ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের।
যে নারী তার আপন দেহ ভাড়ায় খাটায় তাকে কি বলে সম্বোধন করা হয় আমরা সবাই জানি। কিন্তু যে তার মনন ভাড়ায় খাটান তাকে কি বলে আমি জানিনা।
কাজেই সম্বোধন ছাড়াই বলছি আমাদের দেশে এদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে সঠিক তথ্যটি মেলা সত্যিই ভীষণ দূরহ হয়ে পড়েছে। এমনকি এদের ভিড়ে যারা সব ধরনের মোহ মুক্ত থেকে সত্য কথাটি বলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এখন তাদেরকেও আলাদা করে চিনে নেয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ফলে এত এত কথার মধ্যে থেকে আমাদের সত্যকে খুঁজে বের করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
এই ভদ্রলোকদের আনা গোনা মিডিয়া পাড়া থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্র। তারা বিরতীহিন ভাবে জ্ঞানদান করে চলেছেন।
যদিও সেটা জ্ঞানদান, না বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গের কর্মকাণ্ডকে জায়েজ করার অপচেষ্টা তা আলোচনা সাপেক্ষ।
তাদের সম্পূর্ণ একপেশে কথাবার্তা, বিপরীতমুখী অবস্থান শুধু যে মানুষকে বিভ্রান্তই করছে না তা নয় সেই সাথে তারা নিজেরাও নিজেদের নামিয়ে আনছেন সেই ঘৃণিত অবস্থানে। একজন মানুষ তার পেটের দায়ে যদি দেহ বিক্রি করে বাচার চেষ্টা করে; সমাজের সবার কাছে চরম ঘৃণার পাত্র হতে পারে। তাহলে শুধুমাত্র বাড়তি লাভের আশায় এই মনন বিক্রি করা মানুষ গুলোর সম্মান কেন অক্ষুণ্ণ থাকবে?
পাঠক জানি, আপনি খড়গ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু অপেক্ষা করুন।
আগে আমার এই প্রশ্নটির উত্তর দেন, আপনি তো এই বলবেন যে, প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যেকের মতামত প্রদানের অধিকার আছে। আমি অবনত মস্তকে আপনার সে যুক্তি মেনে নিচ্ছি।
কিন্তু এটা তো বলুন, সত্য কি কখনো দুই রকম হয়, কিংবা মিথ্যা?
একটি বিষয়কেই শতভাবে পর্যালোচনা করা যায়। ঘটনার আসল সত্যটিকে কি এড়িয়ে যাওয়া যায়? যায় না।
আমাদের এই আলোচ্য জ্ঞানপাপীরা সর্বদাই সত্যের সাথে মিথ্যের মিশেলে এমন একটা কিছু উপস্থাপনে সচেষ্ট যা সত্যও নয় মিথ্যেও নয়। বলা যায় বিভ্রান্তিকর তথ্য। আর যার ফলে স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পড়েও আমরা ঘোষক শব্দটির মানে খোজার চেষ্টা করি। আমাদের সন্তানদের এক একজন একেক রকম ইতিহাস শিখছে। এমনকি তারা আজ বিভ্রান্ত দেশের কে নায়ক আর কেইবা খলনায়ক সেই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে।
যারা ভাল কিছু করেন না তারা যে ক্ষতি সাধনে সিদ্ধহস্ত তা এই গুণীজনদের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, তৎপরবর্তী ঘটনাসমুহ, থেকে শুরু করে সংবিধান পর্যন্ত কোন কিছুই এদের অত্যাচার থেকে রেহাই পায় না। যিনি যেভাবে পারেন তার সুবিধা অনুযায়ী তথ্য উপস্থাপন করেন। মানুষ কার কথাটা বিশ্বাস করবে?
এদেরকে আবার সুশীল বলে ডাকা হয়! সনদপত্রগুলো কারা সরবরাহ করেন তা তারাই জানেন। এরা গাছেরটা খান, তলারটাও কুড়ান।
এমনকি ইদানীং এদের কেউ কেউ বোমা বাজির পক্ষেও ফতোয়া দিতেও শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার তাদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ষোলকলা পূর্ণ করেছেন। অথচ ভয়ের কোন কারণ নেই এদের কেশাগ্রটি পর্যন্ত ছোঁয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
এই ভদ্রলোকদের প্রধান এবং একমাত্র লক্ষবস্তু রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদ। যেন এদেশে রাজনৈতিক সমস্যা ছাড়া কোন সমস্যাই নেই।
অথচ আজকের রাজনৈতিক সমস্যার পেছনে এদের উস্কানিও কম দায়ী নয়। এরা প্রত্যেকেই নেতা নেত্রীদের ক্রমাগত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের অধস্তনদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের মত করে, নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী। একে পরামর্শ নয় বলা যায় নেত্রীর কথাকেই আরও বেশি পোক্ত করার চেষ্টা করছেন। নেত্রী যে কোন ভুল বলতে পারেন এটা তাদেরকে স্বীকার করানোর সাধ্য কারোরই নেই। তিনি তখন স্বয়ং অবতার!
এই বিজ্ঞ জনেরা আমাদের মত সাধারণ মূর্খ মানুষের মতই অন্ধের মত দলকে সমর্থন করে।
আর তাতে তাদের লজ্জাবোধও হয়না এতটুকু। আমরা মনে করি, যে শিক্ষা তাকে সংকীর্ণ মানসিকতার ঊর্ধ্বেই উঠাতে সক্ষম হল না, যে শিক্ষা তাকে শেখাতে পারল না মা-মাটি-মানুষ এর উপরে নেতা নেত্রীর স্থান হতে পারে না। সে শিক্ষা তাকে যতগুলো ডিগ্রিই প্রদান করুক না কেন। অন্তত সত্যিকারের সুশীল করে তুলতে পারিনি। কাজেই নিজেকে যে যতই সুশীল বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করুন না কেন আসলে তিনি কি তা তার কথা, তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মকাণ্ডেই নির্ধারিত হয়।
পাঠক আপনি যখন দেশের সবচেয়ে উন্নত বিদ্যাপীঠের সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলেন এমন একজনের কণ্ঠেও সহস্র অভিযোগে অভিযুক্ত একজনের নাম ধরে বলতে শুনবেন তিনিই এ দেশের একমাত্র কাণ্ডারি। তখন আমাদের ধরে নিতেই হবে, হয় এদেশে ভাল মানুষ নেই নয়ত তিনিও অন্ধ সমর্থক। আজ পর্যন্ত বিএনপির সমর্থক বলে পরিচিত একজন সুশীল ব্যক্তি পাবেন না যিনি আওয়ামীলীগের একটি ভাল কাজের উদাহরণ দিয়েছেন। ঠিক তেমনি আওয়ামী ঘেঁষা সুশীলদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তার মানে কি এ দল দুটি কোন ভাল কাজই করে না!
এই টুকু সত্য বলার সৎসাহস যাদের নেই, সামান্যতম বিবেচনাটুকু যাদের কাছে আশা করা যায় না আমরা তাদের সুশীল সুশীল বলে ধন্য হই!
এরা ইচ্ছা করে পছন্দের দলে যোগ দেন না যাতে তাদের কথা যুক্তিগ্রাহ্য হয়।
অথচ কথাটি বলেন সম্পূর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই।
আজ দেশের বড় দুটি দলের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে তারা কি প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেন নি? তাদের লেখা, তাদের কথা ক্রমান্বয়ে চরম তিক্ত করে তুলেছে দুই নেত্রীর সম্পর্ককেও এটা কি তারা অস্বীকার করতে পারেন?
তারা এটা কেন ভুলে যান যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল তখন সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েও সত্যিকারের সুশীলের অভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে প্রথম চারটি অপশনই রাখা হয়েছিল মাননীয় বিচারপতিদের আস্থায় এনে।
আজ তাই সময় এসেছে এদেশে এখনো যারা আপন বিবেক দ্বারা পরিচালিত হন। যারা সত্যিকার অর্থেই মোহ মুক্ত হয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ক্ষমতা রাখেন তারা যেন নিজেরা একটি প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ান। দেশের স্বার্থে একাট্টা হয়ে কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সঠিক দিক নির্দেশনা তৈরি করে জাতীর সামনে উপস্থাপন করেন।
সেই সাথে তাদের কাছে অনুরোধ কোনমতেই কোন টিভি টক শো বা কোন গোলটেবিল আলোচনায় ঐ সব ধ্বজাধারীদের সাথে অংশগ্রহণ করবেন না। দয়া করে আর তাদের গ্রহণযোগ্য করে তুলবেন না। দয়া করে আমাদেরকে সুশীলের মধ্য থেকে প্রকৃত সুশীল খুঁজে নিতে বলবেন না। বরং আপনারা সর্বতোভাবে এদেরকে বর্জন করুন। নয়ত একদিন আমাদের মত সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে আপনারাও একই দলভুক্ত হয়ে পড়বেন।
যা হবে সত্যিই বড় বেশি দুর্ভাগ্যের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।