আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফোনালাপ প্রকাশ করা ঠিক হয় নি/ খুব ঠিক আছে!

Consistency is the last refuge of the unimaginative. –Oscar Wilde (ইহা হইল আমার কনসিসটিন্সি না থাকিবার একটি গ্রহণযোগ্য অজুহাত)
সারাদিন একটি বিষয়ে আলোচনা হলো। পত্রিকায়ও কিছু কিছু প্রকাশ পেয়েছে। রাতে এসে দেখলাম, বিভিন্ন চ্যানেলে তা প্রধান সংবাদ হয়েছে। বিভিন্নভাবেই তাদের কথোপকথন শুনলাম। একজন ক্ষিপ্ত, আরেকজন বিক্ষিপ্ত! একজন রেগে আছেন, অন্যজন রাগ সামলে কথা বলছেন।

সেই এরশাদের আমল থেকে ২৭ অক্টোবর ২০১৩ পর্যন্ত রাজনীতির ধ্বনিচিত্র! গতকালের কথা বলছি। একটি ঐতিহাসিক দিন। দেশের দুই প্রধান নেতাকে সাধারণ মানুষ বিচার করার অভাবনীয় সুযোগ পেলো। টকশো বিশারদরা বললেন, তাদের সংলাপ ওখানেই হয়ে গেছে। কোন কথা তো আর বাকি রইলো না।

ওখান থেকেই সমাধান বের করতে হবে সমাধান। ভালো কথা। আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। বিষয়টি কি ঠিক হলো? ফোনালাপ প্রকাশ করা কি নৈতিক, জাতীয় এবং কৌশলগতভাবে ঠিক হয়েছে? আজ পেলাম এর ইংরেজি অনুবাদ। একদম কিংস ইংলিশে অনূদিত।

সবাই জানে ডেইলি স্টার ইংরেজিতে ভুল করতে পারে না! একদম অবিকল নকল। কিন্তু কাজটি যে-ই করুক, সেটি কি সকল বিচারে সঠিক বলা যায়? কিন্তু অন্যদিকে বলা যায়, ঠিকই হয়েছে। মনের বিক্ষিপ্ত কথাগুলো প্রকাশ না করে পারলাম না! আমার প্রথম সত্ত্বা বললো, ওটি ঠিক হয় নি, কারণ রাষ্ট্রপ্রধানদের টেলিফোন কথোপকথন দেশের সর্বোচ্চ গোপনীয় বিষয়। অনেকটা শরীরের আচ্ছাদনের মতো। দ্বিতীয় সত্ত্বা বললো, দেশের নির্বাচন নিয়ে ওই কথোপকথন জনগণের সম্পদ এবং তাদের জনগণের হক আছে।

তথ্যমন্ত্রীর সাথে একমত। প্র/স: জনগণের সম্পদ মানেই যখন-তখন খাবলে খাওয়া নয়। ওই তথ্য জনগণের জানার অধিকার থাকতে পারে, প্রয়োজন নেই। দ্বি/স: অধিকার থাকলে প্রয়োজনও থাকতে পারে। প্র/স: রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধান নেতৃবৃন্দের কথোপকথন প্রকাশ পেলে দেশের অনেক গোপনীয় তথ্যের প্রমাণ বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সেটি মঙ্গলজনক না-ও হতে পারে। দ্বি/স: আমাদের নেতৃবৃন্দের মুখে জনসেবা কথা, অন্তরে ক্ষমতার স্বপ্ন্। এদের মনের গহীণ কথাগুলো বের হওয়াই উচিত। প্র/স: সব উচিত সব জায়গায় ‘উচিত’ নয়। এভাবে প্রকাশ পাবে জানলে তারা এতো খোলামেলা কথা হয়তো বলতেন না।

দ্বি/স: এতো খোলামেলা না বললে নির্বাচনের আগে তাদের মনের কথা জাতি জানতো কীভাবে? সকল তথ্যই জানার অধিকার জনগণের আছে। প্র/স: তথ্যের অধিকার আছে, মানে এই নয় যে, সকল তথ্যই জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। এটি তথ্য অধিকার আইনের অতিরঞ্জন এবং অনাবশ্যক ব্যবহার। দ্বি/স: অতিরঞ্জন হলে মানুষ এতো খুশি হতো না। দেশের গণমাধ্যম বিষয়টিকে লুফে নিয়েছে।

তাতে দেশের স্বাধীন গণমাধ্যমের একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রচিত হলো। প্র/স: প্রকাশিত ফোনালাপ কোনভাবেই দেশের প্রধান দুই নেতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেয় না। বহির্বিশ্বে এমনিতেই আমরা আন্ডারডগ হয়ে থাকি, তার মধ্যে নেতৃবৃন্দের একান্ত ফোনালাপ আমাদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করে দেবে। নিঃসন্দেহে তারা অনেক লজ্জা পেয়েছেন। তারা আমাদের নেতা - তাদের লজ্জা মানে দেশের লজ্জা! ফোনালাপ প্রকাশ করা কোন বিচারেই ঠিক হয় নি।

যারা করেছে, তারা জাতির প্রতি বেঈমানি করেছে। দ্বি/স: আগে দেশ, তারপর পরদেশ। যারা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে না, জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দেয় না, নিজেদের ক্ষমতালিপ্সাকে জনগণের রায় বলে প্রকাশ করে, তাদের লজ্জা প্রকাশ হওয়াই ভালো। যারা জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে, জাতীয় স্বার্থে মীমাংসায় আসতে চায় না, তাদের আসল চেহারা বের হবার প্রয়োজন আছে। তাদের প্রতি কোন অনুকম্পার সৃষ্টি হয় না।

গত বিশ বছরে, তারা কেউ জনগণের প্রত্যাশ পূরণ করতে পারে নি। এর বড় প্রমাণ হলো, ক্ষমতাসীন অবস্থায় বিশাল ব্যবধানে পরাজয়। ফোনালাপ প্রকাশ করা বহুত ঠিক আছে। যারা প্রকাশ করেছে তাদেরকে জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করা উচিত। *ছবি: দ্য ডেইলি স্টার।


 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।