আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতালে পণ্য পরিবহনে বিশেষ নিরাপত্তা চান ব

টানা হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুর আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঠেকাতে বিশেষ নিরাপত্তা চান ব্যবসায়ীরা। টানা হরতালের কারণে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সার্বিক অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যে গুনতে হচ্ছে অব্যাহত লোকসান। পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ায় দাম বাড়ছে দফায় দফায়। ফলে ভোক্তাদেরও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। অন্যদিকে কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল সঠিক সময়ে আনা-নেওয়া করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার টন শাকসবজি। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ মেটায় মাছ, ডিম ও মুরগি। কিন্তু হরতালের কারণে মাছের পোনা, একদিনের মুরগির বাচ্চা বা ব্রয়লার, মুরগি ও ডিম আনা-নেওয়াতে কঠিন সমস্যার মুখে পড়েছেন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। এ জন্য পণ্য পরিবহনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, পণ্যবাহী ট্রাকে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারা বসানো কাজটা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু সরকার যদি এটা করতে পারে, তবে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের হাত থেকে রক্ষা পাবে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলে সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে কর্মসংস্থানে ভাটা পড়বে। ফলে সরকার-বিরোধী দল সাধারণ জনগণ সবাইকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। অতি জরুরি নিত্যপণ্য উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলেছেন, টানা হরতালে বন্দরের পণ্য খালাস ও পরিবহন ব্যবস্থায় অচলাবস্থা দেখা দিচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়ছে জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ের ব্যবসা-বাণিজ্যও। এতে কৃষক পর্যায় থেকে পণ্য আসা প্রায় বন্ধের উপক্রম। কিছু পণ্য এলেও পরিবহন স্বল্পতার কারণে তা নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এর প্রভাবে মজুদ থাকা নিত্যপণ্য, বিশেষ করে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেলসহ মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। মাঠে বা আড়তে পচে নষ্ট হচ্ছে টনকে টন কাঁচা শাকসবজি। সব মিলিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। এদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় নিত্যপণ্য সরবরাহে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা বিকল্প পথ খুঁজছেন।

সূত্র জানায়, প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আসে। কিন্তু হরতালের কারণে ১০০ এর বেশি ট্রাক ঢুকতে পারে না। ফলে সরবরাহ সংকটে শাকসবজির দাম বাড়ে দফায় দফায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টনের বেশি চাল প্রবেশ করে। কিন্তু হরতাল চলাকালে তা বন্ধ থাকছে। এমনকি হরতালের আগের দিনও সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এতে বিকল হয়ে পড়ছে সরবরাহ চেইন। যার ফলে দামও বাড়ছে দফায় দফায়।

আন্তঃজেলা পণ্য পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোয় পণ্যবাহী গাড়ি যাচ্ছে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে একই পরিমাণ রপ্তানি পণ্য নিয়ে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ফেরত আসে চট্টগ্রাম বন্দরে; হরতালে যার সিংহভাগই বন্ধ থাকে। রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টন মাছের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু হরতালের কারণে সরবরাহ হয় ৫০০ টনেরও নিচে। বিশেষ করে রাজধানীর আশপাশে যেসব মৎস্য খামার রয়েছে, তারা ঠিক সময়ে মাছের পোনা পরিবহন করতে পারছেন না। যার ফলে মৎস্য উৎপাদন ও পরিবহন ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের এখন নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে ব্যবসায়ীদের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই হরতালে পণ্য পরিবহনের জন্য অতীতের মতো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দাবি করছি। তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহনে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জরুরি। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল ও কৃষিজাত খাদ্যশস্য পরিবহনে পুলিশ-নিরাপত্তা দ্রুত প্রদান করা হোক। এটা করা হলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। তার মতে, রাজনীতিবিদরা যেহেতু সংলাপের মধ্য দিয়ে সমঝোতায় আসতে পারছেন না, তাই তাদের উচিত হবে দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসায়ীরা যাতে ব্যবসা করতে পারেন তেমন পরিবেশ নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হরতালে পণ্য পরিবহনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই জরুরি। পোশাক শিল্প শুধু আমদানি-রপ্তানির বিষয়ই নয়, এর উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণভাবে শিল্পের কাঁচামাল পণ্য পরিবহনেও নিরাপত্তা দরকার। তার মতে, কৃষিজাত পণ্যের ক্ষেত্রে এটা আরও জরুরি। কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে এই বিশেষ নিরাপত্তা দিতে হবে। কিন্তু সহিংস এই হরতালে বিশেষ ব্যবস্থা কতটুকু কাজে আসবে সেটা ভাবার বিষয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমিনুল হক বলেন, সারা দেশ পণ্য সরবরাহে পুলিশ পাহারা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য কঠিন কাজ। তবে এটা করতে পারলে ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা পাবে।

ক্ষতির হাত থেকে মুক্তি পাবে দেশের অর্থনীতি। আর ভোগান্তি কমবে সাধারণ ভোক্তাদের। বাংলাদেশ পোল্ট্রি মালিক সমিতির সভাপতি আবু সিদ্দিক বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পোল্ট্রি খাতে বিশেষ কোনো নজর দেয়নি। ফলে এ খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলমান হরতাল কর্মসূচির কারণে একদিনের বাচ্চা, মুরগির খাবার, ভ্যাকসিন, বড় মুরগি বা ডিম পরিবহনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনছেন পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমত, হরতাল না করা এবং দ্বিতীয়ত, সরকার পরিবহন ব্যবস্থায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.