চুপ চাপ থাকতে পছন্দ করি।
ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময়কার ঘটনা। স্কুল চেঞ্জ করি তখন, চলে আসি মিরপুরের একটা স্কুলে উইলস ফ্লাওার থেকে। প্রথম দিনে ক্লাসে আম্মুর সাথে গিয়েছিলাম। আম্মুর একমাত্র ছেলে আমি, তার ছেলে প্রথম বেঞ্চে বসবে না তো কে বসবে! আম্মু আমাকে একদম প্রথম বেঞ্চের প্রথম আসনেই বসিয়ে দিল।
মনোযোগ দিয়ে লক্ষি ছেলের মত নতুন খাতায় নাম-রোল লিখছিলাম; লাল-নীল-সবুজ-হলুদ হরেক রকমের রং বেরঙের খাতা, একেক বিষয়ের জন্য একেক রঙের। এমন সময় হল কী, ক্লাসের অনেক সুন্দরি একটা মেয়ে আমাকে ভ্যাবাচেকা খাইয়ে দিয়ে পাশ থেকে আমার গলায় জড়িয়ে ধরে ডান গালে একটা কিস করে দিল! এই যা, কী হল কী হল - আমি বুঝতে পেরে বেঞ্চ থেকে পরেই যাচ্ছিলাম ফিট হয়ে। ভাগ্যিস আম্মু ছিল দরজায় দাড়িয়ে! জীবনের প্রথম চুম্বন পেয়ে সেদিন আর ক্লাস করতে পারিনি। বাসায় এসেই একেবারে এক হপ্তার জন্য জ্বরের মধ্যে পরি। আর সে কী জ্বর রে বাবা, আম্মু কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির ১৪ পুরুষ উদ্ধার করছিলো!
জ্বর কমার পথে।
হালকা জ্বর থাকলেও শরীর মোটামুটি সুস্থ এমন একদিন আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে লাগলাম। নিজের কাছেই নিজেকে নায়ক নায়ক মনে হচ্ছিল; হাজার হোক, একটা মেয়ে আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে কিস করে দিল আমি নায়ক তো অবশ্যই! আনমনেই হাসছিলাম আর নিজেকে আয়নায় দেখছিলাম – “উমম...দেখি তো চুলে বিভিন্ন রকম সিঁথিতে আমাকে কেমন লাগে দেখতে?/ব্যাকব্রাশে সুন্দর লাগে না মাঝ খানে সিঁথিতে?” (মাথায় তখন আমার আর্মি ছাট থাকা সত্তেও আমার ভাষায় ব্যাকব্রাশ আর সিঁথি হয়েছিল সেগুলো)।
হঠাত আয়নায় খেয়াল করলাম, আমি হাসলে না আমার ডান গালের ছোট্ট একটু জায়গা জুড়ে কেমন যেন গর্ত হয়ে যায়; ঠিক ওই জায়গাটায় যেখানটায় ওই মেয়েটা কিস করে দিয়েছিল! এর আগে কেন যেন কখনোই সেটা চোখে পরেনি। টোল কী জানতাম না সেটাও। ওই গর্ত টা আবিস্কার করা মাত্রই গগণ বিদারী সে এক চিৎকার আমার, “ আম্মু...আম্মু কোথায় তুমি? ওই মেয়েটা চুমু দিয়ে আমার গাল গর্ত করে দিয়েছে দেখ”!
তারপর আর কী, হাসতে হাসতে আম্মু বলে, “বেক্কল পোলা কোথাকার!” সেদিনই জানলাম টোলের ব্যাপারটা সর্বপ্রথম, আর জানলাম এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের কথা – গালে যে ছেলের টোল পরে তার প্রথম স্ত্রী মারা যায়।
আমার প্রথম স্ত্রীও তাই মারা যাবে।
সুস্থ হয়েছি স্কুলে যাব। এমনি এক সময়ে কোন এক বিকেলে আব্বু সওদা করতে দোকানে যাচ্ছে আর আমিও আমার ২ টাকা ৫ টাকা করে জমানো ২০ টাকা সাথে নিয়ে তাঁর সাথে দোকানে চলে আসি। খুব সুন্দর একটা পেন্সিল কিনি। সুন্দর পেন্সিল মানে ওই যে ওই পেন্সিল গুলো, ক্যাপে গোলাপি রঙের রাবার লাগানো থাকে, সীস ভেঙ্গে গেলে ভাঙ্গা নিব পিছনে ঢোকানোর পর নতুন করে আরেকটা বের হয় যে, চিনতে পেরেছেন?
মনের কিছু অংশে ফুর্তি আর বাকি অংশে প্রচণ্ড উত্তেজনা নিয়ে স্কুলে গেলাম।
গেলাম এবং ক্লাসে ঢুকেই প্রথম বেঞ্চে বসা অবস্থায় দেখলাম তাকে! আর আমার ছোট্ট হৃৎপিণ্ড, গলা দিয়ে বের হয়ে আসতে গিয়েও আসতে পারেনি, খিঁচ মেরে শক্ত রেখেছিলাম নিজেকে – আমি নায়ক, আর নায়কদের অনেক সাহস থাকতে হয়। ব্যাগ টা বেঞ্চে রেখেই ব্যাগের ওপরের কম্পার্টমেন্ট থেকে পেন্সিলটা বের করে নিয়েহাজির হলাম তার সামনেঃ
- নাও, পেন্সিল টা তোমাকে গিফট করলাম।
- আমাকে, কেন?
- আমি তোমার সাথে ভাব করতে চাই। (বুড়ো আঙ্গুল বাড়িয়ে দিয়ে), আমার সাথে ভাব করবে?
- মেয়েদের দেখলেই খালি ভাব করতে মন চায় তাইনা? তুমি জান আমি ক্লাসের ক্যাপ্টেইন? আসুক তোমার আম্মু, যদি বিচার না দিয়েছি!
লজ্জায় লাল হয়ে, হতবাক হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম কিছুক্ষন। মাথা হেট করে নিজের বেঞ্চে চলে আসি, ভাবতে থাকি সাত-পাচঃ
কী আমার ভাব করাকে এভাবে অগ্রাহ্য করল সে/এভাবে অপমান করল সে!/আচ্ছা ওই না আমাকে কিস করেছিল প্রথমে? আমি এর প্রতিশোধ চাই, কঠিন প্রতিশোধ!/ ওর ব্যাগে আমার ফ্লাস্কের সমস্ত পানি ঢেলে দিব হেন-তেন।
নাহ, প্রতিশোধ নেইনি আর। জীবনের প্রথম ক্রাশের অপর আবার কিসের প্রতিশোধ!
জানিনা কোথায় আছে সে, কেমন আছে। ওকে এখনো মনে পরে। আমার স্ত্রীকে প্রথমেই বলে দিব তার কথা। জানি অনেক ক্ষেপে যাবে সে।
আর খ্যাপানোর জন্যই তাকে কথাটা বারবার বলব।
-আমাকে বিয়ে করেছিলে কেন তাহলে? ওই মাইয়ারে গিয়া বিয়া করতে পারলানা খুইজ্যা? অল্প বয়েসে বেশি পাকনা হইয়া গিয়েছিলে তুমি! ইস কি পিরিতের কথা গো, “আমাল সাতে ভাব কলবা তুমি??”...
ও হ্যাঁ, মেয়েটার নাম ছিল জুঁই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।