সত্য পথের অনুসন্ধানি
জেলা নেতা: কবির আহমেদ। থানা নেতা: জামাল উদ্দিন:
ওয়ার্ড নেতা : আমিনুল ইসলাম।
কর্মী: সুমন, টিটু, শফিকুল,সাখাওয়াত।
ঘটনার সুত্রপাত: বিপক্ষ দল ক্ষমতার হালুয়া রুটি একাই ভোগ করবার চায়। ভোগ করার আইনগত বৈধতা হলো ইলেকশন করা।
সে ইলেকশনের সিডিউল ঘোষণা করা হয়েছে। মাথা ঠিক রাখা তাই এখন দায়। গত ৭ বছর ভুবুক্ষ কবির আহমেদ এর দল। কবির আহমেদ এর কেন্দ্রীয় আমিরও বেজায় চটে আছেন জেলা নেতাদের উপর। মিটিং এ লক্ষ লক্ষ লোক হয় ।
তাদেরকে যখন বলা হয় আগামীতে কঠোর কর্মসুচী আসবে আপনারা পথে নামবেন তো? সবাই সমস্বরে হ্যাঁ বলেন। কিন্তু ৬০ ঘন্টা ৭২ ঘন্টা হরতালেও তেমন সাড়া নেই। তাই এইবার কেন্দ্র থেকে কঠিন ডাক। তোমাদের আর এমনে এমনে পোষা হবে না। পদ রাখতে চাইলে কিছু করুন।
কবির সাহেবের মাথায় হাত। নিজের ব্যবসা পাতি আছে। সদরে ঔষুধের দোকান আছে। ৪ টি সিনএজিও আছে। আন্দোলন করতে সমস্যা নেই।
কিন্তু যদি প্রতিপক্ষ তার সম্পদের উপর হাত দেয়!! যাই হোক এবার রিস্ক নিতেই হবে। ডেকে আনলেন থানা সভাপতি জামাল উদ্দিনকে।
জামাল উদ্দন আসতেই মেজাজটা একটু কর্কশ করে গলাটা একটু বাড়িয়ে কবির সাহেব শুরু করলেন-- আর কতদিন ইনেক্টিভ থাকবেন? আপনাকে থানা সভাপতি করতে আমরা কত কথা শুনতে হয়েছে তাতো জানেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি টিভিতে কি বলেছে শুনেছেন কিছু?
জামাল সাহেব শুকনা মুখে বললেন শুনলাম কবির ভাই। কিন্তু হরতালতো ডাকে নাই।
অবরোধ ডেকেছে। কোথায় করবো? কি অবরোধ করবো বড় রাস্তা না আমাদের গলি সহ? কি কি আওতা মুক্ত থাকবে কিছুইতো জানলাম না? আমার মেয়ের কালকের পরীক্ষা হবে কিনা তাও জানি না।
কবির সাহেব নিজেও সন্দিহান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের এই কিম্ভুত কিমাকার অস্পষ্ট বক্তব্যে। কিন্তু জেলা নেতা হিসাবে কম জানেন ; এটাতো আর থানা নেতাকে বুঝতে দিতে পারা যাবে না। আবারো গলা ছড়িয়ে বললেন -"মনে হয় জীবনে অবরোধ আর শুনেননি? আওয়ামীলীগের অবরোধের সময় কি দুধের বাচ্ছা ছিলেন?
আপনার পাশেতো নদী এবং রেল লাইন দুইটাই আছে ।
দুইটাতেই অবরোধ করুন। জামাল সাহেব নদীর কথা শুনে একটু ভয় পেলেন । তা ছাড়া এখন শীতকাল নদীর জল ব্যাপক ঠান্ডা। কিন্তু জেলা নেতার সামনেতো আর কম জোর দেখানো যাবে না। তাই বললেন-" ঠিক আছে ওস্তাদ এই বার দেখিয়ে দিবো আমার নাম জামাল।
"
জামাল উদ্দিন ব্যাপক উত্তেজনা নিয়ে বাড়ির দিকে চলে আসলেন। আসতে আসতে ফোন দিলেন ওয়ার্ড নেতা আমিনুল ইসলামকে।
রাত তখন ৯ টা পার। আমিনুলের কন্ঠ নিরুত্তাপ এবং ঘুমের ভাব লক্ষ্য করেছেন জামাল উদ্দিন। তাই মেজাজ ছড়িয়ে বললেন- আপনাদের ঘুম আসে কেমনে? ঘাটের ইজারা চাইবার সময়- হাটের হাসিল তোলার ইজারা চাইবার সময়তো আপানদেরকে খুব তৎপর দেখি।
জামাল উদ্দিন আদেশের সুরে বললেন- টিভি টুভি দেখেছেন? আমিনুল আমতা আমতা করলে জামাল উদ্দিন জানিয়ে দিলেন কাল ভোর থেকে অবরোধের ডাক দিয়েছেন মীর্জা সাহেব। এই বার কিছু একটা করে দেখাতে হবে।
জামাল উদ্দিনের অনুকুল্যে আমিনুল আজ খেয়ে পরে বেঁচে আছেন। তার আদেশ পালন করা অতীব জরুরী। বিছানা ছেড়ে উঠে গায়ে শাল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লেন সুমনের বাড়ির দিকে।
সুমন ছেলেটা বেশ ভালো বেশী কথা বলে না কিন্তু বেশ কাজের। সুমনের মাধ্যমে ডেকে আনা হলো বহদ্দার বাড়ির টিটো, ইমাম বাড়ির শফিকুল এবং তারই মামাত ভাই সাখাওয়াতকে। সাখাওয়াত মুলত শফিকুলের সাথে সাথে থাকে বলে পার্টির সাথে অনেকটা জড়িয়ে আছে।
আমিনুল সাহেব ডিটেইলস বললেন এবং এবারের আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝিয়ে বললেন তাদেরকে। টাকা পয়সা খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব যে তার সেটা জানিয়ে রাখলেন।
টিটুই প্রথম আইডিয়াটা দিলেন "ওস্তাদ এখনতো রাত প্রায় দশটা -এক কাজ করি আজ রাতেই ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলি। " সুমন জানালো অবরোধতো কালকে থেকে আজকে রাত্রে কেন? তখন টিটু এক গাল হেসে বললেন- "হ" কালকে দিনের বেলায় তোমাকে রেল লাইন তুলতে কে দিবে? শর্টকাট পদ্ধতি হলো ইমাম বাড়ির পাশে যে লাইনটা গেছে সেখান থেকে কিছু লাইন খুলে ফেলি। " শফিকুল টিটুকে স্মরণ করিয়ে দিলেন রেল লাইন তুলে ফেলা সহজ কর্ম নহে , যন্ত্রপাতি লাগে।
আমিনুল এবং টিটু একটু ভেবেই প্রায় এক সাথেই বলে ফেললেন - জয়নাল মিস্ত্রীর কথা যে কিছু দিন আগেও রেলের কন্ট্রাক্টের কাজ পেয়েছিলো। শফিকুল জানালপ জয়নাল মিস্ত্রীতো আওয়ামীলীগ ঘেষা।
আমাদেরকে হাতিয়ার দিবে না। তখন আমিনুল একটু ভেবে বললেন - আরে ওর ভাইস্তা মামুনতো ছাত্রদল করে। ওর মাধ্যমে চাইলে না দিয়ে পারবে না।
হেমার, লোহা বাঁকা করার রড় সব নিয়ে রেল লাইনের ধারে চলে গেলেন টিটু, সুমন ,শফিকুল এবং সাখাওয়াত। শফিকুল সাখাওয়াতকে চলে যেতে বললেও সাখাওয়াত যেতে রাজি হয়নি।
তার মধ্যে এক ধরনের থ্রিল কাজ করেছিল। সমুন টিটো শফিকুল খুব দ্রুততার সাথে ফিস প্লেট খোলার কাজে ব্যস্ত। সাখাওয়াত মাঝে মাঝে বলতে লাগলো - আমরা খুলে ফেলার পর ট্রেন আসলে কি হবে? ট্রেনের যাত্রীদের কি হবে? কেউ কি মারা যাবে?
সে মনে মনে একটা আইডিয়াও দিলো যেখান থেকে লাইন খোলা হলো সেখান থেকে এক কিলোমিটার দুরে একটা লাল পতাকা গেঁথে দিলে কেমন হয়? তখন ট্রেনও থেমে যাবে যাত্রীদেরও কিছু হবে না।
তার এই আনাড়ি কথা গুলা টিটুর কাছে বেশ বিরক্তির উদ্রেগ করলেও সুমনই জবাব দিলো অনেকটা হাসির চলে। সাখাওয়াতকে সে বললো এত কিছু ভাবলে পার্টি করা চলে না।
এবং তাচ্ছিল্যের সাথে বললো "এক কাজ করো সাখাওয়াত ইমামবাড়ির বড় হুজুর সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে মসজিদে একটা চাকুরী জোগাড় করে ফেলো। "
গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারতো কিন্তু উপরের ছবি এবং মানুষের আহাজারি সাখাওয়াতকে বেশ বিচলিত করে তুললো। সে ভাবতেই পারেনি মাত্র ১ ঘন্টার একটা অপকর্ম কত মানুষকে কষ্ট দিতে পারে।
সাখাওয়াত এক মগ পানি আর বাসার কিছু কমলা নিয়ে চলে গেলো হাজার তিনেক যাত্রীর কয়েকজনকে খাওয়াবে বলে। "সাখাওয়াত" "সাখাওয়াত" ডাক শুনে সে পিছনে ফিরেই দেখে চট্রগ্রাম পলোগ্রাউন্ড স্কুলে তার সাথেই পড়েছিল সহপাঠি সোহাগ এবং তার পরিবার।
প্রতীক্ষায় বসে আছে দুমড়ানো মুছড়ানো তুর্না নিশিতার বগির পাশেই।
(আমাদের গত এক যুগের গল্প অনেকটা সব এই রকমই। এখানে গল্পের খাতিরে বর্তমান প্রেক্ষপট তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। কোন দলকে হেয় করা উদ্দেশ্য নহে। অগোচরে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন -তাহলে ক্ষমা প্রার্থী)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।