আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘রাজনীতি করেন আপনারা, আর পুড়ছি আমরা’

৩৫ বছর বয়সি মন্টু পালের এমন মরণ প্রত্যাশিত ছিল না তার পরিবারের কাছে, মেনেও নিতে পারছেন না। তাই তারা সবটুকু ক্ষোভ উগড়ে ফেললেন চলমান সংঘাতময় রাজনীতির ওপর।
“রাজনীতি করেন আপনারা আর মরছি-পুড়ছি আমরা। কই আপনাদের তো কোনো ক্ষতি হয় না,”  রাজনীতিকদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ ঘটালেন মন্টু পালের শ্যালক প্রদীপ পাল।
অকালে স্বামী হারানো বোন সঞ্চিতা পালের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন এখন যুবক প্রদীপ।

কেন এত উদ্বেগ তা বোঝা গেল তার পাশে থাকা বাবা পরেশ পালের কথায়।   
“পোড়াকপালী মেয়ের এখন তো আর কেউ রইল না। সে কিভাবে বাঁচবে- হিন্দুদের তো দ্বিতীয় বিয়ে হয় না,” কান্না আটকে একথা বলেই আবার কান্নায় ভেড়ে পড়েন বৃদ্ধ পরেশ।
বাবার পাশে তখনো সঞ্চিতা বিলাপ করে যাচ্ছেন- “ভগবান আমার দিকে কেন এমন নিষ্ঠুরভাবে তাকাল? আমার স্বামী কেন হরতালের বলি হল?”
তাঁতিবাজারের একটি সোনার দোকানের কর্মী মন্টু গত ১০ নভেম্বরের হরতালের রাতে গন্তব্যে যেতে উঠেছিলেন একটি লেগুনায়।
চট্টগ্রামে হরতালে দেয়া আগুনে পুড়ছে একটি ট্রাক।

বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে ওই লেগুনায় ছোড়া হয় পেট্রোল বোমা, তাতে কয়েকজনের সঙ্গে দগ্ধ হন তিনি।  
চট্টগ্রামে হরতালে দেয়া আগুনে পুড়ছে একটি ট্রাক।
আহত মন্টুকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও বোমাহামলায় অগ্নিদগ্ধ অনেকে সেখানে চিকিৎসাধীন।
মন্টু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই একে একে মারা যান মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, মনির মিয়া, নাসিমা বেগম; যারা সবাই হরতালের আগুনের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন।


শুক্রবার সকালে মারা গেলেন মন্টু পালও, আর তার মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে  মৃত্যু হয় আসাদুল গাজী নামে এক অটোরিকশা চালকের।
মন্টুর মৃতদেহ নিতে মর্গের সামনে ছিলেন স্ত্রী সঞ্চিতা, শ্বশুর পরেশ ও শ্যালক দীপক; সেখানে তাদের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সংঘাতের রাজনীতির বলি হলেও মন্টু কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না বলে জানান প্রদীপ।
“ভাই তো আমার কোনো ভোট চাইত না। আমি সত্যি করে বলছি ভাই, আমরা হিন্দু ঠিকই, কিন্তু কখনো আমার বোন জামাই একজনকেও বলেনি যে, নৌকা মার্কায় একটি ভোট দেন।


পরেশ জানান, কাজ সব সময় থাকত না বলে মন্টুর সংসারে স্বচ্ছলতা ছিল না।
“আমার জামাই দিন এনে দিন খেত, এক সপ্তাহে স্বর্ণের কাজ থাকত তো অন্য সপ্তাহে বেকার। ”
গহনার দোকানের কারিগর মন্টু পাল চার বছর আগে মন্টু-সঞ্চিতার ঘরে একটি সন্তান এলেও তিনদিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়। “মেয়ের এখন আর কেউ রইল না। সে কী নিয়ে বাঁচবে,” বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন পরেশ।


গহনার দোকানের কারিগর মন্টু পাল
মণ্টুর বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুরে, থাকতেন নারায়গঞ্জের পাগলার কামালপুরে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিল মণ্টু।
যে গাড়িতে বোমা ছোড়ায়  মন্টুসহ ছয় জন অগ্নিদগ্ধ হন, সেই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা করেছে। এই মামলায় বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়াঁ জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে হরতালের এই আগুনের জন্য বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সরকারকে দায়ী করে বলা হচ্ছে, আন্দোলন নস্যাতের জন্য সরকারি ‘লোকজনই’ এই কাজ করছে।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.