আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন

জানুয়ারির ৭ বা ৮ তারিখে হতে পারে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ২০ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানুয়ারির ২৪ তারিখের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় ইসি এ নির্বাচন করতে চায় ওই মাসের শুরুতেই।

ইসি সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার তথা দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতেই আচরণবিধি তৈরি করছে ইসি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় মাথায় রেখে নির্বাচনী আচরণবিধিতে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ইসির আনুষ্ঠানিক বৈঠকে গতকাল আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তফসিল নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নভেম্বরের ২০ তারিখে তফসিল ঘোষণা করে জানুয়ারির ৭-৮ তারিখে ভোট গ্রহণের কথাও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।

আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ৪৫ থেকে ৫০ দিন সময় রেখেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। ২৭ অক্টোবর থেকে ক্ষণ গণনা শুরু হওয়া দশম সংসদ নির্বাচন ২৪ জানুয়ারির মধ্যে করার কথা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সংসদ নির্বাচনের শেষ দিকে অন্তত সপ্তাহ দুয়েক সময় হাতে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে জানুয়ারির শুরুতে ভোট অনুষ্ঠান করতে নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা করা হবে। এদিকে সরকার পদ্ধতি নিয়ে সরকারি ও বিরোধী জোট বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। বিরোধী জোট নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইতিমধ্যে আন্দোলনও শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন দল ১০ নভেম্বর থেকে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে মনোনয়ন বিক্রি শুরুর কথা জানিয়েছে।

আর বিরোধী দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় রয়েছে। তবে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে না এলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি রয়েছে ইসির।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সব নির্বাচনী এলাকার ভোটার তালিকা, প্রয়োজনীয় বিধিবিধান ও আরপিওর সঙ্গে সমন্বয় রেখে আচরণবিধি, নির্বাচন পরিচালনা বিধি, ম্যানুয়াল তৈরি এবং মনোনয়নপত্র, ফরম ও প্যাকেটের মুদ্রণ সম্পন্ন করতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে এগোলে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে এসব শেষ করা যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তফসিল ঘোষণার আগেই ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র, নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়া, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি সম্পন্ন করতে হবে।

আইন-বিধি সংশোধনের কাজ অবশ্য এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল সংসদ অধিবেশন। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে কমিশনকে।

অন্যদিকে মেয়াদ পূর্তির আগে সংসদ ভেঙে গেলে সংবিধান অনুসারে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে।

জানা গেছে, মন্ত্রিসভার সদস্য ও এমপিরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সাধারণ প্রার্থীদের চেয়ে কোনোভাবেই যাতে বাড়তি সুবিধা না পান তা নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে আচরণবিধি করছে কমিশন। নির্বাচনী প্রচারণায় মন্ত্রী-এমপিদের যেসব সুবিধা রাখা হচ্ছে না তা হলো মন্ত্রীদের প্রটোকল ও মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষমতা। জানা গেছে, এ আচরণবিধি প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, সরকারি ও বিরোধী দলের হুইপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে এমপিদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করা, সংসদীয় এলাকার আইনশৃঙ্খলা কমিটির নীতিনির্ধারণী পদে থাকা, স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিতে থাকা, উপজেলার সরকারি আবাসন সুবিধা তথা ডাকবাংলো ব্যবহার ও সরকারি যানবাহন ব্যবহারের ক্ষমতা রাখা হচ্ছে না।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দশম সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির প্রথমার্ধে করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ইসি সচিবালয়। এ লক্ষ্যে ৫ নভেম্বর থেকে ভোটার স্থানান্তর কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। সর্বশেষ নবম সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ভোটের তারিখ পিছিয়ে কয়েক দফা পুনঃতফসিল করা হয়েছিল। আবার ভোটের সময় ঝামেলা হলে কেন্দ্র বন্ধসহ নানা ব্যবস্থা নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু কেন্দ্রের পুনঃ ভোট গ্রহণের কথা বিবেচনায় নিয়ে কিছু সময় হাতে রাখতে হচ্ছে।

সংসদ নির্বাচনের মালামাল প্রস্তুত : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহ শেষ করেছে ইসি। সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রায় সব মালামাল ইসি সচিবালয়ে এসে পৌঁছেছে। জানা গেছে, ইসি সচিবালয়ে ইতিমধ্যে পৌঁছেছে লাল গালা ১৭ হাজার ৩০০ প্যাকেট (৩৪৬০ কেজি), অফিসিয়াল সিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০০, মার্কিন সিল (সংসদ নির্বাচন) ২ লাখ ৩১ হাজার ও ব্রাশ সিল ১৮ হাজার পিস। অন্যদিকে ইউএনডিপির সরবরাহ করা স্বচ্ছ ব্যালট বাঙ্ ও এর লক এসে পৌঁছেছে। ইসির এক কর্মকর্তা জানান, নতুন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও লক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সারা দেশে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মালামাল ডিসেম্বরে কমিশনে এসে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, মালামাল পাঠানোর প্রথম পর্যায়ে রংপুর অঞ্চলে ৩ হাজার ৫০০, রাজশাহী অঞ্চলে ৪ হাজার, খুলনা অঞ্চলে ৩ হাজার, বরিশাল অঞ্চলে ২ হাজার, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৪ হাজার ৫০০, ঢাকা অঞ্চলে ১৪ হাজার ৬৬০, ফরিদপুর অঞ্চলে ২ হাজার, সিলেট অঞ্চলে ২ হাজার, কুমিল্লা অঞ্চলে ১ হাজার ৮৪০ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২ হাজার ৫০০টি স্বচ্ছ ব্যালট বাঙ্ পাঠানো হয়েছে।

ফরম ও প্যাকেট মুদ্রণ : নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য ১৮ ধরনের কয়েক লাখ প্যাকেট ও ২৬ ধরনের কয়েক লাখ ফরম মুদ্রণের কাজ করতে হবে। নির্বাচনী প্যাকেট ভোট গণনার হিসাব রাখা, ব্যালট-পেপারসহ বিভিন্ন কাগজপত্র রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। ফরমগুলোর মধ্যে রয়েছে মনোনয়নপত্র, বৈধ মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা, পোস্টাল ব্যালট, জামানত বই, রসিদ বই প্রভৃতি।

ইতিমধ্যে বেশির ভাগ প্যাকেট মুদ্রণের কাজ করছে গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং (বিজি) প্রেস। ফরম মুদ্রণের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট-পেপার ছাপার কাজ শুরু করবে কমিশন।

যত তফসিল : বাংলাদেশে প্রথম থেকে নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ সালের ৭ মে, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর এবং ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮। আর সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য এম এ আজিজ কমিশন পাঁচবার তফসিল করে।

এ টি এম শামসুল হুদার কমিশনও তিনবার তফসিল করায় মনোনয়ন দাখিলের সময় বাড়ে প্রার্থীদের।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.