মুক্ত নলকূপ পাওয়া না গেলে পুকুর বা নদী হতে ১ কলসি পানিতে আধা চামচ ফিটকিরি মিশিয়ে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিয়ে, পরে উপর থেকে তলানিবিহীন পরিষ্কার পানি পান করতে হবে। -বৃষ্টির পানি যেহেতু আর্সেনিকমুক্ত, তাই বৃষ্টি আরম্ভ হওয়ার ৫ মিনিট পর সরাসরি পরিষ্কার পাত্রে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে তা পান করতে হবে।

আর্সেনিক মুক্তকরণের উপায় হলোঃ- বাংলাদেশে আর্সেনিক মুক্ত পানি থেকে আর্সেনিক মুক্ত করার একটি সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি রয়েছে, যাকে বলা হয় “তিন কলসী পদ্ধতি”। এ জন্য তিনটি কলসী একটির উপর অপরটি রাখতে হয়। সর্ব উপরের কলসিতে রাখতে হয় লোহার কণা ও মোটা দানার বালু, মাঝখানের কলসিতে রাখতে হয় কাঠকয়লা ও মিহি দানার বালু এবং একেবারে নিচের কলসিটি থাকবে খালি। আর্সেনিকযুক্ত পানি এনে ঢালতে হবে সর্ব উপরের পাত্রে, তা ক্রমান্বয়ে পরিষ্কার, বিশুদ্ধ ও আর্সেনিকমুক্ত হয়ে জমা হবে সর্ব নিচের কলসিতে। এই পদ্ধতিতে আর্সেনিকের মাত্রা অন্তপক্ষে ৫০ পিপিবি (১বিলিয়নে ৫০%) এর নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.