আমি কেমন এই জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে মতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য একটি স্বল্পকালীন অ্যাকশান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, অতি দ্রুততার সাথে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে চায় সরকার। বিরোধী দলের সম্ভাব্য আন্দোলন কর্মসূচির প্রস্তুতির মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এ মাসের শেষ দিকে অথবা নভেম্বরের শুরুতেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে।
নির্দলীয় নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিরোধী দলের দাবির বিষয়ে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ছাড় দিয়েই আগাম নির্বাচনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ আভাস দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের আগে দেয়ার ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল একমত। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার তার আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে। এখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে নতুন ধারণা উপস্থাপন করা হচ্ছে।
সে অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ভেঙে দেয়া হবে। বুধবার জাতীয় সংসদেও প্রধানমন্ত্রী এ রকম কিছু কথা বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে দিনণ না জানালেও তার ঘনিষ্ঠ মহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সংবিধানের ৫৭ ও ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার অনুরোধ জানাতে পারেন। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাতে পারেন।
সে ক্ষেত্রে ওই মন্ত্রিসভার আকার এবং করণীয় রাষ্ট্রপতিই নির্ধারণ করবেন। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত রায় অনুযায়ী বর্তমানে নির্দলীয় নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আর কার্যকর নেই। এ কারণে মেয়াদ পূর্তির আগেই সরকার পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দিয়ে সব বিতর্কের ইতি ঘটানোর চিন্তাভাবনা করছে।
কেন আগাম নির্বাচন? : সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। সে হিসাবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে।
কিন্তু সে পর্যন্ত এই সরকার মতায় থাকলে তাদের লাভের চেয়ে তির দিকটাই সামনে আসছে। বিভিন্নভাবে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা হিসাব করে দেখেছেন, তাদের জনসমর্থনের পারদ দ্রুত নিম্নগামী হচ্ছে। অর্থনৈতিক েেত্র ঘোর বিশৃঙ্খলা চলছে। ব্যাংকিং খাত দেউলিয়া হওয়ার পথে। দুর্নীতি আর অদতার কথা এখন সরকারের দায়িত্বশীল লোকদেরও মুখে মুখে।
শেয়ারবাজারে লুটপাট আর পদ্মা সেতু নিয়ে কেলেঙ্কারি শেষ না হতেই রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের অর্থ লোপাটের মতো ঘটনাগুলো দেশের গোটা অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের আলামত দেখাচ্ছে। সুশাসন ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ইমেজকে তিগ্রস্ত করে চলেছে। সরকারের লোকজন এবং মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি নিয়ে যেসব কথা দেশে-বিদেশে আলোচিত হচ্ছে এসবের কার্যকর কোনো জবাবও তারা দিতে পারছেন না।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়টি এখন আর কারো অজানা নয়। সরকার নিজ দলের চেয়েও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বহিরাগত হিসাবে পরিচিতদের ওপর, যারা আওয়ামী লীগের মূলধারার বাইরের শক্তি।
মন্ত্রিপরিষদে এবং উপদেষ্টা হিসেবে সরকারে এদের একচ্ছত্র আধিপত্যে বিরক্ত আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতাকর্মীরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে দলের ভেতরকার এই শক্তি সক্রিয় ভূমিকা না রাখার আশঙ্কা রয়েছে। সে রকমটি হলে নির্বাচনে শাসক দলের জন্য বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিরোধী দলের অবস্থা : বিরোধী দলের দুর্বল অবস্থান এবং আন্দোলনে তাদের প্রলম্বিত প্রস্তুতি আগাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বর্তমানে বিএনপি যে রণাত্মক ভূমিকায় রয়েছে তা থাকতে থাকতেই একটি নির্বাচনের ঘোষণা দিলে তারা আর আন্দোলনে নামার সুযোগ পাবে না।
বিএনপি যদি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থান বজায় রাখে তবে তাদের ছাড়াই নির্বাচন দেয়া হবে। সে নির্বাচনে সরকার সমর্থক অন্যান্য দল অংশ নেবে। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য সমমনা দলের সাথে সরকারের একটি সমঝোতাও হয়েছে। সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির যে বিষয়গুলো বিরোধী দল পুঁজি করে প্রচারণা চালাচ্ছে সে অবস্থায় তাদের নির্বাচনে শরিক করে ঝামেলা বাড়াতে চাইছে না সরকার। সরকারের কাছে যেটাকে সবচেয়ে বড় যুক্তি হিসেবে মনে করা হচ্ছে তা হলো বিরোধীরা আন্দোলনের যে হুমকিই দিক না কেন, বাস্তবে সে সামর্থ্য তাদের নেই।
নির্বাচন ঠেকানোর মতো সামর্থ্যও বিরোধী দলের নেই বলে সরকারপক্ষীয়দের ধারণা। আগাম নির্বাচন দিলে বিরোধী দল বিভক্তও হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, যা সরকারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে। সরকারের একাধিক সংস্থা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সহযোগী শক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেই মনে করে থাকে। বর্তমানে জামায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়েই ব্যস্ত। স্বাভাবিকভাবে সাংগঠনিক কাজ করার সামর্থ্য এখন তাদের সীমিত।
এ অবস্থায় নির্বাচন হলে দল দু’টির মধ্যে ব্যবধান বাড়বে বলে সরকারের বিশ্বাস। এ ছাড়া বিএনপির আগের মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের সময় বিরোধী দলের দাবি মানতে বেগম খালেদা জিয়াকে তার পরামর্শকেরা অনুরোধ করেছিলেন। তেমনিভাবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে কিছুটা আগাম নির্বাচন দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। সেসব পরামর্শ উপো করার পরিণতি ভালো হয়নি বলেই বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন। আরো খারাপ পরিণতির আগেই তাই নির্বাচন দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বিদেশীদের দূতিয়ালি : উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের েেত্র বর্তমান সরকার একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিরূপ আচরণের কারণে শক্তিশালী দাতা ও সাহায্য সংস্থাগুলো সরকারের ওপর বিরক্ত। এসব সংস্থার অভিভাবক হিসেবে পরিচিতির শক্তিগুলোও বাংলাদেশে মতার পালাবদলে অবাধ ও নিরপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প। ে সরকারকে তারা বিভিন্নভাবে বিষয়টি জানিয়েও দিয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের মতার রাজনীতিতে নাক গলানো প্রভাবশালী একটি দেশের সাথে সখ্যের জোরে সরকার সেই শক্তিগুলোর সাথে দরকষাকষি করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থ ছাড় এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে সরকার তাই নিজেদের অবস্থান ণে ণে পরিবর্তন করছে। তারা এখন মনে করছে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দিলে এক ঢিলে দুই পাখিই মারা যাবে। যতদূর জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশের সাথে কোনোরকম সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য নেপথ্যে তৎপরতা চলছে।
সরকারের প্রস্তুতি : আগাম নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিই সরকার নিচ্ছে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সচিবদের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এই সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার সবই অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কাজেই এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন নিরপে ও অবাধ হওয়া সম্ভব। গত সোমবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, তারা আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুত।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের ভেতরে বর্তমানে নির্বাচন প্রস্তুতি জোরালোভাবে শুরু হয়েছে।
সব কাজেই দ্রুততার সাথে তারা এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনে কয়েক দফা পরিবর্তন আনা হয়েছে। সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, জেলা প্রশাসক পদে অনেক ওলট পালট করা হয়েছে। সরকারের অতীব আস্থা ও বিশ্বাসভাজন হওয়া সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পরিবর্তন আসন্ন বলে জানা গেছে।
মাঠপর্যায়েও পুলিশে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বেসামরিক পর্যায়ে এসব পরিবর্তনকে রুটিনমাফিক বলা হলেও তা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি সামনে রেখেই করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সচিবদের সাথে বিশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নির্বাচনমুখী কথাবার্তাই প্রাধান্য পায়। সচিবরা দু’টি দাবির কথা বলেছেন।
এর একটি হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের আদালত অবমাননার আইন সংশোধন করে তাদের জন্য দায়মুক্তির বিধান এবং অন্যটি তাদের বেতন বৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রী সেখানে কোনো প্রতিশ্র“তি দেননি। তবে সচিবদের অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে তুষ্ট করার মতো কথাবার্তাই বলেছেন।
এ দিকে সদ্য মন্ত্রিপরিষদে যে পরিবর্তন এসেছে সেখানে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ যোগ দিতে অসম্মত হওয়ার পরও তাকে আবার কেবিনেটে আনার চিন্তাভাবনা চলছে। তোফায়েলকে দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য করে উপদেষ্টা পদমর্যাদা অথবা পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে কেবিনেটে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।