আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম ধর্মই কী চূড়ান্ত ধর্ম?

আমরা এমন একটা পরিবেশ চাই, যেখানে শিশুরা তাদের পছন্দ-অপছন্দের ধাপগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে বড় হবে।

===ফয়সল সাইফ=== পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলামকে ধরা হয় সর্বশেষ সংস্করণ হিসেবে। এটি পৃথিবীতে এসেছে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে। ইহুদী, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মগুলো ইসলামের আগে থেকেই পৃথিবীতে প্রচলিত ছিল এবং এখনো আছে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন হলো আমাদের কি যোকোনো একটা ধর্ম পালন করলেই চলবে, না সর্বশেষ সংস্করণ হিসেবে ইসলাম ধর্মই চূড়ান্ত ধর্ম? ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম আল কোরআন।

পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে সুরা মায়িদার ৩ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়, যা শিংয়ের আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে। কিন্তু যা তোমরা জবাই করেছ তা ছাড়া। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে জবাই করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয় তা গোনাহের কাজ। আজ কাফিররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো।

আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদানকে সম্পূর্ণ করে দিলাম। এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোনো গোনাহের প্রতি তাঁর কোনো প্রবণতা থাকে না। তবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল”।

উপরোক্ত আয়াতটিতে গভীর কালিতে আলাদা করে দেখানো অংশটিতে যা বিবৃত হয়েছে তাতে আরবী শব্দ ‘দ্বীন’এর সাথে ‘আকমাল’ এবং ‘নিয়ামত’এর সাথে ‘আতমাম’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও দুটোকেই সাধারণত সম-অর্থবোধক মনে করা হয়। তবে, প্রকৃত পক্ষে উভয়ের মধ্যে একটা স্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। সেটা হলো কোনো বস্তুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেলে তা বুঝাতে ব্যবহার করা হয় ‘আকমাল’ শব্দটি। এবং এক বস্তুর আগমনের ফলে অন্য বস্তুর প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেলে সেটা বুঝাতে ব্যবহার করা হয় ‘আতমাম’ শব্দটি।

অতএব এর সারমর্ম এই যে, দুনিয়াতে মানুষের কাছে মহান আল্লাহ তা’য়ালার যে আইন-কানুন ও ধর্মের বিধি-বিধান প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিল তা ইসলামের মাধ্যমে তিনি পূরণ করে দিয়েছেন। আর ইসলাম আসায় আগের সকল নবী-রাসূলদের আইন-কানুন ও ধর্মীয় বিধি-বিধানের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে। এরপর থেকে ইসলামই হলো মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে মানব জাতির জন্য গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবন-বিধান। এর সমর্থনে বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গসপেল অফ বৌদ্ধায় উল্লেখ আছে, ২১৭-২১৮ পৃষ্টায়: আনন্দ বৌদ্ধকে প্রশ্ন করলেন, হে আশীর্বাদ প্রাপ্ত, আপনি যখন চলে যাবেন তখন কে আমাদের পথ দেখাবে? তখন গৌতম বৌদ্ধ বললেন, আমি এই পৃথিবীর প্রথম বৌদ্ধ নই। এমনকি শেষ বৌদ্ধও নই।

ভবিষ্যতে আরও একজন বৌদ্ধ এই পৃথিবীতে আসবেন। যিনি পবিত্র। যিনি সবার ওপরে। যিনি আলোক প্রাপ্ত। যিনি খুব জ্ঞানী আর বিনয়ী।

যিনি মঙ্গলজনক। যার রয়েছে বিশ্ব জগতের জ্ঞান। তিনি প্রচার করবেন একটা ভাল ধর্ম। তিনি যে ধর্ম প্রচার করবেন সেটা শুরুতে গৌরবজনক থাকবে, চরম সময়েও গৌরবজনক থাকবে, শেষ সময়েও গৌরবজনক থাকবে। তিনি যে ধর্ম প্রচার করবেন তার ভিত্তি হবে সত্য।

আর সেটাই হবে সঠিক জীবন দর্শন। তার থাকবে হাজার হাজার শিষ্য। আর আমার মাত্র কয়েকশ শিষ্য। ওপরে বৌদ্ধায় বর্ণিত অংশে কালো কালিতে আলাদা দেখানো বাক্যগুলোতে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে তিনি প্রচার করবেন একটা ভাল ধর্ম। যেটা সব সময় গৌরবজনক থাকবে।

এর ভিত্তি সত্য। আর সেটাই সঠিক জীবন দর্শন। এখন প্রশ্ন হলো সেটাই ইসলাম কিভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের দেখতে হবে আরও যে একজন বৌদ্ধ আসবেন তিনি কে? এ সম্পর্কে চিক্যমাতি সিংহনাথ সুতান্ততে উল্লেখ আছে, বি-১১১৭৬: আর একজন বৌদ্ধ আসবেন যার নাম মায়িত্রি। যিনি পবিত্র। এই মায়িত্রি শব্দটির অর্থ হলো ক্ষমাশীলতা, স্নেহময়, করুনাময়।

যার আরবি করলে দাঁড়ায় ‘রাহমা’। আর পবিত্র কোরআনে সুরা আম্বিয়ার ১০৭ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ আছে, ‘আর আমি তোমাকে (নবী) প্রেরণ করেছি বিশ্ব জগতের ওপর রহমত হিসেবে’। এটা স্পষ্টই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কেই নির্দেশ করছে। তারপরও আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য দেখা যেতে পারে গসপেল অফ বৌদ্ধার ২১৪ নাম্বার পৃষ্টায়: উল্লেখ আছে, ‘মায়িত্রির ৬টি গুণ থাকবে। (১) তিনি আলোকপ্রাপ্ত হবেন রাতের বেলায়।

(২) আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি উজ্জল হবেন। (৩) তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা যাবেন। (৪) তিনি রাতের বেলা মারা যাবেন। (৫) মারা যাওয়ার সময় তিনি উজ্জল হবেন। (৬) তাঁর মারা যাওয়ার পর পৃথিবীতে আর কখনো তাঁকে স্বশরীরে দেখা যাবে না।

এই হলো মায়িত্রির ৬টি গুণের কথা। যারা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে জানে, তাঁরা এটা মানবে যে, তাঁর এই সব কয়টি গুনই ছিল। তিনি হেরা গুহায় রাতের বেলাতেই ওহী পেয়েছিলেন। ওহী প্রাপ্ত হওয়ার সময় তাঁর চেহারা উজ্জল হয়েছিল। তিনি স্বাভাবিকভাবেই মারা যান।

তিনি রাতেই মারা গিয়েছিলেন। মারা যাওয়ার সময় তাঁর চেহারা উজ্জল হয়েছিল। আর তাঁর কোনো প্রতিকৃতি মুসলমান তথা বিশ্বের কোনো মানুষের কাছে নেই। হাদিস শরীফে প্রথম পাঁচটি গুনের কথা আপনার খুঁজে পাবেন। আর শেষটা নিজেরাই জানেন।

পৃথিবীতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছাড়া আর একজন মানুষও আপনি খুঁজে পাবেন না যার একসাথে সব কয়টি গুনই ছিল। তো যেহেতু মায়িত্রি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সেহেতু তাঁর প্রচারিত ধর্ম ইসলামই হলো সঠিক জীবন দর্শন। তারপর হিন্দুদের ভবিষ্যত পুরানে এর সমর্থনেই উল্লেখ আছে, ৩য় পর্ব, ৩য় খন্ড, ৩য় অধ্যায়: ১০ থেকে ২৭ অনুচ্ছেদ: বিদেশিদের বসবাসের স্থান নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে যে শত্রুরা আগে রাজত্ব করত এখন সেখানে এসেছে আরও শক্তিশালী শত্রু। আমি একজন মানুষকে পাঠাব।

যার নাম হবে মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি মানুষকে পরিচালিত করবেন সরল পথে। হে রাজা ভোজ তুমি পিশাচদের রাজ্যে কখনোই যাবে না। কারণ আমি আমার দয়া দিয়েই তোমাকে পবিত্র করব। তারপর একজন দেবতূল্য মানুষ রাজা ভোজের কাছে এল।

বলল যে, আর্য ধর্ম পৃথিবীতে প্রতিষ্টিত হবে। এটা হবে ইশ্বর পরমাত্নার আদেশে। আমার অনুসারীদের খাৎনা দেয়া থাকবে। তাঁদের মাথার পেছনে কোনো টিকি থাকবে না। তাঁরা মূখে দাড়ি রাখবে।

তাঁরা একটা বিপ্লব করবে। তাঁরা প্রার্থনার জন্য আহবান করবে। তাঁরা সব হালাল খাবার খাবে। তাঁরা বিভিন্ন পশুর মাংস খাবে। কিন্তু শুকুরের মাংস খাবে না।

তাঁরা লতাপাতার মাধ্যমে নিজেদের পবিত্র করবে না। নিজেদের পবিত্র করবে যুদ্ধের মাধ্যমে। তাঁদের সম্প্রদায়ের নাম হবে মুসলমান। এখানে লক্ষ্য করুন যে, উপমহাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একজন বিদেশি। তাঁকে ডাকা হয়েছে সংস্কৃত নারাশাংসা নামে।

যার নর মানে মানুষ। আর শাংসা মানে প্রশংসা। অর্থাৎ যে প্রশংসা করে। এর আরবী করলে দাঁড়ায় মুহাম্মদ। ওপরে উল্লেখিত কথামতো মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুসারীদেরই খাৎনা দেয়া থাকে।

আমাদের মুসলমানদের মাথার পেছনের কোনো টিকি থাকে না। আমরা মূখে দাড়ি রাখি। আমারা প্রার্থনার সময় আযান দিয়ে আহবান করি। আমরা হারাম-হালাল মেনে চলতে বাধ্য। আমরা পশুর মাংস খাই।

তবে, শুকুরের মাংস খাই না। এসব আর কাউকে না আমাদেরই নির্দেশ করছে। আর তাই এখানে যে আর্য ধর্মের কথা বলা হয়েছে সেটাই ইসলাম ধর্ম। আর্য-ইসলাম, বৌদ্ধ-নবী; এগুলো সম্পূর্ণই ভাষাগত এবং আঞ্চলিক পার্থক্যর ব্যাপার। মূলত এসবে তেমন দূরত্ব নেই।

আর তিনি যে মুহাম্মদ (সাঃ)-ই এটা আমি পিতা-মাতা-বংশ পরিচয় সহ বিস্তারিতভাবে প্রমাণ করব বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে যে ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছে সেই অংশে। এখানে এটা আলোচ্য বিষয় নয়। খ্রিষ্টানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের নিউ টেষ্টামেন্টে উল্লেখ আছে, গসপেল অফ জনের ১৬ অধ্যায়ের ১২-১৩ অনুচ্ছেদে: তোমাদের আরও অনেক কিছু বলার ছিল। কিন্তু এখন তোমরা সেসব বুঝতে পারবে না। সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তখন তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন।

তিনি নিজে থেকে কিছু বলবেন না। বরং তাঁকে যা শিখিয়ে দেওয়া হবে তাই তিনি তোমাদের বলবেন। আর যা কিছু ঘটবে তাও তিনি তোমাদের জানাবেন। এখন আমাদের স্পষ্ট হওয়ার বিষয় সেই সত্যের আত্মা কে? আর তার দেখানো পূর্ণ সত্য কী? আমি বলি তিনি অবশ্যই মুহাম্মদ (সাঃ) আর সেই পূর্ণ সত্য হলো তাঁর প্রচারিত ধর্ম ইসলাম। কারণ বাইবেলের নিউ টেষ্টামেন্ট মতে একজন সত্যের আত্মা আসবেন।

তিনি অবশ্যই পবিত্র আত্মা নন। কারণ খ্রীষ্টমতে ত্রি-ইশ্বরবাদের এক অংশ বলে বিবেচিত পবিত্র আত্মা যীশুখ্রীষ্ট পৃথিবীতে থাকার সময়ই ছিলেন (দ্রঃ গসপেল অফ ম্যাথিও: অধ্যায় ৩, অনুচ্ছেদ ১৬-১৭)। আর যীশু পবিত্র বাইবেলের নিউ টেষ্টামেন্টে বলে গেছেন, তাঁর উল্লেখ আছে গসপেল অফ জনের ১৬ অধ্যায়ের ৭ অনুচ্ছেদে: তবুও আমি তোমাদের সত্য কথা বলিতেছি যে, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল; কারণ আমি না গেলে সেই সাহায্যকারী তোমাদের নিকটে আসবেন না। অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্ট পৃথিবী থেকে না গেলে সেই সত্যের আত্মা আসবেন না। আর যীশু পরবর্তী যুগে যদি কেউ ধর্মীয় দিক থেকে একটা বিপ্লব সৃষ্টি করে থাকেন তবে, তিনি অবশ্যই সমকালীন মানুষের মূখে আল-আমিন বা সত্যবাদী উপাধিতে ভূষিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।

তিনিই সত্যের আত্মা। গসপেল অফ জনের ১৪ অধ্যায় ১৬ অনুচ্ছেদে তাঁকে বলা হয়েছে সাহায্যকারী। খ্রিষ্টানরা অবশ্য বলে এই সাহায্যকারীই পবিত্র আত্মা। আসুন আমরা দেখি এই সাহায্যকারী শব্দটা কোথা থেকে এল। এই শব্দটির মূল শব্দ হলো গ্রীক পেরাক্লিট।

যে ভাষায় বাইবেল নাযিল হয়েছিল। শব্দটি এসেছে পেরাক্লিটরস থেকে। যার অর্থ যে প্রশংসা করে। আর মুহাম্মদ শব্দের অর্থও ঠিক তাই, প্রশংসা কারী। মানে কী দাঁড়াল? আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন।

ইহুদীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্টের ‌‌‌‘ইশায়া’তে উল্লেখ আছে, ২৯ অধ্যায় ১২ অনুচ্ছেদ: আসমানী কিতাব দেওয়া হবে সেই নবীকে যে শিক্ষিত নয়। তাঁকে যখন বলা হবে এটা পড়, আমি প্রার্থণা করছি। সে বলবে আমি পড়তে জানি না। আর ঠিক এটাই ঘটেছিল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনে। তাই আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতেই পারি যে ধর্মগ্রন্থগুলোর মতে ইসলামই চূড়ান্ত ধর্ম।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.