ইসলাম-পূর্ব যুগে মানুষ কন্যাসন্তানদের চরম অবহেলা করত। তাদের সমাজ ও সংসারের বোঝা মনে করত। কারও কন্যাসন্তান হলে পাষণ্ড পিতা হয় তাকে জীবন্ত কবর দিত; নইলে অপমানের গ্লানি মাথায় নিয়ে সমাজে ছোট হয়ে বেঁচে থাকত। মেয়ে সন্তানকে অশুভ লক্ষণ মনে করত। জাহেলি যুগের লোকদের সেই পাশবিকতার কথা মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এরশাদ করছেন- 'যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় অসহ্য মনঃকষ্টে। তাকে প্রদত্ত সুসংবাদের কারণে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। তাকে (কন্যাসন্তানকে) কি অপমানের গ্লানি সহ্য করে রেখে দেবে নাকি মাটি চাপা দেবে? তাদের বিচার কতই না নিকৃষ্ট।' (সূরা: নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯)। ইসলাম নারীকে সমাজে ও সংসারে সম্মানিত করেছে। তাকে পিতার সম্পত্তিতে অংশীদার বানিয়েছে। স্বামীর কাছ থেকে মোহরানা পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। পাশাপাশি নারীর খোরপোশ ও সব ধরনের অর্থনৈতিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরুষের ওপর। নারীর সঙ্গে সব সময় ভালো ও উত্তম ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, '...তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর...' (সূরা: নিসা, আয়াত: ১৯)। রাসূল (সা.) কন্যাসন্তানকে লালন-পালন করা জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় এবং বেহেশতে প্রবেশের কারণ বলে ঘোষণা করেছেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে যার তিনটি কন্যা অথবা তিনটি বোন আছে, তাদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি শরিফ)। মেয়েদের মর্যাদা সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) আরও ঘোষণা করেন, যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তান লালন-পালন করবে, আমি এবং সে একত্রে এভাবে পাশাপাশি জান্নাতে প্রবেশ করব। এই বলে তিনি নিজের হাতের দুটি আঙ্গুল একত্র করে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন। (আবু দাউদ শরিফ)। আরেকটি হাদিসে এসেছে, বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যার কন্যা সন্তান রয়েছে, আর সে তাকে জীবন্ত কবর দেয়নি, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেনি এবং ছেলেকে মেয়ের ওপর অগ্রাধিকার দেয়নি, আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আবু দাউদ)। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তানকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করবে, আমি এবং সে কেয়ামতের দিন এভাবে একত্রে থাকব। এই বলে তিনি হাতের আঙ্গুলগুলো মিলালেন। (মুসলিম শরিফ)। রাসূল (সা.) আরও বলেন, যার তিনটি কন্যা অথবা তিনটি বোন আছে, অথবা দুটি কন্যা অথবা দুটি বোন আছে, সে তাদের প্রতি কোমল ব্যবহার করল এবং তাদের (অধিকারের) ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করল তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত রয়েছে। (তিরমিজি শরিফ)। মহান আল্লাহ আমাদের এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, গাজীপুরা, টঙ্গী।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।