আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সফলতার শর্ত আত্মীয়তার সম্পর্ক

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

প্রযুক্তির নিত্য নতুন আবিষ্কার আমাদের জীবন যাপনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ঈদ কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে গ্রামের বাড়ি কিংবা স্বজন-বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাতের চেয়ে ঘরে বসে টিভি কিংবা ইন্টারনেটে বুঁদ হয়ে থাকতে ভালোবাসেন অনেকেই। এতে শেকড়ের সঙ্গে প্রজন্মের বন্ধন দিনদিন যেমন দুর্বল হয়ে পড়েছে, তেমনি তা সামাজিক ক্ষেত্রেও মানুষকে বদলে দিচ্ছে। ইট-কংক্রিটের খাঁচায় আবদ্ধ আমাদের নগরজীবন এভাবেই দিনদিন মায়া-মমতাহীন রুক্ষ এবং অস্থির হয়ে যাচ্ছে। আত্মীয়তার বন্ধন থেকে আমাদের এমন দূরে সরে যাওয়া সমাজ-সংস্কৃতি তো বটেই, ইসলামের দৃষ্টিতেও নিন্দনীয়।

স্বয়ং আল্লাহ পাক সূরা নিসার প্রথম আয়াতে আমাদেরকে ‘আত্মীয়তার বন্ধন’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সূরা ইসরার ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ পাক আদেশ করেছেন, ‘তোমরা নিকটাত্মীয়কে তাদের হক আদায় করো। ’ সমাজের সবার সাথে মেলামেশা এবং বিশেষ করে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ এবং তাদের সাথে মায়া ও স¤প্রীতির সম্পর্ক চর্চার ক্ষেত্রে প্রিয়নবী সা. এর আদর্শ অতুলনীয়। তিনি নিজে যেমন এসব ব্যাপারে সদা যতœবান ছিলেন, তার সাহাবীগণকেও এসব ব্যাপারে নিয়মিত তাগিদ ও উৎসাহ দিতেন। বুখারি শরীফের বর্ণনায় হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘কেউ যদি চায় যে তার রিযিক প্রশস্ত হোক এবং মৃত্যুর পরও তার সুখ্যাতি স্থায়ী হোক- তবে সে যেন তার আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।

’ তাবারানি শরীফের বর্ণনায় রাসূল সা. বলেছেন, ‘কিছু লোককে আল্লাহ পাক দীর্ঘ জীবন দান করেন, তাদের ধন-সম্পদে প্রাচুর্য দান করেন এবং তাদেরকে সৃষ্টির পর কখনো তিনি তাদের দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকাননি। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, এটা কীভাবে? রাসূল সা. বললেন, কারণ তারা তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসসম্পর্ক রাখে। ’ বুখারি এবং মুসলিমের বর্ণনায় হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহ পাকের আরশের সাথে ঝুলন্ত। সেটি ওখানে বলে চলেছে, যে আমাকে মিলিয়ে রাখবে, আল্লাহ পাকও তাকে মিলিয়ে রাখবেন। আর যে আমাকে ছিন্ন করবে, আল্লাহ পাকও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।

’ তিরমিযির বর্ণনায় রাসূল সা. আরও বলেছেন, অসহায় মানুষকে দান করা একটি সদকা, কিন্তু আপনজনদের মধ্যে যারা অসহায় তাদেরকে দান করলে দুটি সওয়াব। একটি সওয়াব দানের জন্য, আরেকটি সওয়াব সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য। আবু ইয়ালার বর্ণনায় হযরত আনাস রা. রাসূল সা. এর হাদীস বর্ণনা করেছেন, ‘দান-সদকা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে আল্লাহ পাক ওই ব্যক্তিকে দীর্ঘায়ু দান করেন এবং তাকে এর বদৌলতে অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন। ’ অপর এক হাদীসে রাসূল সা. এমন মানুষের জন্য কিয়ামতের দিন সহজ হিসাবের সুসংবাদ দিয়েছেন। এমন আরও অনেক উৎসাহ ও তাগিদের মাধ্যমে রাসূল সা. আমাদেরকে স¤প্রীতি ও সুসম্পর্কের দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।

আর এতে যে শুধু পার্থিব জীবন সুখ ও শান্তিময় হবে- তা নয়, বরং পরকালীন জীবনেও এর বিনিময় অমূল্য এবং আনন্দময়। বংশীয় কিংবা পারিবারিক সামান্য তুচ্ছ কারণে নিজের স্বজনদের সাথে রাগ করে অনেকেই চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত অতি আধুনিক কেউ কেউ গ্রামের মানুষদেরকে অবহেলা করেন। তারা বেড়াতে এলে হাসিমুখে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন। অনেকেই ভাবেন, সাহায্য চাওয়া ছাড়া গ্রামের স্বজনদের শহরে আসার দরকার নেই।

কারো মৃত্যু না হলে গ্রামে যাওয়া হয় না- শহরে এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। গ্রাম-শহরের এমন ব্যবধান তো আছেই, শহরে এ প্রান্তে ও প্রান্তে বসবাসকারী আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রক্ষার ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্বও অনেকে অবহেলা করেন। যানজট এবং ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে তারা ওজর পেশ করেন। এ লোকগুলো হয়তো ভুলে আছেন, পরম শক্তিমান কিন্তু ভেতরের সব জানেন। সূরা রা’দ-এর ২৫ নং আয়াতের মধ্যাংশে আল্লাহ পাক আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তাদের খারাপ পরিণতির ঘোষণা দিয়েছেন।

বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় রাসূল সা. স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ আহমদের বর্ণনায় রাসূল সা. আরও বলেছেন, ‘প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমার রাতে আল্লাহ পাকের কাছে মানুষের আমলনামা পেশ করা হয়, কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখে না- এমন লোকদের আমল তখন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ’ সমাজের অনেক ধনবান মানুষ যারা তাদের সম্পদ ও আভিজাত্যের বলয়ে গরীব আত্মীয়-স্বজনকে ভুলে থাকতেন, পরিণতিতে দেখা যায়, তাদের মৃত্যু হয় অমানবিক কষ্টে এবং অসহনীয় যন্ত্রণায়। নানা রকম রোগে ভোগান্তি এবং নিঃসঙ্গতার অন্ধকারে তাদের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে। এসব পরিণাম যে আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে শাস্তি তা মনে করিয়ে দিয়ে রাসূল সা. বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এমন এক অপরাধ যে, এর শাস্তি আখেরাতে তো আছেই, এর আগেই দুনিয়াতে তা শুরু হয়ে যায়।

’ সুতরাং ব্যস্ততা কিংবা অন্য কিছু কারণ নয়, আমাদের মানসিকতা এবং মানবিকতার অধঃপতনই আত্মীয়-স্বজনদের বন্ধন থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। মোবাইলে মাঝে মাঝে দু-এক মিনিটের খোঁজ খবর কিংবা আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার সুবাদে ছুটির সময়ে দূরের স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সহজলভ্য সুযোগ ব্যবহার করে আমরা এ অসীম পূণ্য ও বরকত লাভ করতে পারি। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘায়ু এবং আয়-রোজগারে সমৃদ্ধির যে সুসংবাদ প্রিয়নবী দিয়েছেন, এসব নেহায়েত তুচ্ছ নয়। আর মৃত্যুর পর আল্লাহর সান্নিধ্য এবং কিয়ামতে সহজ হিসাবের বদৌলতে পরকালও হবে আনন্দময়। --তামীম রায়হান


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।