বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থবছরের বাকি পাঁচ মাসে (ফেব্রুয়ারি-জুন) রেমিটেন্সের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজার) ডলারের দাম কমে যাওয়ায় প্রবাসীরা এখন তাদের সব রেমিটেন্সই ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই রেমিটেন্স প্রবাহ উর্ধ্বমুখি হয়েছে।
এছাড়া সৌদি আরবে কর্মরত প্রবাসীদের আকামা বা কাজের অনুমতিপত্র পরিবর্তনের পদ্ধতি বদলে যাওয়ার কারণেও রেমিটেন্স বাড়ছে বলে জানান তিনি।
ছাইদুর বলেন, “গত বছরের ৪ নভেম্বর আকামা পরিবর্তনের সুযোগ শেষ হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত প্রবাসীদের এ অনুমতির জন্য কিছু অর্থ খরচ করতে হত। সে কারণে বাধ্য হয়ে তারা কম অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।
“এখন আর প্রবাসীদের এর পেছনে কোন অর্থ ব্যয় হবে না। ”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে ১২৫ কোটি ডলারের কিছু বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১২১ কোটি ডলার।
নভেম্বর মাসে এসেছিল ১০৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার। অক্টোবরে ১২৩ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১০২ কোটি ৫৭ লাখ এবং অগাষ্ট মাসে এসেছিল ১০০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।
আর অর্থবছরের প্রথম মাসে এসেছিল ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।
তবে অর্থবছরের সাত মাসে গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৮ শতাংশ রেমিটেন্স কমেছে।
গত অর্থ বছরের জুলাই-জানুয়ারি মাসে ৮৭২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। চলতি বছরের একই সময়ে এসেছে ৮০২ কোটি ২৩ লাখ ডলার।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে এ যাবত কালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ১৩২ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
একক মাস হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে; ১৪৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
ছাইদুর রহমান বলেন, “গত অর্থবছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল।
সে কারণে পরিবার-পরিজন বেশি টাকা পাবে- এই আশায় অনেক প্রবাসী তাদের সঞ্চিত অর্থও দেশে পাঠিয়েছিলেন। ”
সে কারণে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তার আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স দেশে আসে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে প্রবাসীরা এক হাজার ৪১৭ কোটি ৬৫ লাখ (প্রায় ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে পাঠিয়েছেন এক হাজার ৩৮৩ কোটি ৮০ লাখ (১৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন) ডলার।
অর্থাৎ রেমিটেন্স কমেছে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন নির্দিষ্ট অর্থবছরে প্রথমবারের মত রেমিটেন্স আগের বছরের তুলনায় কমে যাওয়ার উদাহরণ ছিল সেটি।
রিজার্ভ ১৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার
রেমিটেন্স বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার মজুদও বাড়ছে। সোমবার দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে এবং এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে জানান ছাইদুর রহমান। ।
গত ১৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মত বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় ১৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। গত ৭ জানুয়ারি রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা ছিল সর্বোচ্চ।
৮ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ৭৬ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর এই সঞ্চয় ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারায় ২৭ জানুয়ারি রিজার্ভ ফের ১৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের হাতে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।