আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম ও মানবতার প্রশ্নে ফরহাদ মজহারের অবস্থান ঘোলাটে

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।

আমি দীর্ঘদিন ধরেই জনাব ফরহাদ মজহার সম্পর্কে সচেতন। তার স্বতন্ত্র চিন্তা, লেখার আলাদা স্টাইল খারাপ না।

ডিগ্রি গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্রোতের বিপরীতে চলার সাহস প্রশংসার্হ। তবে বস্তুবাদিতার সঙ্গে ভাববাদিতার সমন্বয় তিনি ঘটাতে পারেননি। তা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত জীবনে তার ভাববাদের চর্চা সম্ভবত ভাববাদের প্রতি মানবিক আত্মার সহজাত আকর্ষণ, অথবা ভণ্ডামী। আরেকটি ব্যাপার, তিনি একজন ভিন্নধারার সমাজতন্ত্রী, মার্ক্স-লেনিনের অন্ধ অনুসারী।

ধর্মের প্রতি তার গুরুদের ‘উদারতা’ প্রমাণে তিনি সিদ্ধহস্ত। তবে ইসলাম, আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি এ পর্যন্ত তিনি যে অভিযোগ তুলেছেন ও কটাক্ষ করেছেন- কখনো সূক্ষ্ম, আবার কখনো স্থুল, আলেমদের পক্ষ থেকে তাকে জবাবদিহিতা ও প্রশ্নের মুখোমুখি করা উচিত। ইদানিং তার একটা কবিতা পড়েছি... আমার প্রতিবাদের ভাষা নেই। আর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে তার লিভ টুগেদার, হস্তমৈথুন মতবাদ... ইদানিং ফরহাদ মজহারের রাজনৈতিক বক্তব্যে অনেকেই বিভ্রান্ত। কেউ কেউ আস্তিকতার আবরণে নাস্তিকতা লালন করেন যা বিশেষ দূরবীন ছাড়া দেখা সম্ভব হয় না, নাপাক ও শিরক-কুফরে ডুবে থেকেও তারা ধর্মের ‘ব্যাখ্যা’ করতে চান।

জনাব মজহার অবশ্য বলেছেন, ‘ভিন্নমত পেলে অবশ্য আমি ভিন্নভাবে ভাবব। কারও জানা থাকলে আমাকে জানাবেন। কৃতজ্ঞ থাকব। ’ তবে এখানে অনেক প্রশ্ন আছে। কথার কথা অনেকেই এমনটা বলে থাকেন, বাস্তবতার সঙ্গে যার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক থাকে না।

ভিন্নমত অনুসন্ধানের বাস্তবতা কি? জ্ঞান কাউকে অনুসন্ধান করে না, বরং জ্ঞানকেই অনুসন্ধান করে নিতে হয়। তিনি মার্ক্স-এঙ্গেলস-লেনিনকে ধর্মের পক্ষের লোক ‘হিশাবে’ হাজির করেন। বাংলাদেশে তার প্রচুর অনুসারী আছে। আমি এক অনুসারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছিলাম। উপলব্ধি করতে চেষ্টা করেছি তাদের আসল সমস্যাটা কোথায়।

ফরহাদ মজহারের ‘মোকাবিলা’ বইটি পড়েছি। তার ভাষায়, ‘ধর্মের’ সঙ্গে মোকাবিলা। অন্যকথায় ‘ধর্মতত্ত্বের’ সঙ্গে মোকাবিলা। আমার একটি কাজ হবে তাদের সঙ্গে ‘মোকাবিলা’। এ ধরনের বই আমাদের শ্রেণীর কেউ সাধারণত পড়েন না।

পড়ার প্রয়োজনও নেই, যদি ধর্মীয় আলেমদের পক্ষ থেকে এসবের যথাযথ জবাব বা এ শ্রেণীর পাল্টা শক্তিশালী লিখনি থাকে। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখনই, যখন উলামাগণ এগুলো থেকে উদাসীন থাকেন। এই সুযোগে মার্ক্সবাদ, ভাববাদ, কোয়ান্টাম মেথড জাতীয় থিওরিগুলো যুবসমাজকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করে। এসব থিওরির দ্বারা সংশয়ের নিরসন না ঘটে বরং নতুনভাবে সংশয় সৃষ্টি হয় যুবসমাজের মনে। যার পরিণতি অতি ভয়াবহ এবং শীঘ্রই সমাজে এর কুপ্রভাব পড়ে।

আমাদের সমাজেও অনেক আগে থেকেই পড়তে শুরু করেছে। চিন্তাশীলগণ যদি এদিকে নজর না দেন তাহলে পরবর্তীতে তারা সমাজে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে, রাষ্ট্র ক্ষমতা পেলে বিরোধী মত-পথের লোকদের উপর স্টিম রোলার চালাবে তা প্রতিহত করতে পারবেন না। এত সূক্ষ্ম নাস্তিকতা! এর চেয়ে সরাসরি নাস্তিকতা অনেক ভালো। অনেকদিন আগে আমি তাকে একটি ইমেইল করেছিলাম যার একটা অংশ ছিল এ রকম, “শ্রদ্ধেয় জনাব ফরহাদ মজহার, আপনার অমুক বইটি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। ভালো লাগল আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতা দেখে।

তবে বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি লাইনের সঙ্গেই আমার দ্বিমত রয়েছে। কিন্তু যেহেতু লেখার জবাব কেবল লেখা দিয়েই পুরোপুরি দেয়া যায় না (অর্থাৎ কাজ-কর্মে দিতে হয়), তাই আপাতত লিখতে উদ্গ্রীব নই। ধর্ম নিয়ে আমার আগেও পড়াশুনা আছে, এখনো পড়ছি। সঙ্গে যোগ করেছি মার্ক্সবাদ ও সমাজতন্ত্র। বছরখানেক পর ‘মোকাবিলার মোকাবিলা’ লেখার ইচ্ছে আছে।

... আপনার সঙ্গে বসতে চাই। ” কোনো উত্তর পাইনি। আমি খুব ভালো করেই জানি, 'মোকাবিলায়' তিনি যা লিখেছেন, ধর্ম, আল্লাহ, নবী, মুজেযার উপর ‘বুদ্ধি’ দ্বারা যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, এর জবাব না পাওয়া পর্যন্ত সাধারণত তিনি সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ফিরে আসতে পারেন না। আর বর্তমানে তার ওসব প্রশ্নগুলোর জবাব কোথাও তেমন একটা দেখাও যায় না। সুতরাং তার মত পাল্টানোর প্রশ্নই আসে না, যদি না ‘অলৌকিক’ কিছু ঘটে।

তিনি ইদানিং পত্রিকায় যেসব রাজনৈতিক বক্তব্য ঝাড়ছেন, অনেকেই জানেন না তার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি কী। জানলে হয়তো কিছুটা হলেও বুঝতে পারতেন তার সেই লেখা ও এই লেখা একই সূত্রে গাঁথা। আমি তার ধর্মের সঙ্গে সেই ‘মোকাবিলা’ আর হালে ‘সহাবস্থান’ “এক পর্যায়ে ধরে ফেলতে পারি”। যাহোক, ব্যস্ততা কাটিয়ে ‘মোকাবিলার মোকাবিলা’ লিখা একটু সময়সাপেক্ষ হলেও সামনাসামনি বসার চ্যালেঞ্জ এনিটাইম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.